Wednesday, June 27

কানাইঘাটে ত্রাণের অপেক্ষায় পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ

নিজাম উদ্দিন/কাওছার আহমদ:

গত ৩দিনের টানা বর্ষণ ও আকর্ষিক ভয়াবহ পাহাড়ী ঢলে বন্যা কবলিত কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কানাইঘাট পৌর এলাকার কিছু কিছু অংশ ও কানাইঘঅট বাজার থেকে বন্যার পানি কিছুটা নেমে গেছে। গাজী বোরহান উদ্দিন ও সিলেট দরবস্ত-কানাইঘাট সড়কের অনেক অংশ তলিয়ে যাওয়ায় সব ধরনের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানির তীব্র স্রোতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৫০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা মারাত্মক তি সাধিত হয়েছে। রাস্তার অনেক অংশ ভেঙ্গে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলার সাথে অনেক ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। এদিকে সরকারীভাবে অপ্রতুল্য ত্রাণ সামগ্রী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত না পৌছায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করছেন পানি বন্ধি লাধিক বানবাসী মানুষ। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে শত শত বন্যা দুর্গত ুধার্থ মানুষ। ুধার্ত শিশুর আর্ত চিৎকার ও বস্ত্রহীন মায়ের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে বন্যা দুর্গত এলাকার বাতাস। একমুঠো ত্রাণের অপোয় পথ চেয়ে বসে আছে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন। উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপ নাম মাত্র ত্রাণ তৎপরতা শুরু করলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের অভাবে হাহাকার করছে বন্যা কবলিত পরিবারগুলো। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গত ৩দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা, লোভা, সুরই, নুন ও ডোনা নদীর দু’তীর ডুবে গিয়ে কানাইঘাট পৌরসভা, লীপ্রসাদ পুর্ব ইউনিয়ন, লীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন, সাতবাক, কানাইঘাট সদর, বড় চতুল, ৩নং দিঘীরপাড় পূর্ব ৭নং দণি বানীগ্রাম, ৮নং ঝিংগাবাড়ী, ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে ২শতাধিক গ্রাম। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাধিক লোক। বানে আক্রান্ত অনেকে ঘরের টিনের চালায়, গাছের ডালে ওঠে নিজের জীবন রা করলেও ঘরের মূল্যবাণ জিনিসপত্র ও গবাদি পশু রা করতে পারে নি। সমগ্র উপজেলার প্রায় হাজার খানেক কাঁচাঘর বানের পানিতে ভেঙ্গে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বাস করছে এসব গৃহহীন পরিবার। কানাইঘাট পৌর শহরের বেশ কয়েকটি গ্রাম এখনও পানির নিচে রয়েছে। এবারের বন্যায় অতিতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ভয়াবহ তি সাধিত হয়েছে। কানাইঘাট পৌরসভার মেয়র লুৎফুর রহমান জানান পৌরসভার রাস্তাঘাট, বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও পৌরবাসীর কোটি কোটি টাকার তি সাধিত হয়েছে। বন্যা আক্রান্ত গ্রামগুলির মধ্যে পৌরসভার নন্দিরাই, নওয়াখলা, ধর্মপুরের একাংশ, গবিন্দপুর, মহেষপুর, ডালাইচর, বিষ্ণুপুর, শিবনগর, নিজ চাউরা দণি ফাটাহিজল, শ্র্রীপুর, ১নং লী প্রসাদ ইউনিয়নের সতিপুর, বাজেখেল, মেছা, কান্দলা, উজান ফৌদ, নক্তিপাড়া, ভাটিবারাপৈত, সাউদগ্রাম, ভালুকমারা, নয়াখান, কাড়াবাল্লা, মন্তাজগঞ্জ ২নং লীপ্রসাদ ইউপি’র নিহালপুর, লীপ্রসাদ দণি, লোভারমুখ, কুওরঘড়ি, গুরকপুর, লামার গ্রাম, নয়াগ্রাম, নিহালপুর, হালাবাদী, নয়াগ্রাম, বাউরভাগ, আসামপাড়া, নয়াখেল, রাজার মাটি, ৪নং সাঁতবাক ইউপি’র চরিপাড়া, নয়াগ্রাম, পাত্রমাটি, চাপনগর, ভাড়ারি মাটি, লালারচক, জুলাই, সাঁতপাড়ি, ভবানীগঞ্জ, জয়পুর, ৬নং সদর ইউনিয়নের গোসাইনপুর, সোনাপুর, গবিন্দপুর, সুতারগ্রাম, নিজ গবিন্দপুর, জৈন্তিপুর, ছোটদেশ, ভাটিদিহি, উমাগড়, কচুপাড়া, বড়কান্দি, নিজ চাউরা উত্তর, ৫নং বড়চতুল ইউনিয়নের সোনাতুলা, মালীগ্রাম, কুড়ারপাড়, রায়পুর, হারাতৈল, দলইকান্দি, বেতু, সরুফৌদ, নয়াগ্রাম, কাজীর গ্রাম, আগফৌদ, পূর্বের ভাড়াই কাজির পাতন, বাঘার আগড়, রাউত গ্রাম, দুর্গাপুর, ৭নং দণি বানীগ্রাম ইউনিয়নের সরদারী পাড়া, নয়গ্রাম, ছত্রপুর, দণি বড়দেশ, নিজ বাউরভাগ, উজানীপাড়া, সাউদগ্রাম, বানীগ্রাম, মানিকগঞ্জ, বড়দেশ দণি, বড়দেশ উত্তর, ৮নং ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের আমরপুর, গর্দনাকান্দি, ভাটরকোন, মিরার ছটি, বাধাইর পার, গোয়ালজুর, নারাইনপুর, চৈলতাবাড়ী, দর্জিমাটি, ফাগু, বাঁশবাড়ী, এবং ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের খালপার, ফালজুর, নিজ রাজাগঞ্জ, খোয়াজপুর, তালবাড়ী, লোহাজুরী, লুন্টির পাহাড়, আতলার পাহাড়, কুছি গাং গ্রাম মারাত্মকভাবে তিগ্রস্ত হয়েছে। কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, সমগ্র উপজেলা বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এই মুহুর্তে পানিবন্দী মানুষের মুখে ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্য সিরাজুল ইসলাম, সাঁতবাক ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার ফয়জুল ইসলাম, ২নং ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, ১নং ইউপি চেয়ারম্যান ডাঃ ফয়াজ আহমদ, আব্দুল মুমিন চৌধুরী বলেন পাহাড়ী ঢলে ও বানের পানিতে সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ইউনিয়নগুলো। এসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাদের নিজ নিজ এলাকায় দ্রুত বানবাসী মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণের দাবী জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম.সোহরাব হোসেন জানান উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৬টন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় এম.পি হাফিজ আহমদ মজুমদারকে বন্যার সার্বিক বিষয় অবহিত করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে আরো বরাদ্ধ আসবে। স্থানীয় সাংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণ ও বানবাসীদের সর্বাত্মক সহযোগীতার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসারও আহব্বান জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে গতকাল কানাইঘাট-জামায়াত নেতা অধ্য মাওঃ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, কানাইঘাট পৌর শহরে ডালাইচর রামিজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ, পাবলিক স্কুল, কানাইঘাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়