ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর উদযাপন করছে গণচীন। এ উপলক্ষে রাজধানী বেইজিংয়ে বিশাল আয়োজন চলছে। গত সাত দশক ধরে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে অসাধারণ অগ্রগতি ঘটেছে চীনে। তবে দেশটিতে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এছাড়া কঠোরভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যও বিশ্বে চীনকে ঘিরে কম সমালোচনা হয় না।
বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করছে চীন। দেশটির
টেলিভিশনে সরাসরি এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী অনলাইনেও
হাজার হাজার মানুষ এই অনুষ্ঠান দেখছেন।
![](https://www.daily-bangladesh.com/media/imgAll/inner/1382967678.jpg)
দেশটির কমিউনিস্ট বাহিনী রক্তাক্ত এক গৃহযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর ১৯৪৯
সালের ১ অক্টোবর মাও দেজং বা চেয়ারম্যান মাও গণচীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা
দিয়েছিলেন।
তারপর থেকে অসাধারণ গতিতে আধুনিক চীনের উন্নয়ন ঘটে; কিন্তু আধুনিক
রাষ্ট্র হলেও চীন বিশ্বের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রণমূলক রাষ্ট্রও বলে
মন্তব্য বিবিসির।
![](https://www.daily-bangladesh.com/media/imgAll/inner/156489685.jpg)
গণচীনের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মঙ্গলবার রাজধানী বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থলে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, “এ
পর্যন্ত কোনো শক্তিই চীনা জনতা ও জাতির অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি।”
বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থল তিয়ানআনমেন স্কয়ারে ১৫ হাজার সৈন্য কুচকাওয়াজে অংশ
নিচ্ছে ও চীনের সর্বাধুনিক সামরিক প্রযুক্তির প্রদর্শনী করা হচ্ছে।
![](https://www.daily-bangladesh.com/media/imgAll/inner/124591238.jpg)
বিবিসি'র বেইজিং প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যে জায়গায় দাঁড়িয়ে মাও গণচীন
প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঠিক সে জায়গায় দাঁড়িয়ে মাওয়ের মতো স্যুট পরে
শি জিনপিং বক্তব্য রাখেন। দেশটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই মাও
স্যুট পরে ছিলেন।
বক্তব্যে দেশটির বিপ্লবী প্রতিষ্ঠাতা পিতা মাওয়ের স্মৃতির ঝাঁপি মেলে
তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান শি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি ঐক্য, চলমান সংগ্রাম ও
চীনের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন।
![](https://www.daily-bangladesh.com/media/imgAll/inner/417212700.jpg)
এরপর একটি গাড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি সামরিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময়
মাঝে মাঝে হাত নাড়েন তিনি আর সৈন্যরা জোরালো শব্দে আনুগত্য প্রকাশ করে জবাব
দেয়।
৭০ বছর আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন কুয়োমিনটাং (কেএমটি) বা
জাতীয় পার্টিকে পরাজিত করার পর মাও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা
দিয়েছিলেন।
রাজতন্ত্রের পতনের পর এই পক্ষ দুটি ১৯২০ সাল থেকে রক্তক্ষয়ী এক গৃহযুদ্ধে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছিল।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানগুলোতে চীন ‘উঠে
দাঁড়িয়েছে, ধনী হয়েছে এবং আগের দশকগুলো থেকে শক্তিশালী হয়েছে’ এই বিষয়গুলো
তুলে ধরা হবে।
৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের
অন্যতম ঝাং গে বলেন, “প্রধান বিষয় হলো চীনের কাহিনীগুলো বলা এবং পার্টি ও
দেশের ওপর চীনা জনগণের বিশ্বাস তুলে ধরা।”
