Saturday, May 11

রোজার আনন্দ তারাবিতে

মাওলানা ওমর ফারুক::

রমজান মাসের অন্যতম এক আমল তারাবি নামাজ। রমজান মাসের প্রতিটি রাতেই তারাবির নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। প্রিয় নবী (সা.), সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীনরা নিয়মিত এ আমল করে গেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) তিন দিন এই নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেন। কিন্তু নিয়মিত সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করলে তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই পরবর্তী সময়ে তিনি আর জামাতের সঙ্গে তা আদায় করেননি।
হজরত ওমর (রা.) এর যুগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারাবির নামাজ পড়ার প্রচলন ঘটে এবং সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা সুন্নত হিসেবে সাব্যস্ত হয়।
তাছাড়া রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে তারাবি নামাজ; তাই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে প্রতিদিনই তারাবিহ নামাজ আদায় করা উচিৎ। 
তারাবির ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ হাদীস রয়েছে। হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবিহ নামাজের ব্যাপারে লোকদের উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাত্রিতে ঈমানের সঙ্গে ও ছাওয়াবের আশায় নামাজ আদায় করে, তার বিগত সকল (ছাগীরা) গুনাহ ক্ষমা করা হয়’। (বুখারী, মুসলিম, আবুদ দাউদ, নাসাঈ)
হজরত আমর বিন মুররাহ আল-জুহানী হতে বর্ণিত তিনি বলেন, কুযাআ’হ গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি যদি এই মর্মে সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া (ইবাদতের উপযুক্ত) কোনো উপাস্য নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, রমজান মাসের রোজা পালন করি, তারাবিহ নামাজ আদায় করি ও জাকাত প্রদান করি, তাহলে আমার ব্যাপারে আপনার মতামত কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যে ব্যক্তি এর ওপর মৃত্যুবরণ করবে, সে সত্যবাদী ও শহীদদের মধ্যে গণ্য হবে। (ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিব্বান, তারগীব)
তারাবিহ একাকি আদায় করার চেয়ে জামাআত বদ্ধভাবে আদায় করা উত্তম। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তারাবিহর জামাত করেছেন এবং তার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। হজরত আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রমজানের রোজা রাখলাম। তিনি প্রায় পুরো মাসটাই আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করেননি। শেষ পর্যন্ত যখন মাত্র সাত দিন অবশিষ্ট থাকল, তখন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজে দাঁড়ালেন (২৩তম রাত); এমনকি রাতের এক-তৃতীয়াংশ নামাজে অতিবাহিত হলো। অতঃপর ষষ্ঠ রাতে তিনি আমাদের নিয়ে নামাজে দাঁড়ালেন না। অপর পঞ্চম রাতে তিনি আমাদের নিয়ে নামাজে দাঁড়ালেন (২৫তম রাত) এবং অর্ধরাত অতিবাহিত হলো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি এ রাতের নামাজকে আমাদের জন্য নফল করে দিতেন (তাহলে কতইনা ভালো হত!)। তিনি বললেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন ইমামের সঙ্গে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত নামাজ আদায় করবে, তখন তার জন্য পুরো রাতটাই নামাজ আদায় করা হিসাবে গণ্য হবে (অর্থাৎ পুরো রাত নামাজ আদায়ের নেকি তার জন্য লিপিবদ্ধ করা হবে)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়