Friday, February 8

:: আকাশ থেকে সিলেটের মাটিতে জাম্প দিলেন দেশের প্রথম নারী প্যারাট্রুপার ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ::

দেশের প্রথম নারী প্যারাট্রুপার হিসেবে নাম লেখালেন ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর এ চৌকস অফিসার গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক হাজার মিটার উচ্চতা থেকে জাম্প দিয়ে ভূপৃষ্টে অবতরণ করেন। সিলেট শহরতলীর পানিছড়া ড্রপজোনে বিশেষ হেলিকপ্টার থেকে প্যারাসুট জাম্প করেন সেনাবাহিনীর এই নারী অফিসার। সফলভাবে অবতরণের পর এক প্রতিক্রিয়ায় সিলেটের ডাককে তিনি বলেন, এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হওয়ার পর মনে হচ্ছে ‘আমরাও করতে পারি’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারী থেকে সিলেটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বেসিক প্যারা কোর্স শুরু হয়। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী কোর্সটি শেষ হবে। কোর্সে সেনাবাহিনীর ৫ কর্মকর্তা ও নৌ-বাহিনীর ১৫ জন কমান্ডো প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এই ২০ প্রশিক্ষণার্থীর একজন হলেন ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রথম নারী অফিসার হিসেবে দুঃসাহসিক এই কোর্সটি তিনি সম্পন্ন করছেন। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় জালালাবাদ সেনানিবাসের অদূরে পানিছড়া হাওরের ড্রপজোনে গিয়ে দেখা যায় প্যারাকোর্সে অংশ গ্রহণকারী কর্মকর্তারা, সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ ও সেনাসদস্যরা প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন। এরই মধ্যে ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টার। ক’জন প্যারাট্রুপার হেলিকপ্টারে উঠেন। হেলিকপ্টারটি পাখা ঘুরিয়ে উড়াল দেয়। এরপর এদিক ওদিক ছোটাছুটি করল বিশেষ হেলিকপ্টার। হঠ্যাৎ করেই দেখা যায়, বিমান থেকে ভূপৃষ্টের উদ্দেশ্যে জাম্প করলেন ৫ প্রশিক্ষণার্থী। দেখতে ছাতার মতো সাদা রং এর প্যারা জাম্প করে তারা যখন ভূপৃষ্টের চেয়ে হাজার মিটার ওপরে তখন কৌতুহলী শত শত এলাকাবাসীসহ কর্মকর্তাদের মধ্যে যেন উদ্বেগের শেষ হচ্ছিল না। ভূপৃষ্টে অবতরণকালে সংশ্লিষ্টরা মাইকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে দুপুর ১২টায় অবতরণ করলেন ৫ সেনা কর্মকর্তা। তাদের একজন ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ক্যাপ্টেন জান্নাতের কাছে ছুটে যান কর্মকর্তারা। তখনো হাপাচ্ছিলেন এই নারী অফিসার। একমাত্র নারী অফিসারের এমন সফলতায় উপস্থিত সেনা কর্মকর্তা-সেনা-সদস্যদের মধ্যে দেখা দেয় আনন্দের বন্যা। ক্যাপ্টেন জান্নাতের কাছে ছুটে যান উপস্থিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা। সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এই প্যারাকোর্সটি নারী অফিসারদের জন্যে উন্মুক্ত থাকলেও স্বপ্রণোদিত হয়ে ইতোপূর্বে কোনো নারী অফিসারর এগিয়ে আসেননি। ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস স্বপ্রণোদিত হয়েই দুঃসাহসিক এই কোর্স করতে আসেন। তার অদম্য সাহসিকতায় চমকে যান সিনিয়র কর্মকর্তারাও। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১৯৯০ দশকে এই কোর্সটি শুরু হয়। আকাশে চলন্ত বিমান থেকে জাম্প দিয়ে শত্রুদের প্রতিরোধ করার লক্ষ্য নিয়েই এই বিশেষ কোর্সটি সম্পন্ন করেন কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যরা। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫শ অফিসারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ৫ হাজার সদস্য এ কোর্সটি সম্পন্ন করলেও নারী হিসেবে ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌসই হচ্ছেন প্রথম। সেনাবাহিনীর সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে ১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারী জন্ম গ্রহণ করেন সেনা বাহিনীর চৌকস অফিসার ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৯তম বি.এম.এ লং কোর্সে তিনি কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীতে কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে বর্তমানে নিয়োজিত ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে অবস্থিত স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকসিস-এ বিশেষ যুদ্ধ শাখার অধীনে পরিচালিত বেসিক প্যারা কোর্সে অংশ গ্রহণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম নারী প্যারাট্রুপার হিসেবে সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে নিজের নাম লেখান। পানিছড়া ড্রপজোনে দুঃসাহসিক এ প্রশিক্ষণ কোর্স চলাকালে জালালাবাদ সেনানিবাসের গবেষণা ও উন্নয়ন সেল’র জি.এস.ও-১ লেঃ কর্ণেল আব্দুল গাফফার বীর সহ সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ইতিহাসে স্থান অর্জনকারী ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস সিলেটের ডাককে বলেন, চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলাম। দেখিয়ে দিয়েছি আমরাও করতে পারি। সেনাবাহিনীতে নারীরা যেন আমার মতো এগিয়ে আসেন। সেনাবাহিনীর সুনাম বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্তব্য পরায়ন হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাবো। সেনা বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে গর্বিত। বিশেষ যুদ্ধ শাখার প্রধান প্রশিক্ষণ লে. কর্ণেল এ.কে.এম সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রশিক্ষণটি দুঃসাহসিক। বিমান থেকে জাম্প করে শত্রুদের প্রতিরোধ করার জন্যে এই কোর্স। ৯০ দশক থেকে এ পর্যন্ত অফিসারসহ ৫ হাজার সদস্য এই কোর্সটি সম্পন্ন করলেও নারী হিসেবে ক্যাপ্টেন জান্নাতই প্রথম। তার এই সাফল্য ভবিষ্যতে নারী অফিসারদের প্রেরণা দেবে। প্যারা কোর্সটি কষ্টকর ও দুঃসাহসিক। জাম্প করার মূহুর্তে প্যারাসুট না খুললে বড় ধরনের দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রাণহানিও হতে পারে। (দৈনিক সিলেটের ডাক)


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়