Thursday, July 23

আমার বাংলাদেশ, আমার স্বপ্ন


মিলন কান্তি দাস:আজ প্রায় বছর খানেক পর আবার লিখতে বসলাম। যে লিখালিখিটা ছিলো আমার জীবনের ধ্যান, জ্ঞান, স্বপ্ন ও সাধনার পর্যায়ে। সেই লিখালিখিতে আমি এতোদিন পর বসেছি তা নিজেরও ভাবতে অবাক লাগছে। সেই কৈশোর কালের ছাত্রজীবন থেকেই এই লিখালিখির শুরু। যা আজো চলছে প্রচন্ড আত্মপ্রত্যয় বুকে নিয়ে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, যে মানুষটি একবার এই লিখালিখির জগতে চলে আসে, সে আর কখনো কোন অবস্থাতেই বের হয়ে যেতে পারে না। এটাও এক ধরনের নেশার জগত। তবে এই নেশাটা স¤র্পুণ ভিন্ন এক ধরনের নেশা।এই নেশা আলোকস্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়ার নেশা। এই নেশা ভ’বন ভরা আলোকে সংগ্রহ ও সঞ্চয় করার নেশা। এই নেশা জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে প্রতিটি সময়ে একটি সুন্দর শুভ্র স্বপ্ন দেখার নেশা। এভাবে প্রতিটা কলম সৈনিক স্বপ্ন দেখে। প্রতিটা কলম সৈনিক স্বপ্ন দেখে একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থার। একটি আলোকিত বাংলাদেশের সর্বপরি একটি সুখী সমৃদ্ধ বিশ্ব ব্যবস্থার। আজো আমাদের এই স্বপ্ন দর্শন চলছে। আমাদের স্বপ্ন বেচে থাকবে আমৃত্যু আজীবন। কেন জানি মনে হয় স্বপ্ন দর্শনের মধ্যদিয়েই জীবনের স্বার্থকতা অনেকখানি খুজে পাওয়া যায়। একজন মানুষ যে সত্যিকারের স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে তার দ্বারা আর কিছু হোক অন্ততপক্ষে পরিবার, সমাজ, তথা রাষ্ট্রের একবিন্দু ক্ষতি হতে পারেনা। এই সত্যটা আমি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি। স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে সম্ভাবনার ক্ষেত্র খুজে পাওয়া যায়। আমরা যদি এযাবতকাল পর্যন্ত পৃথিবীতে আসা সকল বিখ্যাত ব্যাক্তির জীবনী পর্যালোচনা করি, তাহলে আমরা সেÿেত্রে দেখতে পাইযে তারা সকলেই স্বপ্ন দেখতেন। তারা সকলেই স্বপ্ন দেখতেন বিজয়ের। অবশ্যই সে বিজয় প্রতিটি মানুষভেদে ভিন্ন ছিলো। যেমন ঃ আমাদের বাঙ্গালী জাতির মহান নেতা, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলার। ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী স্বপ্ন দেখেছিলেন দীর্ঘ প্রায় দুইশত বছরের ব্রিটিশ শাসন, শোষণ, নিপিড়ন, জুলুম, অত্যাচার, লাঞ্চনা ও বঞ্চনামুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম ভারত রাষ্ট্রের। তেমনি ভাবে পাকিস্থানের জাতির জনক মোহাম্মদ আলী খান জিন্নাহ স্বপ্ন দেখেছিলেন সম্পূর্ণ ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, চেতনা, ও মতাদর্শের ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্থান রাষ্ট্র প্রতিষ্টার। দক্ষিন আফ্রিকার অধিসংবাদিত নেতা লেনসন ম্যান্ডেলা স্বপ্ন দেখেছিলেন সম্পূর্ণ বর্ণবাদ ও জাতিভেদ ও প্রথামুক্ত একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিষ্টার। মাও সেতুং, কালমার্কস সহ সকল কমিউনিষ্ট নেতা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি শোসন বঞ্চনামুক্ত বিশ্বব্যবস্থার যেখানে মানুষে মানুষে কোন পর্যায়ে ভেদাভেদ থাকবেনা, তেমনি শ্রীলংকার তামিল নেতা ভিলøুপাই প্রভাকরণ স্বপ্ন দেখেছিলেন সংখ্যাগরিষ্ট সিংহলী কর্তৃক নির্যাতিত নিপীড়িত সংখ্যালঘু তামিল জনগনের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম তামিল রাষ্ট্র প্রতিষ্টার। জার্মানীর ডিক্টেটর এডলফ হিটলার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখেই সে পথে হাটছিলেন। সবমিলিয়ে দেখা যায়, এসকল বিশ্বনেতৃবৃন্দের খ্যাতি ও দ্যুতির পিছনে আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করছে তাদের স্বপ্ন। এক বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে তারা আমৃত্যু পথ চলেছেন। তাদের কেউ কেউ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছুতে পেরেছেন। আবার কেউ কেউ সঠিক লক্ষ্যেমাত্রা অর্জন করতে পারেননি। তবে তারা সকলেই যে স্বপ্নের পথে হাটছিলেন এটা অনস্বীকার্য। ইতিহাসের পাতাগুলো পড়লে