কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
ছোট্ট বিমানে আটলান্টিক মহাসাগর
পাড়ি দিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন ২৩ বছর বয়সী ভারতীয় নারী আরোহী পণ্ডিত। লাইট
স্পোর্ট এয়ারক্রাফটে (এলএসএ) চড়ে তিনি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেন।
যুক্তরাজ্যের উইক থেকে যাত্রা শুরু করে ১৩
মে তিনি কানাডার ইকালুয়েট বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ছোট বিমানে তিনি বরফে
ঢাকা গ্রিনল্যান্ড পাড়ি দিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। যাত্রা পথে তিনি আইসল্যান্ড
ও গ্রিনল্যান্ডে থেমেছিলেন।
পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৩৭ হাজার কিলোমিটার পথ,
১২০ ঘণ্টা আকাশে উড়ে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি
একা হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে
এসেছেন।
আরোহীর এটাই প্রথম আকাশ ভ্রমণ নয়।
‘উইমেন এমপাওয়ার এক্সপিডিশন’-এর সদস্য হিসেবে আগেও একবার আকাশপথে কয়েক
হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নজির গড়েছিলেন তিনি। সে বার খারাপ আবহাওয়া ও
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আটলান্টিক পাড়ি দেয়া হয়নি। এ বার সেই স্বপ্ন
পূরণ করলেন আরোহী।
মুম্বইয়ের বাসিন্দা আরোহি পন্ডিতের ছোটবেলা থেকে বিমান চালানোর শখ। প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ‘উইমেন এমপাওয়ার এক্সপিডিশন’-এ যোগ দেন তিনি।
আরোহী পণ্ডিতের লাইট স্পোর্টস
এয়ারক্রাফ্টের নাম ছিল মাহি। সাইনাস ৯১২ মডেলের সিঙ্গেল ইঞ্জিনের বিমানটির
ওজন প্রায় ৪০০ কিলোগ্রাম। ভারতের সিভিল এভিয়েশনের ডিরেক্টর জেনারেল এটিকে
লাইসেন্স দিয়েছে। মহাসাগর পাড়ি দেয়ার জন্য বিমানের ককপিটে একটি র্যাফ্ট,
অক্সিজেন এবং অন্যান্য নিরাপত্তা গিয়ার ছিল। এছাড়া জরুরি অবতরণের জন্য
প্যারাসুটও ছিল।
গত বছর জুলাইতে সহকর্মী ও বন্ধু কেইথিয়ার
মিসকুইটার সঙ্গে এই এয়ারক্রাফ্টে চেপেই বিশ্বের নানা দেশ পাড়ি দিয়েছিলেন
আরোহি। পঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট হয়ে পাকিস্তান ছুঁয়ে তাদের এয়ারক্রাফ্ট
একে একে অতিক্রম করেছিল ইরান, তুরস্ক, সারবিয়া, স্লোভানিয়া, জার্মানি,
ফ্রান্স ও ব্রিটেন। তবে আবহাওয়া মন্দ থাকায় আটলান্টিক পাড়ি দেয়া হয়নি
তাদের।
বিশ্বরেকর্ড গড়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে
দেয়া এক বক্তব্যে আরোহী পণ্ডিত বলেন, ছোট বিমানে চড়ে আটলান্টিক মহাসাগর
পাড়ি দেয়া এক দারুন অভিজ্ঞতা।
তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য, বিশেষত মহিলাদের
প্রতিনিধি হয়ে এই কাজটা করতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। আটলান্টিক মহাসাগর পার
হওয়া শুধু অ্যাডভেঞ্চার নয়, রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। দিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতা,
শুধুমাত্র আমি আর আমার ছোট্ট এয়ারক্রাফ্ট। সমুদ্র ও তার মাঝে উঁকি দেওয়া
নানা আকারের দ্বীপ, এই সৌন্দর্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।’
অভিযান শুরুর আগে সাত মাস প্রশিক্ষণ
নিয়েছিলেন আরোহি পণ্ডিত। বিভিন্ন প্রতিকূল আবহাওয়া, উচ্চতার সমস্যা, ভাইরাস
আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করেছিলেন।
মুম্বইয়ের বরিভেলিতে এখন উৎসবের আবহ। আরোহী
জানিয়েছেন, ভালো-মন্দ দুই রকম আবহাওয়াতেই বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ও
প্রশিক্ষণ রয়েছে তার। আকাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টার উড়ানে অভ্যস্ত তিনি।
গ্রিনল্যান্ড, সাইবেরিয়া, আইসল্যান্ডের অধিক
উচ্চতায় ছোট এয়ারক্রাফ্ট বিনা দ্বিধায় ওড়াতে পারেন তিনি। আরোহীর পরবর্তী
লক্ষ্য আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুর্গম এলাকা। কোনো দিন
একাকীই নিজের এয়ারক্রাফ্ট উড়িয়ে বেরিয়ে পড়বেন তিনি।
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়