চীন বলছে, তারা সম্পূর্ণ নতুন একটি রাজনৈতিক পদ্ধতির, যাকে ‘চীনা ধরনের
সমাজতন্ত্র’ বলা হচ্ছে, উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং এই পদ্ধতিটি লাখ লাখ লোককে
দ্রারিদ্র থেকে মুক্তি দিয়েছে।
তিয়ানআনমেন স্কয়ারে মঙ্গলবারের এ কুচকাওয়াজে দেশটির প্রশাসনের শীর্ষ
কর্মকর্তারা, জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু ব্যক্তি এবং ৯৭টি দেশের
সামরিক অ্যাটাশেরা উপস্থিত থাকবেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
![](https://www.daily-bangladesh.com/media/imgAll/inner/340918421.jpg)
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সম্প্রতি বলেছেন, এ
প্রদর্শনীর মাধ্যমে বেইজিং ‘পেশীশক্তি’ দেখাচ্ছে না বা এর প্রয়োজনীয়তাও
দেখছে না।
‘শান্তিকামী ও দায়বদ্ধ চীনকে’ উপস্থাপন করাই এ প্রদর্শনীর লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ৫৯টি
পৃথক বিভাগের ১৫ হাজার সদস্য এ কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছে; ৫৮০টি সামরিক
সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং ১৬০টি এয়ারক্রাফট আকাশে উড়বে।
চাং’অ্যান অ্যাভিনিউতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন।
এরপর পদাতিক সৈন্য, সমরাস্ত্র ও বিমানগুলো তিয়ানআনমেন স্কয়ার অতিক্রম করে
এগিয়ে যাবে।
![](https://www.daily-bangladesh.com/media/imgAll/inner/2111789833.jpg)
কুচকাওয়াজে চীনের আট হাজার সদস্যের শক্তিশালী শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি দলও প্রথমবারের মতো অংশ নেবে।
নিজেদের বানানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ ও মনুষ্যবিহীন যন্ত্রের
সক্ষমতার এ প্রদর্শনী নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)
খুব উৎফুল্ল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এতে সড়কে সহজে পরিবহনযোগ্য ডিএফ-৪১ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের
অত্যাধুনিক ভার্সনটি প্রথমবারে মতো প্রদর্শন করা হবে। এ মারণাস্ত্রটি
বিশ্বের যে কোনো জায়গায় আঘাত হানতে এবং একইসময়ে ১০টি সুনির্দিষ্ট
লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণে সক্ষম, বলছেন চীনা সমর বিশ্লেষকরা।
প্রদর্শনীতে রাশিয়ার অ্যাভানগার্দ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনার মতো
হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা
ডিএফ-১৭রও দেখা মিলবে। জাহাজ ও বিমানবিধ্বংসী নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও
ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি থাকবে দূরপাল্লার একাধিক রকেট লঞ্চারের
উপস্থিতি।
দ্রুতগতিসম্পন্ন নজরদারি ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ডি-৮ এবং ‘শার্প সোর্ড’খ্যাত দুটি মনুষ্যবিহীন ড্রোনও দেখাবে তারা।
প্রদর্শনীতে থাকছে রসদ সরবরাহ বিমান ওয়াই-২০, স্টিলথ জঙ্গিবিমান জে-২০সহ
উড়ন্ত অবস্থায় জ্বালানি ভরা ও বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক
ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহনে সক্ষম বোমারু বিমান এইচ৬-এনের সর্বশেষ ভার্সন।
চীন বলছে, আন্তর্জাতিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তারা একটি
‘শক্তিশালী সামরিক বাহিনী’ বানাচ্ছে, যা একইসঙ্গে বিশ্বের প্রধান প্রধান
সামরিক বাহিনীগুলোর সক্ষমতার সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমিয়ে আনবে।
গত এক দশকে দেশটি প্রতি বছরই তাদের সামরিক বাজেট ১০ শতাংশ করে বাড়িয়েছে;
এ বছর তাদের সামরিক বাজেট দাঁড়িয়েছে ১৬৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে, যা বিশ্বের
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ডেইলি বাংলাদেশ
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়