Saturday, October 29

ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ :এক আদর্শ নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান


মোঃ হানিফ: সিলেটের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত জৈন্তাপুর উপজেলা। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে লীলা ভূমি খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এ উপজেলা। আদিবাসী খাসিয়া, পাত্র সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন নৃ-গোষ্টির বসবাস রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান ও ঐতিহাসিক কারণে আধুনিক শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে অনেকটা পিছিয়ে ছিল এ এলাকার নারীরা। অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে উচ্চ শিক্ষায় অধিষ্ঠিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ। ফলে আদিবাসী খাসিয়া, পাত্র সম্প্রদায়, চা-শ্রমিক ও অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠী এবং বালু, পাথর কোয়ারী শ্রমিক অধ্যুষিত পশ্চাদপদ এ এলাকার নারী শিক্ষার বিস্তার ও উচ্চ শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এ কলেজ। “পান, পানি, নারী - এই তিনে জৈন্তাপুরী” প্রচলিত এ প্রবাদের অন্যতম অনুষঙ্গ পিছিয়ে পড়া নারীদের শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালের ১১ ডিসেম্বর জৈন্তাপুর উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ, শিক্ষিত ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত হয় সচেতন মহল। সচেতন মহল ও সকলের সহযোগীতায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত অপর এক সভায় উপস্থিত সবার সম্মতি ক্রমে জৈন্তিয়া এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা, শিক্ষানুরাগী জাতীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের নামে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন জাতীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। যাত্রা শুরু হয় ইমরান আহমদ মহিলা কলেজের। তখন জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার মধ্যে ইমরান আহমদ মহিলা কলেজ প্রথম ও একমাত্র মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০০০ সালের ২০ আগস্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিলেটের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার আবু হাফিজ কলেজের পাঠদান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। কলেজটি ২০০০-২০০১শিক্ষাবর্র্ষ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম যাত্রা শুরু করে এবং প্রথম বর্ষে মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগে মাত্র ৭ জন ছাত্রী ভর্তি হয়। ২০০২ সালে এ সাতজন পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে এবং নাহিদ আক্তার নামের একজন ছাত্রী সিলেট বোর্ডে মানবিক বিভাগে ১৮তম স্থান অর্জন করে। এতে সমগ্র জৈন্তিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে ইমরান আহমদ মহিলা কলেজ পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের বছরই কলেজটিকে শিক্ষা বোর্ড সিলেট স্বীকৃতি প্রদান করে এবং ২০০৪ সালে কলেজটি এমওিভূক্ত করা হয়। অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া নারী শিক্ষাকে আরও বেগবান, উচ্চ শিক্ষায় অধিষ্টিত করতে ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা এবং স্নাতক পর্যায়ে বি.এস.এস (পাস) কোর্স চালু করা হয়। কলেজটি ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি লাভ করে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর তনয়া ও সুযোগ্য উত্তরসূরী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইমরান আহমদ মহিলা কলেজটি জাতীয়করণের জন্য ঘোষনা করেন। পাবলিক পরীক্ষায় শুরু থেকেই এ কলেজটি ভাল ফলাফল করে আসছে। প্রায় প্রতি বছরই ফলাফলের দিক থেকে এ কলেজটি জৈন্তাপুর উপজেলার শীর্ষে অবস্থান করে। উল্লে­খ্য ২০১৩ সালের (২০১৫সালে অনুষ্ঠিত) স্নাতক পর্যায়ে প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় ছাত্রীরা শতভাগ সাফল্য অর্জন করে। গত ২০১৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় ২১ জন অংশ গ্রহন করে ১৮ জন উত্তীর্ণ হয় ও পাশের হার ৮৫.৭১%, মানবিক শাখায় ১৯৩ জন অংশ গ্রহন করে ১৪৭ জন উত্তীর্ণ হয় ও পাশের হার ৭৬.১৬%, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৩৮ জন অংশ গ্রহন করে ৩০ জন উত্তীর্ণ হয়, পাশের হার ৭৮.৯৫%, সর্বমোট ২৫২ জন অংশ গ্রহন করে ১৯৫ জন উত্তীর্ণ হয় এবং শতকরা পাশের হার ৭৭.৩৮%। ২০১৬ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় ১৯ জন অংশ গ্রহন করে ১৯ জনই উত্তীর্ণ হয় ও পাশের হার ১০০%, মানবিক শাখায় ১৫৯ জন অংশ গ্রহন করে ১১৭ জন উত্তীর্ণ হয় ও পাশের হার ৭৩.৫৮% এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২৭ জন অংশ গ্রহন করে ২৫ জন উত্তীর্ণ হয় ও পাশের হার ৯২.৫৯%, সর্বমোট ২০৫ জন অংশ গ্রহন করে ১৬১ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয় এবং শতকরা পাশের হার ৭৮.৫৪%। একই ধারাবাহিকতায় উপজেলার সাধারণ শিক্ষায় আরও তিনটি কলেজের মধ্যে ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রতিবছরই সবচেয়ে ভাল ফলাফল করে আসছে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতায় সাফল্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ উপজেলার মধ্যে সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডি‘র সভাপতি সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা করেন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি শতভাগ ফলাফলের চেষ্টা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর মোঃ এনামূল হক সরদার জানান ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রতি বছরের ন্যায় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতায় উপজেলার মধ্যে ভাল ফলাফল করে আসছে এবং আগামীতে আরও ভাল ফলাফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে দেশেরে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করে অনেক ছাত্রী আজ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চাকুরী করছে। পিছিয়ে পড়া এলাকার নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো বিস্তারে এই কলেজটি উত্তর সিলেটের একটি আদর্শ নারী প্রতিষ্ঠান।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়