যেন তাই মনে হয়। স্বপ্নই কেবন খোলে দিতে পারে সম্ভাবনার দোয়ার। সেক্ষেত্রে অবশ্য স্বপ্ন দেখে কেবল বসে থাকলেই চলবেনা। আপনার স্বপ্নের সাথে অবশ্যই আপনার ইচ্ছাশক্তি, সামর্থ্য ও আত্মবিশ্বাসের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। আর সেÿেত্রে আপনি সম্পূর্ণরুপে সফল হোন কিংবা নাই হোন। তবে সর্ম্পূণরুপে ব্যার্থ হবেননা এটা নিশ্চিত। সেÿেত্রে আপনার ব্যর্থতা যেটি আসবে সেটি হবে সফল হতে গিয়ে সফলতার কাঙ্খিত লক্ষ্যে না পৌছানোর ব্যার্থতা। তবে আপনি যে আপনার স্বপ্ন অর্জনের লক্ষ্যে হাটছিলেন সেজন্য আর যাই হোক অন্ততপক্ষে আপনি আপনার বিবেকের আত্মতৃপ্তি পাবেন। সেজন্য আপনার বিবেক সবসময় আপনার পক্ষ্যে থাকবে, বিরুদ্ধে যাবেনা। আর আপনার স্বীয় বিবেক পক্ষ থাকা মানেই আপনার জীবনের স্বার্থকতা। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত তার স্বীয় স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়া। স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া, সফলতা আসুক কিংবা নাই আসুক তবে ব্যর্থতা শতভাগ আসবেনা এটা নিশ্চিত। আমাদের সকলের প্রিয় মাতৃভূমি এই বাংলাদেশ। প্রায় দুইশত বছরের বিৃটিশ শাসন, শোসন এবং ২৪ বছরের পাকিস্থানী শাসন শোসন ও নির্যাতনের পর একটি ক্ষতবিক্ষত জাতী একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ১৯৭১ সালের নয় মাসব্যাপী চলা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেদিন আমাদের সম্মিলিত জাতীয় স্বপ্ন একীভ’ত হয়ে একই স্রোতধারায় এসে মিলিত হয়েছিল। সেদিন আমাদের স্বপ্ন ছিল মহান স্বাধীনতার স্বপ্ন। সেদিন আমাদের স্বপ্ন ছিল পরাধীনতা, শাসন, শোসন, জুলুম ও নির্যাতন থেকে মুক্ত হওয়ার স্বপ্ন। যেদিন আমরা সমগ্র জাতীর প্রতিটি মানুষ হয়তো আলাদা আলাদাভাবে বা বিছিন্নভাবে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলাম। তবে আমাদের সকলের স্বপ্নের লক্ষ্যেমাত্রা একই ছিল। আর আমাদের সমগ্র জাতীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সেদিন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আমাদের মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বুঝতে পেরেছিলেন বাঙ্গালী জাতীর স্বপ্ন দর্শনের বাস্তবতা। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন তার প্রিয় বাঙ্গালী জাতী কী চায় বা চাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যেদিন বুঝতে পেরেছিলেন যে তার জননী জন্মভ’মি আর একমিনিটের জন্যও পরাধীন থাকতে চায় না। সেই চিন্তা চেতনা থেকে একসময় বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালী জাতীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। একসময় স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রাদেশিক স্বায়ত্ব শাসনের। পরে স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলার। তাইতো ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ঘোষনা করেছিলেন “ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বঙ্গবন্ধু সেদিন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রæর মোকাবিলা করতে সমগ্র বাঙালী জাতীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সমগ্র বাঙালী জাতীও বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে এরকম একটি ঘোষনা আসায় সেদিন বাঙালী জাতী উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলো। সেদিন বাঙালী জাতী বুঝতে পেরেছিলো তারা তাদের স্বপ্নের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। স্বপ্ন এখন তাদেরকে হাতছানি দিচ্ছে। এখন স্বপ্নের বা¯Íবতা অর্জন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। বা¯Íবেও তাই হয়ে গেলো। