Thursday, August 15

‘উন্নয়ন শুরু হবে বৃক্ষরোপণ দিয়ে’

:: রাজীব সরকার, গাজীপুর ::
শত শত সমস্যা থাকলেও বৃক্ষরোপন কর্মসূচির মধ্যদিয়েই এলাকার উন্নয়নের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র এমএ মান্নান। পরিবর্তন ডটকম এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “মহানগরের সুস্থ সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বৃক্ষরোপন দিয়েই গাজীপুরকে আধুনিক মহানগর গড়ার শুভ সূচনা হবে।"
তবে নির্বাচনী ইশতেহারে অঢেল প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারেও আশাবাদি এই মেয়র।
নির্বাচনের আগে ১৮ দলীয় প্রার্থী এমএ মান্নানের ১১ দফা ইশতেহারের ঘোষণা করেন। ইশতেহারে ১১ দফার মধ্যে ছিল,আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন, ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট একটি জেনারেল হাসপাতালসহ আরো অনেক প্রতিশ্রুতি।
সর্বোপরি গাজীপুরকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে সকল নির্বাচিত কাউন্সিলরকে নিয়ে যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিকে জোর দিয়ে আসছিলেন তিনি।
এম এ মান্নান পরিবর্তন ডটকমের গাজীপুর প্রতিনিধির সাথে বুধবার একান্ত এক সাক্ষাতকারে এসব কর্মসূচি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
মান্নান বলেন, “প্রথমত, আমার সকল কার্যক্রমে গাজীপুর মহানগরের সকল নির্বাচিত কাউন্সিলরকে নিয়ে যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিকে গুরুত্ব দিতে চাই।”
গাজীপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাত নিয়ে অনেক কিছু করার আছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, "গাজীপুর মহানগরে ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট একটি জেনারেল হাসপাতাল তৈরি করা হবে। শিল্প কারখানার দূষিত পানি থেকে নদী, নালা, খাল ও বিল দূষণমুক্ত রাখতে কাজ করে যাবো। মশা নিধনে মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করে নগরীর বিভিন্ন ডোবা-নালা ও ভাগাড়সমূহ নিয়মিত পরিস্কার করে মশক নিধন ঔষধ স্প্রে করা হবে। নগরীর জনবহুল স্থান এবং বিভিন্ন বাস স্টপেজসমূহে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত গণশৌচাগার স্থাপন করা হবে।"
"নগরবাসীর সুচিকিৎসার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত নতুন হাসপাতাল স্থাপন এবং বর্তমান হাসপাতালগুলোতে আধুনিক স্বাস্থ্য সরঞ্জাম প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।"
"নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের গরীব ও দুঃস্থ বস্তিবাসী এবং বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের শ্রমজীবি নারী-পুরুষের জন্য দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক স্থাপনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমান ক্লিনিকের ব্যবস্থা করা হবে।"
“নগরবাসীর জন্য মোবাইল ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হবে। অবৈধ দখল থেকে সরকারী জমি ও রাস্তাঘাট উদ্ধার করা হবে। কৃষকদের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করা হবে," যোগ করেন তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণ আগামী ১৮ আগষ্ট রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। এর আগে ১১ আগষ্ট তারা গণভবনে শপথ নেন।
গাজীপুরের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে মান্নান বলেন, "নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস ও মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক কমিউনিটি পুলিশ এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জননিরাপত্তার স্বার্থে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকাসমূহে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হবে।”
গাজীপুরকে ঘিরে তথ্য-প্রযুক্তি নিয়েও মান্নানের পরিকল্পণা রয়েছে।
মান্নান জানান, নতুন প্রজন্মের বিনোদন ও প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সমূহে আইটি ভিলেজ ও ওয়াইফাই জোন স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হবে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত পাঠাগার স্থাপন করা হবে।
মান্নানের দাবি, “নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণে নগরীর বেকার যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্যে পর্যাপ্ত কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব।”
খাদ্যদ্রব্য ভেজাল ও ফরমালিনমুক্ত রাখতে এবং খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
“সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন দপ্তরের দূর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নগরীর বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকার জন্য আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট স্থাপন করা হবে।”
এছাড়াও প্রতিশ্রুতিতে রয়েছে, “মহানগরের উন্নয়নে এবং যানজট নিরসনে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন নতুন রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট, লিংক রোড ও বাইপাস সড়ক নির্মাণ এবং বর্তমান সড়ক সমূহের যথাযথ সংস্কার ও প্রশস্থকরণের উদ্যোগ।”
“নগরীর গুরুত্বর্পূর্ণ স্থান সমূহে বিশেষতঃ গাজীপুর  চৌরাস্তায় সড়ক, জয়দেবপুর রেল ক্রসিং, কোনাবাড়ী ও টঙ্গী স্টেশন রোড-এ পর্যায়ক্রমে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে এবং অন্যান্য জনবহুল স্থানে পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রীজ স্থাপন করা হবে। যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তার জন্য সার্বক্ষণিক কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।”
