Thursday, April 16

তারাবির নামাজ ঘরে বসে পড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
ঘরে বসে রমজানের তারাবির নামাজ পড়ার আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সৌদি আরবেও মসজিদে জামায়াতের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। সেখানে রমজানের তারাবির নামাজ মসজিদে না পড়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের এখানেও সামনে রমজান মাসে ঘরে বসে তরাবি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগের নয়টি জেলার মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এই অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী আজ ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স অনু‌ষ্ঠিত হ‌চ্ছে।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে সেখানে পর্যন্ত মসজিদে নামাজ বা জামায়েত বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি তারাবির নামাজও সেখানে হবে না। সবাই ঘরে বসে পড়বে। খুব সীমিত আকারে তারা পড়ছে। তারা কিন্তু নিষেধ করে দিয়েছে। ঠিক এভাবে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, এমনকি ভ্যাটিকান সিটি পর্যন্ত সবাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেছে। নিজেদের ও অন্যদের সুরক্ষিত করা। কাজেই এ বিষয়গুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে।
ইতোমধ্যে মসজিদে না গিয়ে নিজের ঘরে বসে নামাজ পড়ার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত, সেটা আপনি যেকোন জায়গায় করতে পারেন। এটাতো আল্লাহর কাছে সরাসরি আপনি করবেন। ঘরে ইবাদত করার সুযোগ আছে। সামনে রোযা, রমজান মাসে আমাদের কোন পণ্য সরবরাহ জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। সেই সাথে সাথে এখানে তারাবির নামাজ, যেহেতু সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে হচ্ছে না। আমাদের এখানেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে কতগুলো নির্দেশনা দিয়েছেন, তাই ঘরে বসে তারাবি পড়েন। নিজের মন মতো করে পড়েন। আল্লাহকে ডাকতে হবে, ঘরে বসে ইবাদত করতে হবে। আপনি আপনার মতো করে যতবেশি করতে পারেন। আল্লাহ সেটাই কবুল করবেন। কাজেই সেইভাবে আপনারা করবেন। অযথা মসজিদে গিয়ে নিজে সংক্রমিত হয়ে অন্যকে সংক্রমিত করবেন না। এ বিষয়টা সকলেই মেনে চলবেন। এই অঞ্চলে (ঢাকা) এই বিষয়টা দেখা গেছে, তাই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরে থেকে মানুষ আসছেন বলেই তার দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছেন। যাদের মধ্যে এতটুকু সন্দেহ আছে, অথবা কেউ কোথাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত এমন পরিবার থেকে অন্য কোথাও কেউ যাবেন না। গেলে পরে আপনি অন্যকে সংক্রমিত করতে পারেন। সেজন্য সবাইকে যাতায়াতটা বন্ধ করতে হবে। আমরা দেখেছি বিভিন্ন জায়গায় সংক্রমিত ছিল না। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, শিবচর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর থেকে কেউ কোন জায়গায় চলে গেল কিংবা ইতালি থেকে কোন জায়গায় চলে গেল সেখান থেকেই এই প্রাদুর্ভাব দেখা দিল।
তিনি বলেন, ডাক্তার, নার্স, সকলের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী আছে। রোগীর জন্য বেডের ব্যবস্থা যথাযথভাবে করা হচ্ছে। যেহেতু আমাদের রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১২৩১, যার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫০ জন। আর ৫০ জনের বেশি রোগী সুস্থ হয়েছে। আমরা তাদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অবস্থা আরও ভয়াবহ। বিশ্বব্যাপী যে হিসাব তাতে দেখা যাচ্ছে ১৫ এপ্রিল সারাবিশ্বে ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৩ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে মারা গেছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২১ জন। কাজেই বিশ্বের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেক্ষেত্রে আমরা আগে থেকে ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই আমরা এখনও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। কিন্তু একটা লোক মারা যাক সেটা আমরা চায় না। সবাই সুস্থ থাক সেটাই আমরা চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস যাতে না ছড়াতে পারে সেই ব্যবস্থা আপনাদের করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে অমানুষে পরিণত হয়। যখন আমরা দেখি মায়ের একটু জ্বর হলে ছেলে, ছেলের বৌ, এমনকি তার স্বামী মিলে তাকে নিয়ে জঙ্গলে ফেলে দিচ্ছে। এরচেয়ে অমানবিক আর হতে পারে না। এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে। এমন অমানবিক হওয়ার দরকার নাই। কারো যদি সন্দেহ হয় তাহলে তার চিকিৎসা করান, নিজেরাও সুরক্ষিত থাকেন। এই প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা মেনে চলুন। একজন ডাক্তার অসুস্থ হলে তাকে এলাকা থেকে বের করে দিতে হবে। এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটবে বাংলাদেশে? বাংলাদেশের মানুষতো এরকম অমানবিক হওয়ার কথা না। এ বিষয়গুলো সকলের দৃষ্টিতে আমরা আনতে চায়। হায়াত মউত আল্লাহর হাতে, যে কোন দিন যে কেউ মরতে পারে। আজকে আমি কথা বলছি। এখানে বসেও মরতে পারি, যে কেউ মরতে পারে। এটা কেউ বলতে পারে না, যে আমি বেঁচে থাকবো। এটা একমাত্র আল্লাহ বলতে পারবে।
তিনি বলেন, এই যে ভাইরাসটা দেখা দিল। এভাবে যে একটা ভাইরাস এসে সারাবিশ্বকে ঘরবন্দী করে ফেলবে এটা কেউ কি ভেবেছে? সারাবিশ্বেতে অনেক শক্তিশালী দেশ, তাদের শক্তির দাপটে বিশ্ব আজকে অস্থির। আবার শক্তিশালী এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের যুদ্ধ, লড়াই, সংঘাত আমরা দেখেছি। অস্ত্রের মহড়া আমরা দেখেছি। সেই অর্থ, সম্পদ কোন কাজেই আসেনি, কোন কাজে লাগবে না। সেটাই প্রমাণ করে দিল এই করোনাভাইরাস। কাজেই সবাইক সুরক্ষিত ও সাবধানে থাকতে হবে। তার মানে এই না যে অমানবিক আচারণ করতে হবে। দয়া করে সেটা আপনারা করবেন না।

সূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়