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের মাত্র ১৮ দিনের মাথায় আবার তারই দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা। আর সেই ঘোষনা দেওয়ার ঠিক নয় মাসের মাথায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং নয় মাসের রক্তÿয়ী যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে অবশ্যই বাংলা সাড়ে সাতকোটি মানুষের স্বপ্ন কাজ করছিলো। আর সেই স্বপ্ন বা¯Íবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা অর্জনের চলিøশ বছর পরও আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেই চলেছি। আমাদের স্বপ্নের শেষ ঠিকানা বলতে কিছু নেই। তবে আপাতদৃষ্টিতে আমাদের স্বপ্নের শেষ ঠিকানা বলতে আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাকেই সুনির্দিষ্ট করেছি। আমরা এদেশের নতুন প্রজন্ম। আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। আমরা স্বপ্ন দেখি একটি আলোকিত বাংলাদেশের। আমরা স্বপ্ন দেখি অসম্প্রদায়িক, সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলার। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন বাংলাদেশের যে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির ধারায় নেতৃত্ব দেবে। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন বাংলাদেশের যে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে যারা বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম কিন্তু সেই স্বপ্ন বা¯Íবায়নের ধারায় তাদের প্রতিদিনের পথ চলবে। যা আমার খুব ভালো লাগে। আমার অত্যন্ত ভালো লাগে যখন দেখি এদেশের নতুন প্রজন্মের চোখে, মুখে,বুকে, চেতনায় ও অস্থিত্বের গভীরতায় একটি আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্ন। তাদের চিন্তা চেতনায় শুধু প্রিয় মাতৃভ’মি বাংলাদেশকে খুজে পাওয়া যায়। আমাদের নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের মধ্যে অমিত সম্ভাবনা খুজে পাওয়া যায়। নতুন প্রজন্মের খুব কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য আমার হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানতে চাই তাদের স্বপ্নের কথা। আমি দেখতে পাই তাদের ব্যাক্তিগতভাবে বড় হওয়ার স্বপ্নের পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে তারা দেখে প্রিয় মাতৃভ’মিকে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন। তারা কোনভাবেই প্রিয় মাতৃভ’মিকে অবহেলিত ও পিছনে রেখে নিজে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেনা। তাদের চিন্তা চেতনায় রয়েছে এক বুক ভরা বাংলাদেশ। ওরা প্রিয় মাতৃভ’মি বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চায় তাদের স্বপ্নের কাছাকাছি। আগে আমরা যখন শৈশবে ছিলাম, আমরা দেখতাম সেই সময় আমাদের দেশের মানুষ একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলে শুধু ইন্ডিয়া, পাকিস্থান, বলে চিলøাচিলিø করতো। আমি নিজেও করতাম। কিন্তু আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলে এখন বাংলাদেশ বলেই চিলøাচিলিø করে। বাংলাদেশের বিজয়ের জন্য সবাই প্রার্থনা করে। মাঝে মাঝে নিজে করি এবং অনুশোচনা করি এজন্য যে আমরা এই বাঙালী জাতী অতি আবেগপ্রবন একটি জাতি। আমরা প্রায়ই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুণকীর্তন করে বর্ণনা করি, চিলøাচিলিø করি। অথচ ঐ সমস্থ দেশের কি এমন একটি মানুষ পাওয়া যাবে যে বাংলাদেশকে নিয়ে সারা জীবনের জন্য এক মিনিটের জন্য ভেবেছে? বিষয়টা আমাকে মারাত্মকভাবে ভাবায়। ওরা আমাদেরকে নিয়ে ভাবেনা। আমরাই ওদেরকে নিয়ে ভাবি। আমার তো মনে হয় পৃথিবীর এমন একটি দেশও খুজে পাওয়া যাবে না যে, যে দেশের পাঠ্যপু¯Íকের ভেতরে বাংলাদেশের নাম আছে। অথবা বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের নিয়োগ পরীÿা অন্ততপÿে ১ মার্কের একটি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন করে। অথচ আমাদের দেশের পাঠ্যপু¯Íকের ভিতরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাম রয়েছে। রয়েছে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অর্থনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সর্ম্পকে ব্যাপক বিষয় বর্ণনা। অথচ তাদের আলোচনায় আমরা নেই। তাদের চিন্তাধারায় আমরা নেই। বিষয়টি আমাকে মারাত্মকভাবে দুঃখ দেয়। স্বাধীনতা অর্জনের ৪৩ বছর পরও কেন বিশ্বের সকল রাষ্ট্র আমাদেরকে ভালোকরে চিনবেনা? আর এই ব্যার্থতার দায়ভার কী আমাদেরকে বহন করতে হবেনা। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বির্নিমানের পথে বাধা হিসেবে আমাদের নিজেদেরই সৃষ্টি কিছু কারন দায়ী নয় কী? যে বা যারা দেশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে তাদের ব্যার্থতা এÿেত্রে অনেকাংশে দায়ী নয় কী? বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অবশ্যই এগিয়ে যাচ্ছে। তবে যে, ধারায় এগিয়ে যাবার কথা সে ধারায় কি এগিয়ে যাচ্ছে?
