Saturday, July 15

এতিম হাবিবার দেনমোহর ২ লাখ এক হাজার টাকা

এতিম হাবিবার দেনমোহর ২ লাখ এক হাজার টাকা
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: গতকাল শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারে বেড়ে ওঠা বাবা-মা হীন মেয়ে হাবিবা আক্তারের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বেলা আড়াইটার দিকে দুই লাখ এক হাজার টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে কাজি আবু জামাল হাবিবা-জাকারিয়ার বিয়ে পড়ান।

বিয়েতে হাবিবার পাশে দাঁড়ালেন সবাই। গলার হার, কানের দুল ও হাতের চুড়ি দিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আবাসনের নিশ্চয়তা দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বরের জামাকাপড়, কনের স্বর্ণের চেইন, টেলিভিশন দিলেন জেলা প্রশাসক। পুলিশের কনস্টেবল পদে পাত্রের চাকরির ব্যবস্থা করা, সামগ্রিক সাজসজ্জা, অতিথিদের খাবার এবং কনের দুই পর্বের বিদায়ের আয়োজন করেছেন স্বয়ং পুলিশ সুপার।

গত বছর পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন জাকারিয়া। এসপির সহায়তায় ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বর্তমানে তিনি কুমিল্লায় কর্মরত আছেন।

শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরার তত্ত্বাবধানে মন্ত্রী, সাংসদ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিশেষ সহায়তায় হাবিবার জাঁকজমক বিয়ের আয়োজন
করা হয়েছে। বিয়েতে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাসলিমা সুলতানা খানম ও শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বেগমসহ গণমাধ্যমকর্মী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাসহ তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

শিশু পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জন্মের আগেই হাবিবার বাবা নুরু মিয়া মারা যান। চার বছর বয়সে মা খোদেজা বেগমও মারা যান। ছয় বছর বয়সে মামা মোশারফ হোসেন ও মামি লুৎফা বেগম তাকে সরকারি শিশু পরিবারে দিয়ে যান। তারপর শিশু পরিবারে ১২ বছর কাটিয়ে বেড়ে ওঠেন হাবিবা। এটাই তার পরিবার। হাবিবা সেলাই, বুটিক ও কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

সরকারি শিশু পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষের দিকে হাবিবার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, বয়স ১৮ হলে তাকে শিশু পরিবার ছাড়তে হবে। এ কারণে মামা-মামিকে ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় হাবিবাকে। কিন্তু হাবিবার মায়া মায়া দৃষ্টি শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরাকে ভাবিয়ে তোলে। তিনি হাবিবার পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দুই মাস পর আবারও হাবিবাকে শিশু পরিবারে নিয়ে আসেন।
Image result for হাবিবা আক্তারের বিয়ে

হাবিবা আক্তার

সরকারি শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বলেন, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ভাবনা থেকে হাবিবার বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেন রওশন আরা। বিষয়টি নিয়ে তিনি এসপি মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। বর হিসেবে কোনো ভালো ছেলের খোঁজ পাওয়া গেলে তাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে সম্মত হন এসপি।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এগিয়ে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আইনমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সরকারি শিশু পরিবারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ‘মেয়েটির জন্য কিছু করার আমার এই ছোট ইচ্ছার বিষয়টি পরিপূর্ণতা পাওয়ায় মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছি।’

আবেগাপ্লুত হয়ে হাবিবা বলেন, ‘শিশু পরিবারে রওশন আরা ম্যাডাম, এসপি স্যার, ডিসি স্যার, মন্ত্রী স্যার, এমপি স্যার, আল মামুন স্যারসহ সবার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। বাবার অভাব এভাবে পূরণ হবে ভাবিনি।’ সবার কাছে দোয়া চেয়ে শিশু পরিবারের অন্যদের বেলায়ও সমাজের সবাইকে এভাবে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই জেলার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সুশীল শ্রেণির সবাই বিয়েতে হাবিবার পাশে দাঁড়িয়েছে। হাবিবা আমাদের জন্য একটি উদাহরণ। আমরা চাইলেই একটি সাধারণ বিষয়কে অসাধারণ রূপ দিতে পারি। শুধু আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তাহলেই সবার পাশে আমরা দাঁড়াতে পারব।’ 
সূত্র: বিডি লাইভ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়