Friday, June 14

মাটির তৈরি চুলা

ঝালকাঠি: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তীরে শহরের সিটি পার্ক সংলগ্ন ঘনবসতি এলাকায় ঢুকলেই চোখে পড়ে অদ্ভুত এক অন্য রকম মৃৎশিল্পের দৃশ্য। সেখানে থরে থরে সাজানো রয়েছে মাটির তৈরি চুলা। দেখলে মনে হয় যেন ঝালকাঠির কেউ গ্যাসে অথবা স্টোভে রান্না করে না। কথাটা একদিকে যেমন সত্যি আবার অন্যদিকে ঠিক সত্যিও নয়। ঝালকাঠিতে গ্যাস সংযোগ না থাকলেও এখানকার উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো গ্যাস সিলিন্ডারের সাহায্যে  রান্নার কাজ করে থাকেন। এক সময়ের দ্বিতীয় কলিকাতা খ্যাত ঝালকাঠি শহরের সিটি পার্ক সংলগ্ন চরাঞ্চলসহ সুগন্ধা নদীর তীরবতী শহরের চর এলাকাগুলোতে গেলে দেখা যাবে হারিয়ে যাওয়া সারি সারি মাটির চুলা। যা এন ঝালকাঠির এক অন্যরকম শিল্পও বলা যেতে পারে। কেননা এ চুলাগুলো কেউ শখের বসে তৈরি করেনি কিংবা কোন প্রদর্শনীও চলছে না অথবা আমাদের ঐতিহ্যবাহী চুলাগুলো মাটির চুলার সঙ্গে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্যও না। চুলা গুলো তৈরি করা হয় বিক্রির জন্য এবং বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালো। 
চুলায় চলে সংসার: সিটি পার্ক চর এলাকায় গেলেই চোখে পড়বে এ দোকানের কর্ণধার নাজমাকে। নাজমার ছোট্ট দুটি  শিশু সব সময় তার চারপাশে ঘুর ঘুর করে ঘুরতে থাকে। এ দোকানই নাজমার সংসার, এখানেই নাজমার জীবিকা এবং জীবন ধারণ। নাজমা তার অসুস্থ স্বামী ও সšত্মানদেরকে নিয়ে একচালা একটি টিনের ঘরে থাকে। যেটি একাধারে তার দোকান হিসেবে চুলা বিক্রির কাজও চলে। বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা নতুন চুলাগুলোর পাশে ধিকি ধিকি জ্বলে নাজমার নিজের সংসারের জন্য রান্না করার চুলা। 
যেভাবে চুলা তৈরি করা হয়: ধব ধবে সাদা চুলা গুলো নাজমা তৈরি করেন এঁটেল মাটি দিয়ে। দোকানের পাশেই এঁটেল মাটির একটি ঢিবির মত চোখে পড়ে। এই ঢিবিই হচ্ছে নাজমার চুলা তৈরির একটি প্রধান উপাদান, এঁটেল মাটি। আর এসব চুলা  তৈরির মাটি তিনি সংগ্রহ করেন মাটি বিক্রেতাদের কাছ থেকে। যারা হয়তো নির্মাণাধীন কোন বাড়ি থেকে অথবা নদীর তীর থেকে এ মাটি সংগ্রহ করেন। চুলা তৈরির কাজ নাজমা শিখেছেন তার মায়ের কাছে। শহরে এসে এখানে যখন বাসা বাধলেন তখন বাধ্য হয়েই তাকে মাটির চুলা বানাতে হল। কারণ এসব বাসায় গ্যাসের কোন ব্যবস্থা নেই। সেই বিদ্যা দিয়েই জীবিকার ব্যবস্থা করে ফেলেন নাজমা। এখন নাজমার অসুস্থ স্বামী ও সšত্মান নিয়ে পুরো সংসার চলে এ চুলা বিক্রি করে। 
দর দাম: দেখতে সুন্দর এ চুলাগুলোর রয়েছে কতগুলো ক্যাটাগরি। যেমন. এক মুখওয়ালা ও দু’মুখওয়ালা চুলা। এক মুখওয়ালা চুলার দাম পড়ে সাধারণত মান-ভেদে ১২০/১৩০ টাকা। আর দু’মুখওয়ালা চুলার দাম পড়ে ২০০ টাকা বা এর কিছু কম বেশি। মূলত বিভিন্ন মৌসুমে পিঠা বিক্রেতারাই নাজমার প্রধান ক্রেতা। তাছাড়াও নিুমধ্যবিত্ত ও নিুবিত্ত পরিবার গুলো রান্নার কাজ করার জন্য তারাও নাজমার কাছ থেকে এ চুলা কিনে থাকে। আবার অনেক উচ্চ বিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো গ্রামীণ খাবারের আমেজ পেতে কিনে থাকেন এসব চুলা। এমন শৌখিন ক্রেতাও নেহায়েত কম নয়। অনেকে আবার বিশেষ কোন পিঠা বা খাবার বানানোর জন্যও এ চুলা কিনে থাকেন।
শেষ কথা: মাটির চুলার এই প্রদর্শনী হয়তো দেখতে সুন্দর কিন্তু এটি দেশ ও ঝালকাঠিবাসির জন্য সুখবর। দেশের গ্যাস সম্পদ সংকট উত্তরণের এটি একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মাটির চুলার প্রধান জ্বালানি হচ্ছে কাঠ। অর্থাৎ মাটির চুলার প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়া মানে গাছের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়া। তাই জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি করতে হলে বাড়াতে হবে গ্যাস সরবরাহ। বাড়াতে হবে গ্যাস ব্যবহারের সচেতনতা। এছাড়াও নাজমা প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য স্বল্প সংখ্যক চুলা বানিয়ে রাখে বিক্রির জন্য। বিক্রি হলে নতুন করে আবারো চুলা বানানোর কাজ শুরু করে। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে বতর্মানে চুলা বানিয়ে রাখতে কষ্ট হয়। যাতে মাটির চুলার যে শিল্প নাজমা শুরু করেছেন তা একটি শৌখিন শিল্পেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর নাজমারা যাতে খুঁজে পান অন্য কোন সাধারণ পেশা। যেটায় তার কষ্টের সংসার হবে সুখের, আনন্দের ও অভাবমুক্ত। যাতে নাজমার চুলা চলার সাথে রান্নার চুলা জ্বলার হুবহু সম্পর্ক না থাকে।(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়