আমাদের জি ডি পি , জি এন পি এবং প্রবৃদ্ধির সূচক যেভাবে বাড়ার কথা সেভাবে বেড়ে উঠছে কি? উত্তর অবশ্যই না। তাহলে আমার প্রশ্ন হলো আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকটা কি? আর এই প্রতিবন্ধক পুরোপুরি বিশেøষণ করলে তার বা তাদের কারণ ও স্বপÿে বিপÿে যুক্তি প্রদর্শন করতে করতে শেষ হবেনা। কত কারণ লিখবো। আর কত যুক্তিই বা প্রদর্শন করবো। প্রিয় বাংলাদেশকে নিয়ে অসংখ্য অগণিত শুভ্র স্বপ্ন দেখি বলেই এই লিখালিখিটাকে এক ধরনের দায়বদ্ধতা মনে করেই লিখা। আমার কথা হলো হয়তো আমরা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখে যেতে পারবো না বা উপভোগ করতে পারবো না। কিন্তু আজ থেকে একশ বছরের পরবর্তী প্রজন্ম যারা এই বাংলাদেশে বসবাস করবে তাদের যেন আমাদের মতো এতো স্বপ্ন দেখতে না হয়। আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজই যেন হয় ভবিষ্যত বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনার দোয়ার খোলার লÿ্য।ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যে তাদের জন্মের জন্য কোন ধরনের আÿেপ করতে না হয়। তারা যেন কোন ভাবেই আমাদেরকে তাদের ব্যার্থ পূর্বসূরী মনে না করে। আমাদের সকল স্বপ্ন ও স্বপ্ন বা¯Íবায়নের লÿ্যে সকল কাজে অবশ্যই আমাদের নিজেদের কথা চিন্তার পাশাপাশি অবশ্যই ভবিষ্যত বাংলাদেশের কথা চিন্তা করতে হবে এবং ভাবতে হবে। আমরা স্বপ্ন দেখি আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা হবে শ্বাসত সুন্দর। কারন একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সুশৃঙ্খলার উপর দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অনেকাংশে নির্ভর করে। এখন প্রশ্ন হলো স্বাধীনতার ৪৩ বছর অতিবাহিত হবার পরও কি আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও কাঠামো কি আমাদের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কি আমাদের সকল প্রত্যাশা সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছেন? স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৪৩ বছর পর আমাদের দেশবাসী আজকের এ প্রশ্ন যদি বিশেøষণ করি তাহলে কি দাড়ায়? আমরা যদি আমাদের দেশের বিগত ৪৩ বছরের রাজনীতি বিশেøষণ করি তাহলে আমরা অনেক ব্যার্থতাই খুজে পাই। আমাদের জাতীয় রাজনীতির জীবনের প্রথম ব্যার্থতা হলো আমরা আমাদের যখন স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনককে তার যথাযোগ্য সম্মান দিতে পারিনি। আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে ব্যাক্তিটি তার জীবন যৌবনের বেশিরভাগ সময় ব্যায় করেছেন এবং পাকিস্থানের অন্ধকার কারাগারে নির্যাতিত নিপীড়িত ও নিÿেপিত হয়েছিলেন সেই মহান নেতা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু আমরা যথাযথভাবে দিতে পারিনি। একটি যুদ্ধবিদ্ধ¯Í জাতী পূণ:গঠনের লÿ্যে যে নেতা অ¤øান ও নিরলস পরিশ্রম করে কাজ করে যাচ্ছিলেন সেই মহান নেতা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ভোররাতে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর এদেশীয় প্রেত্মারা। যে নেতার চোখে, মুখে, বুকে, আত্মপ্রত্যয়ে ছিলো এই অবহেলিত বাঙালী জাতীর জন্য একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, সেই নেতা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করতে এই কুলাঙ্গারদের হাতটা কি একটুও কাপেনি ! প্রায়ই এই প্রশ্নজাগে এবং হৃদয় ÿতবিÿত হয়ে যায় । বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রায় দেড়যুগের সেনা শাসন। অনেকে দাবী করেন এই সময় গণতন্ত্র প্রতিষ্টিত হয়েছে। এÿেত্রে আমাদের দেশের হাইব্রিড কিছু বুদ্ধিজীবীই বেশি বলে থাকেন। