মুন্সিগঞ্জের উৎপাদিত সবজি গত কয়েক বছরের মতো এবারও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে পাইকাররা এসে জেলার বিভিন্ন আড়ত থেকে বিষমুক্ত সবজি কিনে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছেন।
এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জে উৎপাদিত হাজারো মণ সবজি প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, বরিশালসহ অন্যান্য জেলায়।
সদররের আড়তদাররা জানান, এবার মুন্সিগঞ্জের সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চাষ হয়েছে করলা, উস্তা, চিচিঙ্গা, লাউ, চালকুমড়া, ধুন্দলসহ বিভিন্ন সবজি। ঢাকা থেকে পাইকরারা এসে এবার এসব সবজি কিনে নিয়ে বিদেশে পাঠাচ্ছেন।
এবার মুন্সিগঞ্জের বাজারে সবজির সরবারহ বেড়েছে। এতে দামও কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা। মুন্সিগঞ্জের আড়তগুলোতে এখন প্রতি কেজি করলা ২০ টাকা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অসময়ে সিলেটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানিতে মুন্সিগঞ্জের কৃষিজমিগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে কৃষকের অনেক সবজি তলিয়ে যাচ্ছে। তাই উৎকণ্ঠায় রয়েছেন কৃষকরা। একদিকে বাজারে প্রচুর সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে, অন্যদিকে বন্যার পানিতে কৃষিজমি প্লাবিত হতে শুরু করায় তারা অনেকে নিচু জমির অপরিপক্ব সবজিও কেটে বিক্রির জন্যও নিয়ে এসেছেন বাজারে।
মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগিনী, রামপাল, মহাখালী, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং-টঙ্গিবাড়ী, আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন ও তার আশপাশের জমিগুলোতে প্রতি বছর এ মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে চাষ হয় করলা, কহি, ধুন্দল, লাউ, চালকুমড়া, ঝিঙা, বেগুনসহ অন্যান্য সবজি। কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে এখানকার বেশ কিছু কৃষক সমন্বিত বালাইনাশকের মাধ্যমে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ না করে ও ফাঁদ পেতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। যে কারণে উৎপাদন বেড়েছে।
সরেজমিনে মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগিনী বাজার ও বটতলা বাজরের সবজির আড়তগুলোয় দেখা যায়, আড়তগুলো সবজিতে ভরে আছে। পাইকারদের হাঁকডাকে মুখর দুটি বাজার। শত শত মণ সবজি রয়েছে আড়তগুলোয়। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখান থেকে সবজি কিনছেন।
বজ্রযোগীনি বাজারের আক্তার ট্রেড্রার্সের মালিক আক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার আড়তে সাপ্লাইয়ের গাড়ি আসে। এখান থেকে প্যাকিং করে সরাসরি বিমানবন্দরে চলে যায়। ব্যবসায়ীরা এ সবজি দুবাই পাঠান। তিনি আরও বলেন, শুধু আমার আড়তেই এই মৌসুমে প্রতিদিন এক হাজার মণের ওপরে সবজি বিক্রি হয়েছে। তবে এ বছর সবজির দাম কিছুটা কম।
অপর ব্যবসায়ী ইউসুফ সেখ বলেন, আমরা কৃষকের বিষমুক্ত সবজি আনি। আমাদের বাজারের সবজি দুবাই, কাতার, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে যায়। আবার দেশের মধ্যে ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুর, ঢাকা, গাজীপুরের বিভিন্ন আড়তে যায়।
বজ্রযোগিনী এলাকার কৃষক সুমন বলেন, ৭ গন্ডা (৪৯) শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করছি। ৪০ হাজার টাকা খরচ হইছে। এ পর্যন্ত ১৭/১৮ হাজার টাকা বিক্রি করছি। কিন্তু সিলেটের বন্যায় জমি তলিয়ে যাচ্ছে। এখন তো সবই লস হইব। যদি বন্যা না হইত, তাহলে এবার আরও লাভবান হইতাম।
কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সার, বীজ, কীটনাশকের দাম বাজারে বেশি। তবে সবজির দাম নেই। তার ওপর সিলেটের বন্যায় আমাদের সবজি সব তলিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন একেবারে নিরুপায় হয়ে পড়েছি। সহযোগিতা পেলে আরও সবজি উৎপাদন করতে পারব।
মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচারক মো. খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধানে একটি প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকার কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত শতভাগ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদিত হয়নি। তবে আমাদের পক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত সবজি দেশের অন্যান্য এলাকার সবজির তুলনায় গুণগতমান ভালো। আমাদের তত্ত্বাবধানে উৎপাদিত সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়।
কৃষকের জমি আগাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, মানুষ খাল-বিল ভরাট করে পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা বন্ধ করে যত্রতত্র হাউজিং প্লট তৈরি করছে। ফলে পানি নামতে পারছে না। এ কারণে অসময়ে কৃষকের জমি তলিয়ে যাচ্ছে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়