Sunday, July 14

আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সৈন্যদের আত্মহত্যা বাড়ছে

ঢাকা: আফগানিস্তানে যুদ্ধরত ব্রিটিশ সৈন্যদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এক সমিক্ষায় দেখা গেছে, গত বছর দেশটিতে তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধে যেকজন ব্রিটিশ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন তার চেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বেশি।

বিবিসি পরিচালিত এক চলমান গবেষণা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া এক রিপোর্টে দেখা গেছে গত বছর আফগানিস্তানে মোট ২৯ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া চাকরিরত অবস্থায় আত্মহত্যা করেছে আরো ২১ জন।

আত্মহত্যা করা কিছু সেনা কর্মকর্তার পরিবার বলেছে, সংশ্লিস্ট সৈন্যরা বাহিনীতে প্রয়োজনীয় যথেস্ট সাপোর্ট পেত না।  

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাপ্ত রিপোর্টে জানায়, গত বছর আফগানিস্তানে ৭ জন সৈন্যের আত্মহত্যার ব্যপারে তারা নিশ্চিত হয়েছে। বাকি ১৪টি মৃত্যুর ঘটনা আত্মহত্যা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

তবে আফগানিস্তানে তালেবান বিরোধী যুদ্ধে ব্রিটিশদের প্রধান সঙ্গী যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে এই আত্মহত্যার সংখ্যা প্রকৃত অর্থে কতো তা জানা যায়নি।

এমনই এক আত্মহত্যাকারী যুদ্ধাহত সাবেক সৈন্য সার্জেন্ট ড্যান কলিন্স। ২০০৯ সালের গ্রীস্মে আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে অপারেশন প্যানথার ক্লো নামে একটি যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সেসময় রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও চোখের সামনে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল বন্ধু লেফটেনেন্ট কর্পোরাল ড্যান এলসন।

এরপর থেকেই আফগানিস্তানে চরম হতাশা ও ভীতিতে দিন গুনতে থাকেন কলিন্স। সেসময় এক ফোন কলে কলিন্স তার মাকে বলেছিলেন, ‘মা, এটা পৃথিবীতে একটা নরক এবং আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই।’

ছয় মাস আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রে কাটিয়ে আহতাবস্থায় দেশে ফিরেও কলিন্সকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে সেই দুঃসহ স্মৃতি।এরমধ্যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে কলিন্সের চিকিৎসা করা হয়। সেসময় তিনি পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) নামে এক জটিল রোগে ভুগছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। এমন ১০ মাস চিকিৎসার পর সেনাবাহিনী জানায়, খুব দ্রুত কলিন্স সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং কাজে ফিরবেন।   

কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হয়নি। বরং পরবর্তী তিন মাসে কলিন্স দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এসময় তিনি তার বান্ধবীর কাছে প্রায়ই তার অতীত যুদ্ধস্মৃতি বর্ণনা করতেন।

অবশেষে ২০১১ সালে বছরের শেষ দিনে পরিপূর্ণ সেনা পোশাক পরে কলিন্স ঘর থেকে বেড়িয়ে যান। পিমব্রোকশায়ারের প্রিসিলি পর্বতে গিয়ে তিনি তার মোবাইলে নিজের শেষ ভিডিও জবানবন্দি ধারণ করেন। এরপর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ২৯ বছর বয়সী কলিন্স।

চিকিৎসকরা বলছেন যে, নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের পিটিএসডি হতে পারে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে বর্তমানে ২ দশমিক ৯ শতাংশ সৈন্য এই রোগে ভুগছেন বলে মনে করা হচ্ছে।  --ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়