জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। আলোচনার বিষয় এরশাদের শেষ ঠিকানা কোথায় হবে, রওশন না জিএম কাদের কে হবেন পার্টির চেয়ারম্যান। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের প্রধান নির্ধারণের অগ্নিপরীক্ষাও হবে আজকের এই বৈঠকে।
বুধবার বিকেল তিনটায় হঠাৎ জাপার
প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। জরুরি এই বৈঠক সম্পর্কে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন নেতা জানান, জাপার জন্মের
তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও হাতে গোনা যে কয়টি বৈঠক হয়েছে
তারমধ্যে আজকের বৈঠকটি অন্যতম।
তারা জানান, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা
চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শেষ ঠিকানা কোথায় হবে তা নির্ধারণ হবে এই বৈঠকে।
তারা বলেন, এরশাদের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তি অতি সংকটাপন্ন অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
যেকোনো সময় তার জীবনের সমাপ্তি ঘোষণা আসতে পারে। তাই এরশাদের মৃত্যু
ঘোষণার আগে পার্টি এবং রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে
সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।
সারাদেশের কোটি ভক্তের পল্লীবন্ধু মারা গেলে
তাকে কোথায় কবর দেয়া হবে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আজকের বৈঠকে।
এরশাদের নিজের ইচ্ছা ছিল নিজস্ব এক খণ্ড জায়গায় তার কবর হবে। যেখানে
থাকবে মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানা।
এছাড়া এরশাদ এখনো জাতীয় সংসদের প্রধান
বিরোধীদলীয় নেতা। তার অবর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা নির্ধারণও একটি বড়
চ্যালেঞ্জ। কেননা এখনো গুঞ্জন রয়েছে পার্টির একাংশের নেতাকর্মী চান বেগম
রওশন এরশাদ জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে আসুক।
যদিও এরশাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার
অবর্তমানে জাপার চেয়ারম্যান নির্ধারণ করা আছে সহোদর জিএম কাদেরের নাম। এমন
কি পার্টির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তৃণমূলের নেতাকর্মী জিএম কাদেরকে
পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে মানেন। এজন্য আজকে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে
সর্বসম্মতিক্রমে পার্টি প্রধান এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় প্রধান
নির্ধারণ করা হবে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জিএম কাদের ডেইলি
বাংলাদেশকে বলেন, কোনো সিদ্ধান্তের জন্য না। ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা তো
আপনারা জানেন। এখন এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কিছু
কিছু বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। যদিও সবাই প্রতিমুহূর্তে খোঁজ রাখছে তবুও
ভাইয়ের অবস্থা সম্পর্কে আমার জায়গা থেকে অন্তত প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে
শেয়ার করা দরকার। তাই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
এদিকে আজকের বৈঠক সম্পর্কে সাবেক মহাসচিব এ
বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, প্রেসিডেন্টের বৈঠক মানে রুদ্ধদ্বার বৈঠক।
এখানে কি আলাপ হবে সাবজেক্টটা চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছাড়া বাইরে কাউকে
বলা যায় না। আমার ইচ্ছা আছে বৈঠকে আসবো। কিন্তু আমি পার্টিতে বেশিরভাগ
সময়ই থাকতে পারি না, আসা হয় না। কারণ আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কিছু
ঝামেলায় আছি।
আজকের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তৃণমূলের
প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর সিটি কর্পোরেশনের
মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফা বলেন, স্যারের শারীরিক অবস্থা এবং
পার্টির কিছু বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিতেই আজকের বৈঠক।
ডেইলি বাংলাদেশকে রসিক মেয়র আরো জানান,
সিএমএইস এর চিকিৎসকরা ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমরা কেউই এরশাদকে মৃত বলতে
পারবো না। তাছাড়া স্যার এখনো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। এমন
একজন ব্যক্তির মৃত্যু ঘোষণা হঠাৎ করেই দেয়া যায় না। যেহেতু চিকিৎসকরা
সুস্থ আছেন বলেই জানাচ্ছেন সেটাই সঠিক।
তবে কি আজ জাপার চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলের
প্রধান পদ নির্ধারণ হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা বলেন, জাতীয় পার্টির
চেয়ারম্যান এরশাদের নির্দেশনায় দালিলিকভাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান
হিসেবে জিএম কাদেরকে নির্ধারণ করা আছে। তাই এ বিষয়ে পার্টি নেতাকর্মীদের
মধ্যে কোন দ্বিমত নেই।
আর বিরোধীদলীয় প্রধানের নাম পার্টির
চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী স্পিকারের কাছে পাঠানো হবে। জাতীয়
পার্টির সংবিধানের ২০/ক ধারা মোতাবেক চেয়ারম্যান এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে
পারেন।
রওশন এরশাদ সম্পর্কে মোস্তফা বলেন, তার এখন
বয়স হয়েছে। তাছাড়া রওশন এরশাদ নিজেও অসুস্থ তাই দলীয় প্রধান বা সংসদের
বিরোধীদলের প্রধান হওয়ার মত শারীরিক অবস্থা তার নেই।
আজকের বৈঠকের বিষয়ে পার্টির আরেক
প্রেসিডিয়াম সাবেক ছাত্রনেতা আলমগীর শিকদার লোটন বলেন, স্যার (এরশাদ) এখন
সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। দলের
প্রধান, সংসদের বিরোধীদলের প্রধান এসব বিষয়তো থাকবেই। আপাতত এটুকুই বলতে
চাই, বৈঠক শেষ হোক সব জানতে পারবেন।
সূত্র:
ডেইলি বাংলাদেশ
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়