Thursday, January 3

সরিষার তেলের অসাধারণ গুনাগুণ

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
সরিষা বীজ থেকে তৈরি হয় সরিষার তেল। এটি গাঢ় হলুদ বর্ণের হয়। এতে বাদামের মত সামান্য কটু স্বাদ ও শক্তিশালী ঝাঁঝালো সুবাস থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে এই তেল আমাদের পূর্বপুরুষেরা ব্যবহার করে আসছেন। ওমেগা আলফা ৩ ও ওমেগা আলফা ৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর তেল বলা হয়।
এর ঔষধি গুণাগুণের হওয়ায় এই তেল প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য সরিষার তেলের অসাধারণ উপকারিতার কথা-
১. ত্বকের তামাটে ভাব দূর করতে
সরিষার তেল ত্বকের তামাটে ভাব ও দাগ দূর করে ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে পারে। এজন্য বেসন, দই, সরিষার তেল ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে মিশ্রণটি ত্বকে লাগাতে হবে। ১০-১৫ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করা প্রয়োজনজ
২. প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন
যেহেতু সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ই থাকে সেহেতু এই তেল ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিতে পারে। তাই স্কিন ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে পারে। ভিটামিন ই বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতে পারে। তাই সানস্ক্রিন লোশনের মতোই ব্যবহার করতে পারেন সরিষার তেল। তবে এই তেল যেহেতু ঘন তাই ত্বকে লাগানোর পর ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে যেনো অতিরিক্ত তেল লেগে না থাকে। অন্যথায় অতিরিক্ত ধুলাবালি জমা হয়ে ত্বকের ভালোর চেয়ে খারাপই হতে পারে বেশি।
৩. ঠোঁটের যত্নে
শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে সরিষার তেল চমৎকার প্রতিকার হিসেবে কাজ করে যেখানে লিপ বাম বা চ্যাপস্টিক অকার্যকর। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার নাভির মধ্যে এক বা দুই ফোঁটা সরিষার তেল দিন। তাহলে আর কখনোই আপনার ঠোঁট শুকাবে না বা ফাটবে না।
৪. চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
সরিষার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেল ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ থাকে। বিশেষ করে এতে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে।
বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিরাতে চুলে সরিষার তেল মালিশ করে লাগালে চুল কালো হয়।
৫. ক্ষুধা বৃদ্ধি করে
ক্ষুধার উপর সুস্বাস্থ্য বহুলাংশে নির্ভর করে। পাকস্থলীর পাচক রস উদ্দীপিত করার মাধ্যমে ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সরিষার তেল। যাদের ক্ষুধার সমস্যা আছে তারা রান্নায় সরিষায় তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৬. উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে
পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচন তন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে সরিষার তেল। খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে ম্যাসাজ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং ঘর্মগ্রন্থি উদ্দীপিত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে।
৭. কার্ডিওভাস্কুলার উপকারিতা
সরিষার তেল মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ বলে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ফলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমে।
৮. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
সরিষার তেলে গ্লুোকোসিনোলেট নামক উপাদান থাকে যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই ক্যান্সারজনিত টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করে সরিষার তেল। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
এছাড়াও অ্যাজমা ও সাইনুসাইটিসের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে সরিষার তেল অত্যন্ত কার্যকরী, ঠান্ডা-কাশি নিরাময়েও চমৎকার কাজ করে সরিষার তেল, ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। এতে অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট নামক অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকে বলে ছত্রাকের ইনফেকশন নিরাময়ে কাজ করে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়