Friday, September 8

কানাইঘাটের সফল লেবু চাষী ময়নুল


আলিম উদ্দিন আলিম : কানাইঘাটের সফল লেবু চাষী ময়নুল হক। তার বাগানের লেবু এখন দেশ ও বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। তিনি পেশায় একজন দরিদ্র কৃষক। তার পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা ফেরাতে তিনি লেবু চাষ শুরু করেন। বর্তমানে লেবু বিক্রি করে বৎসরে তার আয় হয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা । বাড়ি কানাইঘাট উপজেলার ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের সুনাতন পুঞ্জি গ্রামে। বর্তমানে মা, বাবা ৩ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার চলছে তার । সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। লেবু চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন তিনি। ময়নুল হক তার বাড়ী থেকে ১ কিলোমিটার দুরে সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত ১২ একর ভুমিতে একটি লেবু বাগান করেছেন। বাগানটি ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সুনাতন পুঞ্জি এলাকার ভাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামে অবস্থিত। এই বাগানটি কানাইঘাট বাজার থেকে সুরইঘাট বাজার হয়ে কিংবা চতুল বাজার থেকে বড়বন্দ বাজারে হয়ে সুরইঘাট বাজারে এসে উত্তর পাশ দিয়ে সীমান্তবর্তী সুনারতন পুঞ্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত একটি রাস্তা রয়েছে। উক্ত রাস্তার ১ কিলোমিটার উত্তর পূর্বমুখী রাস্তা হয়ে হেটে কিংবা ছোট গাড়ি দিয়ে কাচা রাস্তা অতিক্রম করার পর সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের নিচে সুরই খালের পার্শ্বে প্রায় ৩০ বিঘা সমতল ভুমিতে এই বাগানের অবস্থান। উক্ত বাগানের আশে-পাশে আরোও বেশ কিছু উচু-নিচু পাহাড় ও টিলা রয়েছে। এসব টিলা গুলোতে ময়নুল হকের আনারস বাগান, সুপারী বাগান, কলা বাগান, কমলা বাগান, কাঁঠাল বাগান ও অন্যান্য ফসলের বাগান করেছেন। ময়নুল হক ৬ বছর পূর্বে এই পাহাড়ী জমিতে লেবু চাষ শুরু করেন। লেবু চাষের প্রথম বছরে তিনি সফলতার পথ দেখেন। বিক্রি করেন ৪০ হাজার টাকার লেবু । এর পর থেকে ময়নুল হকের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের বছর তিনি এক লক্ষ টাকার লেবু বিক্রি করেন। বর্তমানে তার বাগানের লেবু কানাইঘাট ছাড়াও সিলেট শহর সহ সিলেটর বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে লেবু ব্যবসায়ীরা তার বাগানের লেবু বিদেশে রপ্তানী করছেন। ময়নুল হক জানান, তার লেবু বাগানে কাজ করে ৫/৬ জন কৃষক দৈনিক তিনশত টাকা রোজগারের কাজ করে খেটে খাওয়া মানুষের পরিবার গুলোও উপকৃত হচ্ছে। বর্তমানে তিনি আশাবাদী তার এই লেবু বাগান থেকে বৎসরে ১২/১৪ লাখ টাকা তিনি উপার্জন করতে পারবেন। তার এই লেবু বাগান করতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাকী টুকু তার ৬ বৎসরের নিরলস পরিশ্রম। বর্তমানে ময়নুল হকের বাগানে লেবু ছাড়াও পেয়ারা, কলা, কাঁঠাল আনারস ইত্যাদি অনেক ফসলাদি ও গাছ-গাছালি রয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ৪/৫ বৎসর পর তার এ বাগানের ফসলাদি বিক্রি করে প্রতি বৎসরে ১৫/২০ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন এবং তার এ বাগানে ২০/২৫ জন শ্রমিক দৈনিক কাজ করে জিবীকা নির্বাহ করতে পারবে। ময়নুল হকের বাগানের শ্রমিক কালা মিয়া বলেন, আমরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাহাড়ী এলাকার লোক। প্রতিদিন তার বাগানে কাজ করে তিন থেকে সাড়ে তিনশত টাকা রোজগার করি। আর এ টাকা দিয়ে আমরা আমাদের পরিবার চালাই। ময়নুল হকের এই লেবু বাগানটি আমাদের ৫/৬টি দরিদ্র পরিবারের কাজের সুযোগ করে দেওয়ায় আমাদের অনেকটা আয়ের সুযোগ হয়েছে। বর্তমান সময়ে এই অবহেলিত পাহাড়ী জমিতে লেবু ও অন্যান্য ফসল বিক্রি করে ময়নুল হক আর্থিক ভাবে অনেক সফলতা অর্জন করেছেন। তার সফলতা দেখে গ্রামের অন্যান্য কৃষকরা লেবু বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। ময়নুল হক লেবু চাষ করে এখন সাবলম্বী। তার লেবু চাষের উপর এ সফলতা অর্জনে তিনি তার সহকর্মীসহ সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়