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট থেকে কোন ধরনের গণতন্ত্র দেশের মাটিতে সুপ্রতিষ্টিত হতে পারে তা যেকোন সচেতন বিবেকবান মানুষই ভালো বলতে পারে। যাই হোক প্রায় দীর্ঘ দেড় যুগের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারী নির্দলীয় নিরপেÿ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এদেশের মাটিতে প্রথম সত্যিকারের অর্থে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলো। দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীদল এই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে সরকার গঠন করে এবং ÿমতাসীন হয়। দেশের জনগনের ম্যান্বেট নিয়ে সে সময়কার সরকার ভালোর পথেই হাটছিলো। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সে সময়কার সরকার অশেষ অবদান রেখেছে তা অবশ্যই অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই সময় মাগুরায় একটি প্রহসনমূলক উপনির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রæয়ারী এ দেশের মাটিতে একটি প্রহসনমূলক জাতীয় নির্বাচন দিয়ে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানের লÿ্যে চলমান অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করা হয়নি কি? রাজনীতি কি শুধু শুধুই ক্ষমতার জন্য ! যদি তাই না হতো তাহলে এমন নির্বাচন দেওয়ার প্রয়োজনটাই বা কি ছিলো? এই সকল বিতর্কিত নির্বাচন দিয়ে প্রতিপÿকে পথ দেখিয়ে দেওয়া নয় কি? ভোটার বিহীন ১৫ই ফেব্রæয়ারীর নির্বাচনের মাত্র দেড় মাসের মাথায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন বি এন পি সরকারের পতন হয়। অতপর ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্টিত নির্বাচন এদেশের মাটিতে অনুষ্টিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্টতা লাভ করে এবং জাতীয় পার্টি, জাসদ সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই সরকার ক্ষমতাসীন ছিল। ঐ সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি, ভারতের সাথে গঙ্গাচুক্তি, পারমানবিক বোমা নিরস্ত্রকরণ চুক্তি সহ বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্র্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশ সই করে, যা আমাদের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে। এছাড়া এ সময় দেশের অর্থনীতির সূচক ছিলো ইতিবাচক। সবমিলিয়ে তৎকালীন সরকারের দেশ পরিচালনার নীতি ছিলো আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশের গঠনের লক্ষ্যে পরিচালিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার অধীনে নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে এবং সরকার গঠন করে। দীর্ঘ সামরিক শাসনের কালো অধ্যায়ের পর গণতন্ত্রের অভিযাত্রার সূচনার পর মাত্র দশ বছরের মাথায় এই সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশের মাটিতে শুরু হয়ে যায় গনতন্ত্র এবং গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে ধংস করার প্রক্রিয়া। দেশে মৌলবাদী জঙ্গিদের দৃত উত্থান বাড়তে থাকে। এই সময়কার সবচেয়ে বেদনা বিদুর দিন ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখহাসিনা যখন ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগের শান্তিপূর্ণ জনসভায় ভাষন দানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহুর্তে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামীলীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে জঙ্গিরা। আওয়ামীলীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ঐদিন মানবপ্রাচীর তৈরী করে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার জীবন রক্ষা করে। তবুও রক্ষা হয়নি আওয়ামীলীগ নেত্রী আইভী রহমান সহ ২৩টি তাজা প্রাণের। