Tuesday, December 29

ঘুষকে না বলুন


খাইরুল ইসলাম তাজ: অর্থ মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন। আর এ অর্থ উপার্জন হয়ে থাকে প্রধানত চাকরি কিংবা ব্যবসায়ের মাধ্যমে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'নামাজ শেষ হওয়ার পর পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো।' (সূরা জুমা : ১০)। এখানে অনুগ্রহ বলতে অর্থ-জীবিকা ও সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈধতা প্রতিষ্ঠিত। আর এজন্য ব্যবসায়িক ব্যাপারে উভয়পক্ষের সহযোগিতা অবশ্যই থাকতে হবে। কোরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'পুণ্য ও আল্লাহভীরুতার পথে একে অপরকে সাহায্য করো। পাপ ও অন্যায় পথে কখনও কারও সহযোগিতা করবে না।' (সূরা মায়েদা : ২)। যে কোনো কারবারে উভয় পক্ষের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি অবশ্যই থাকতে হবে। জবরদস্তি সম্মতির কোনো মূল্য নেই। আল্লাহ বলেন, 'হে মোমিনরা! তোমরা একে অপরের সম্পদ বাতিল পন্থায় খেও না। কিন্তু তা ব্যবসার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মতিতে হলে (কোনো আপত্তি নেই)।' (সূরা নিসা : ২৯)। আবার কারবারে কোনো ধরনের প্রতারণা, আত্মসাৎ, ক্ষতি ও পাপাচার থাকতে পারবে না। মহানবী (সা.) বলেছেন, '(নিজে) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং (অন্যকে) ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়।' তার মধ্যে ঘুষ অন্যতম একটি শোষণের হাতিয়ার। এটি একটি নির্ঘাত সামাজিক ব্যাধি। সমাজের ক্ষমতাহীন মানুষরা তার অধিকার কিংবা অন্যের অধিকারকে করায়ত্ত করার লক্ষ্যে দুর্নীতিপরায়ণ দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে যে অবৈধ অর্থ কিংবা পণ্যসামগ্রী পর্দার অন্তরালে প্রদান করে থাকে তাই ঘুষ। এটি কাজ হাসিল করার অশুদ্ধ বিনিময় বা উৎকোচ নামে পরিচিত। তবে ইসলামী দৃষ্টিতে ঘুষ অন্যায় পন্থা। ঘুষ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'ঘুষ গ্রহণকারী এবং ঘুষদানকারী উভয়ের ওপরই আল্লাহর লানত।' (বোখারি ও মুসলিম)। আরেকটি বিষয় হলো, আমরা সবসময় নিজেকে তুলনা করছি সমাজের সব সুদখোর, ঘুষখোর, সিরিয়ালখোরদের সঙ্গে। আপনি কিন্তু নিজেকে সমাজের ভালো মানুষের সঙ্গে তুলনা করছেন না। আপনার আশপাশে হয়তো ৫০ জন সুদখোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ মানুষ আছে। আপনি তাদের আপনার মডেল হিসেবে নিয়ে, কেন আপনি তাদের মতো হতে পারবেন না, তা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগছেন। অথচ সমাজে যে আরও ২০ জন সৎ-মানুষ আছেন, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, সৎ-চাকরি করেন, কখনও ঘুষ নেন না, সুদ খান না, দুর্নীতি করেন না, হিন্দি সিরিয়াল দেখেন না, তাদের সঙ্গে কিন্তু আপনি নিজেকে তুলনা করছেন না। বলা হয়ে থাকে, ঘুষ না দিলে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। একটু দুর্নীতি না করলে ওপরে ওঠা যায় না। বাংলাদেশে যদি একটা বাড়ি, গাড়ি, জমি করতে চাই তো কিছু ঘুষ আদান-প্রদান করতে হবে, কিছু দুই নাম্বারি করতে হবে- এ ধরনের একটা ধারণা আমাদের সমাজে বদ্ধমূল। আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, ঘুষগ্রহীতা এবং দাতা উভয়ই জাহান্নামি। আবার তিরমিজির রেওয়ায়েত মতে, মহানবী (সা.) ঘুষ আদান-প্রদানকারীকে লানত দিয়েছেন। সূরা বাকারার ১৮৮নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, 'তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে পাপপন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।' ঘুষের টাকায় কেনা জমিটা নিয়ে আপনার বা আমার গর্ব করার কোনো কারণ নেই। কারণ অনেক কষ্ট করে ঘুষ নিয়ে এবং দিয়ে যে জমিটা কিনেছি, সেটা জাহান্নামের জমির একটা অংশ। জাহান্নামের আগুনের একটা অংশ কিনে যদি আমরা শান্তি এবং গর্ব অনুভব করি, তবে তার থেকে বোকামি আর হয় না। আমরা নর্দমাযুক্ত নালার পানি দেখলে নাকে হাত দেই; কিন্তু এর চেয়েও নোংরা 'সুদ-ঘুষ' খাওয়াকে গোনাহের ভেতরই ধরছি না। এককথায়, ঘুষ দেয়া-নেয়া হারাম। নবী করিম (সা.) ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। বর্তমানে ঘুষ নিয়ে চাকরি পাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যায়। ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়া জায়েজ হবে না। এতে একদিকে ঘুষ প্রদানে কবিরা গোনাহ হয়, অন্যদিকে ঘুষদাতা অযোগ্য হলে অন্য চাকরিপ্রার্থীর হক নষ্ট করারও গোনাহ হয়। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। আর ঘুষ প্রদান করা নিশ্চিত কবিরা গোনাহ। তওবা করা ছাড়া কবিরা গোনাহ মাফ হয় না। আর জেনেশুনে কবিরা গোনাহ না করাই উচিত।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়