Sunday, January 1

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার হিসাব-নিকাশে শুরু হলো '২০১৭'

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার হিসাব-নিকাশে শুরু হলো '২০১৭'

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার হিসাব-নিকাশে শুরু হলো নতুন বছর। বিদায় নেওয়া বছরের প্রাপ্তি ও আকাঙ্ক্ষা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে, সেই আশায় খ্রিস্টীয় নতুন বছর বরণ করছে বাংলাদেশ।

নিউ জিল‌্যান্ডের অকল‌্যান্ড থেকে শুরু হয় বর্ষবরণের উৎসব, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যখন ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার ঘর অতিক্রম করে, আতশবাজি আর পটকায় সরব হয়ে ওঠে ঢাকা।

বর্ষবরণের নানা আয়োজনে মেতে ওঠে রাজধানীবাসী। কেবল জঙ্গি উত্থানে নতুন মাত্রা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা, গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে হামলার ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো কালো রেখা ছিল না।

২০১৬ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মেগা প্রকল্পগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার পূরণে দেশের স্বপ্নের সেতু ‘পদ্মা সেতু’ ও মেট্রোরেল প্রকল্পের গতি পেয়েছে নতুন মাত্রা। ২০১৭ সালে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।

বছর জুড়ে অর্থনীতির চাকাও সমানতালে হেঁটেছে, যদিও নিত্যপণ‌্যের মূল্য বাড়া নিয়ে আক্ষেপ ছিল মানুষের। নতুন বছরে অর্থনীতির এই চাকাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার কথাই বাণীতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে ২০১৬ সাল ‘গৌরবোজ্জ্বল বছর’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন ‘রোলমডেল’।

'২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করব'।

বিপরীতে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বাণীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে ‘গণতন্ত্রহীন’ দাবি করে তা পুনরুদ্ধারে সবাইকে ঐক‌্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

'অজস্র রক্তঋণে অর্জিত গণতন্ত্র অপহৃত হয়েছে। গণবিরোধী শক্তি জনগণের সকল অধিকারকে বন্দি করে রেখেছে। এমতাবস্থায় সকল গণতান্ত্রিক শক্তির মিলিত সংগ্রামে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে'।

বছরের শুরু থেকে শিশু, নারী ও নানা হত্যাকাণ্ডে সমালোচনার মধ্যে জঙ্গি হামলা জনমনে আতঙ্ক বাড়িয়ে তুললেও তা দমনে সরকারের অবস্থান দেশি ও বিদেশি সব মহলের প্রশংসা পেয়েছে।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। নারী শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যায়নে অগ্রগতি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ পর্যাপ্ত। রপ্তানি আয়ও স্বস্তিদায়ক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরস্কার প্রাপ্তি দেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

বিশ্বসভায় খেলাধুলায় সাফল্য এসেছে। দেশে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নতুন স্বপ্ন নিয়ে এসেছে।

১৯৭১ সালে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তানি শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বাঙালি জাতি। স্বাধীনতার চার দশক পর সে স্বপ্ন অর্জনের পথে অনেকটাই এগিয়েছে দেশ। আর এ স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে রপ্তানি খাত। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের রপ্তানি খাত কাঁচা চামড়া ও পাটনির্ভর হলেও সময়ের আবর্তনে সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণসহ হাল্কা ও মাঝারি শিল্পের নানা পণ্য।

১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয় গত অর্থবছরে পৌঁছেছে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে।

জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেসকো বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে স্থান দিয়েছে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায়। বাংলা নতুন বছরের অনুষঙ্গের আহ্বান খ্রিস্টীয় নতুন বছর বরণেও হচ্ছে ধ্বনিত। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তৎপর হতে পারলে নতুন বছরটি হয়ে উঠতে পারে সাফল্যময়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়