Friday, December 20

সূরা আত তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না লেখার কারণ কী?

 সূরা আত তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না লেখার কারণ কী?

ছবি: অন্তর্জাল

সূরা আত তওবা পবিত্র কোরআনুল কারিমের ৯ম সূরা। অবতীর্ণ হয়েছে মদিনায়। এর আয়াত সংখ্যা ১২৯, রুকু সংখ্যা ১৬। তওবা অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা বা ক্ষমা করা। সূরাটির নাম ‘তওবা’ হওয়ার কারণ এতে মুসলিম উম্মাহর তওবা কবুল হওয়ার বর্ণনা এসেছে। এ সূরার আরেকটি নাম ‘বারাআত’ কারণ এতে কাফের বা অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা এসেছে।

সূরা আত তওবার শুরুতে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা কাফেরদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা সেসব লোকের প্রতি মুশরিকদের মধ্য থেকে যাদের সঙ্গে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। সুতরাং (হে কাফেররা) তোমরা জমিনে চলাফেরা করো ৪ মাস, আর জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না, আর নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে অপদস্থ করবেন’। (সূরা: আত তওবা, আয়াত: ১-২)

সূরা তওবার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সূরা তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা হয় না। সূরা আত তওবা ছাড়া কোরআনের অন্যান্য সব সূরার শুরুতেই ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা হয়।

সূরা আত তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না লেখার কারণ কী?

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আলিকে (রা.) জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন সূরা আত তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয় না? তিনি আমাকে বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ’র মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা আছে আর সূরা তওবায় চুক্তিভঙ্গকারী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণেই এ সূরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়নি।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে, একবার তিনি ওসমানকে (রা.) জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কেন সূরা আনফাল এবং সূরা তওবা একসঙ্গে রাখা হলো এবং সূরা তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা হলো না? ওসমান (রা.) উত্তর দিলেন যে, সূরা আনফাল ছিল মদিনায় অবতীর্ণ হওয়া প্রথম দিকের সূরাগুলোর একটি আর সূরা আত তওবা ছিল কোরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরাগুলোর একটি। এই ২টি সূরার বিষয়বস্তু প্রায় একই রকম। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে স্পষ্ট করে যাননি যে এটি আলাদা সূরা কি না। তাই আমরা এ ২টি সূরা একসঙ্গে রেখেছি এবং মাঝে ‘বিসমিল্লাহ’ লিখিনি।

আরেকটি বর্ণনায় এসেছ, আরবদের রীতি ছিল তাদের ও কোনো জাতির মধ্যে যদি চুক্তি থাকতো এবং তারা সেই চুক্তি বাতিল করতে চাইতো, তাহলে তাদের কাছে চুক্তি বাতিল করার কথা জানিয়ে একটি পত্র পাঠাতো এবং সেই পত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ লিখতো না। সূরা তওবার শুরুতে যেহেতু মুশরিকদের সঙ্গে মুসলমানদের কৃত চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাই এ সূরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়নি।

সূরা আত তওবা পড়ার সময় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়া হবে কি না এ ব্যাপারে ইসলামি আইনবিশারদগণ বলেন, কেউ যদি সূরা আনফাল তেলাওয়াত করে সূরা আত তওবা তেলাওয়াত করা শুরু করে, সে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া ছাড়াই সূরা তওবা তেলাওয়াত শুরু করবে। কিন্তু কেউ যদি সূরা আত তওবা থেকে কোরআন তেলাওয়াত শুরু করে, সে সাধারণ নিয়মে ‘আউজুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে তেলাওয়াত শুরু করবে যেমন কোরআনের যেকোনো জায়গা থেকে তেলাওয়াত শুরু করার সময় করা হয়।

অনেকে মনে করে সূরা আত তওবা তেলাওয়াত করার সময় কোনো অবস্থাতেই ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা যায় না। এ ধারণা সঠিক নয়।

ইয়া আল্লাহ! সব মুসলিম উম্মাহকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়