প্রতিশ্রুতির দীর্ঘ তালিকায় রয়েছেঃ
“জয়দেবপুর টঙ্গী রেল সড়কের পাশাপাশি বাস চলাচল উপযোগী সু-প্রশস্থ রাস্তা নির্মাণ ও একটি মেট্রো রেল চালুর ব্যবস্থা করা হবে।”
“নগরবাসীর নির্বিঘ্নে চলাচলের স্বার্থে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাত ও মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে ভাসমান হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা হকার্স মার্কেট তৈরি করা হবে।”
“নগরীর বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা বিশেষতঃ টঙ্গী ও কোনাবাড়ীসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকরী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। তুরাগ ও চিলাই নদী সহ নগরীর সকল খাল-নালা পুণঃখনণের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।”
“নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে আবাসিক এবং শিল্পাঞ্চল সমূহে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সংখ্যক গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। নগরীর আবাসিক ও শিল্পাঞ্চল সমূহে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য উপযুক্ত স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার পাশাপাশি নগরীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে পুনরায় ডেসার অধীনে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।"
ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ তৈরি, সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এবং মহানগরীর উপযুক্ত স্থানে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।
নগরীর উপযুক্ত ও সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থানে শিশুদের জন্য শিশু-পার্ক, বিনোদনমূলক পার্ক এবং মহিলাদের জন্য লেডিস পার্ক স্থাপন করা হবে।
সুস্থ্য ধারার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চায় শিল্পকলা একাডেমীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সক্রিয় ও গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও মহা-সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনে সড়কের দুই পাশে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বৃক্ষরোপন কার্যক্রম চালু করা হবে।
তুরাগ ও চিলাই নদীর দুই পাড়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহা-সড়কের সৌন্দর্য্য বর্ধনে সড়কবাতি ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফোয়ারা স্থাপন সহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নগরীর বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, কবরস্থান এবং শ্মশানঘাটের উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম উম্মাহর জমায়েত স্থান টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা কেন্দ্রকে সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সু-পেয় পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, নিরাপদ আবাসন ও নির্বিঘ্নযাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ১৯ মার্চ খ্যাত গাজীপুরের সকল স্মৃতি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হকার, রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক-বেবিট্যাক্সি চালক, নির্মাণ শ্রমিক, মটর শ্রমিক, হোটেল কর্মচারীদের পেশাগত সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপনীবিতান নির্মাণ করে নগরবাসী যাতে সহজে ও সুলভ মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারেন সে জন্য নগরীর উপযুক্ত স্থানে পর্যাপ্ত হাট-বাজার স্থাপন ও সংস্কার পূর্বক দ্র্রব্যের মূল্য-তালিকা নিয়মিত মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নগরীর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য উপযুক্ত স্থানে বয়স্ক পুণর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এ ছাড়া তিনি সাংবাদিক ভাইদের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণ, ভাওয়াল রাজবাড়ীসহ গাজীপুরের অন্যান্য প্রতœতত্ত্ব নিদর্শন ও স্থাপনা সমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ক্যাবল টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, জনস্বার্থে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমসমূহ প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুর মহানগরীকে স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে “সিটি গভর্ণমেন্ট ব্যবস্থা” প্রবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
নাগরিক সনদ ব্যবস্থা (সিটিজেন চার্টার) জোরদার করে কর্পোরেশনের সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গাজীপুর মহানগরকে সত্যিকারভাবে জনগণের ‘সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
অধ্যাপক এমএ মান্নান পর্যায়ক্রমে তার নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতিই পূরণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
গত ৬ জুলাই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট সমর্থীত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান আওয়ামীলীগ সমর্থীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটোর ব্যাবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।--পরিবর্তন

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়