গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে শুধু একটাই আলোচনা চলছিল। স্ত্রীর সামনে
স্বামীকে খুন। আর তাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল শ খানেক লোক। কিন্তু কেউ এগিয়ে
আসল না। এ নিয়ে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। রিফাত শরীফের (২২)
মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে চলছিল শোকের মাতম। অবশেষে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে
দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে
বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) ভোর সোয়া ৪টার দিকে
বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় পুলিশের সাথে গোলাগুলির ঘটনা হয় বলে জানা যায়। এ
ঘটনায় এএসপি সহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
এদিকে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার খবর শুনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
মিন্নি
গণমাধ্যমকে বলেন, সকালে যখন বাবা তাড়াহুড়া করে এসে বললো- নয়ন বন্ড
পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে, এটা শুনেই আলহামদুলিল্লাহ বলেছি।
বিচারের জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হল না।
তিনি আরো বলেন, আমার চোখের
সামনে যারা আমার স্বামীকে কুপিয়ে মেরেছে, তাদের অন্যতম একজন নয়ন বন্ড
বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। আমি এতে অনেক খুশি হয়েছি।
এর আগে, পুলিশ
সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোর রাত ৪টার দিকে বরগুনা সদর
থানার পুলিশ নয়ন বন্ডকে গ্রেফতারের জন্য ওই গ্রামে যায়। ওই গ্রামের খলিল
মাস্টারের বাড়ির সামনে গেলে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত
হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে
নয়ন নিহত হন। হামলায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়াসহ চার
পুলিশ সদস্য আহত হন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের বরিশাল
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক
চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পূর্ব বুড়িরচর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল বারেক ও
কবির হোসেনের তথ্যমতে, ভোর রাত সোয়া ৪টার দিকে তারা বেশ কিছু গুলির শব্দ
শুনতে পান। এতে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। ভোর ৫টার দিকে তারা খলিল মাস্টারের
বাড়ির দরজার সামনে বাঁধের ঢালে এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ তাঁর
লাশ ঘিরে রেখেছিল।
বরগুনার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির
মোহাম্মদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড পালিয়ে ওই এলাকায়
অবস্থান করছেন—এমন তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একদল
পুলিশ পূর্ব বুড়িরচর গ্রামে অভিযান চালায়। পুলিশের অবস্থান টের পেয়ে নয়ন ও
তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি
ছুড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে একজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এটা নয়ন
বন্ডের লাশ বলে স্থানীয় লোকজন শনাক্ত করে।
ওসির তথ্যমতে, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি তাজা গুলি, তিনটি রামদা ও তিনটি গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত,
বুধবার (২৬ জুন) বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনে
দিনে দুপুরে স্ত্রীর আয়েশা আক্তারের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে মারাত্মক
জখম করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে
ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী মিন্নিকে বরগুনা
সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত
ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র
দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। রিফাত শরীফের স্ত্রী
মিন্নি দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই
হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত
করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়