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিনত হয় একটি ধংসস্থুপে। সারা বাংলাদেশের মানুষ সেদিন ক্ষেভে উত্থান হয়ে উঠেছিলো আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম জঘন্যতম। ঐ দিনের কথা আজো ভুলিনি এবং ভুলবোনা কখনো। সেই নেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মাটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্টার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বলে এদেশের মানুষ মনে করে। সেই নেত্রীকে সম্পূর্ণভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে যখন জঙ্গিরা গ্রেনেড নিক্ষেপ করলো। তখন কোথায় ছিলো এদেশের গণতন্ত্র, কোথায় ছিলো তৎকালীন সরকার এবং কারপÿে ছিলো তা সময় ও বাস্তবতার পরিবর্তনে আজ দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছ পানির মতো হয়ে গেছে। গ্রেনেড হামলার পরবর্তীতে জজ মিয়া নাটক এখনো দেশবাসী ভুলেনি। যে বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা এতো স্বপ্ন দেখি, যে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্নেহময়ী জননীর চেয়েও আমরা আপন মনে করি, সেই মাতৃভূমির স্বপ্ন বা¯Íবায়নের অগ্রযাত্রায় এই ন্যাক্কারজনক গ্রেনেড হামলা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লÿ্যে নয় কি? ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি বা আমাদের মতো মুক্তিয্দ্ধু পরবর্তী প্রজন্মের কারোরই হয়নি, কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ শে আগষ্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য নিÿেপিত গ্রেনেড হামলা দেখার দূর্ভাগ্য আমি সহ সমগ্র দেশবাসীর হয়েছে। ১৬। এছাড়া এই সময়ে দেশে একযোগে নিরিহ বোমা হামলার কথা দেশবাসীতো এখনো ভুলেনি। এখনো ভুলা যায়না হবিগঞ্জের বৈদ্যনাথ তলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ নেতা শাহ এ এম এস হত্যা, গাজীপুরের আওয়ামীলীগ নেতা ও সংসদ আহসান উলøাহ মাষ্টার হত্যাকান্ড, খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম হত্যাকান্ড, নাটোরের সাবেক সংসদ ও আওয়ামীলীগ নেতা মমতাজ উদ্দিন হত্যাকান্ড সহ আরো কত নাম না জানা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে এদেশের মাটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতনের চিত্রকি কখনো এ হৃদয় থেকে মুছা যাবে। দেশ ছেড়ে যেদিন জীবন রÿার তাগিদে যে হাজার হাজার সংখ্যালঘু চলে গেছে তার ÿত কি এ হৃদয় থেকে কখনো শুকাবে ? ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশ ছেড়ে যাওয়া সংখ্যালঘুদের করুন চিত্র আমি দেখিনি। তবে আমাকে দেখতে হয়েছে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন, নিপিড়ন এবং দেশ ছেড়ে চিড়তরে চলে যাওয়ার করুন চিত্র। আমাকে দেখতে হয়েছে তৎকালীন সময়ে সারা বাংলাদেশে হিন্দু মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চিত্র, আমার প্রশ্ন হলো এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কি এই প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে স্বপ্ন দেখেনি। আমার প্রশ্ন হলো হাজার বছর এদেশের মাটিতে যারা বসবাস করে আসছে সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কি এদেশের মাটিতে বসবাসের কোন অধিকার নেই। যখন দেখি আমাদের চোখের সামনে এরকম একটি সংখ্যালঘু পরিবার নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে তখণ বুকের ভিতর থাকা চেতনা কেন জানি থমকে দাড়ায়। কেন জানি এই চেতনাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে ইচ্ছে করেনা। কেন জানি প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন ভেঙ্গে ÿত বিÿত হয়ে যায়। যখন আমার বা আমাদের চোখের সামনে আমারই একটি ভাই নির্যাতিত, নিপীড়িত হয় এবং নির্মম চিত্র দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, তখন আমার স্বপ্ন ও চেতনাকে নিয়ে কোথায় দাড়াতে পারি? স্বপ্ন ও চেতনা তো তখন বিবেকের কাঠগড়ায় আসামী হয়ে দাড়ায়। প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে দেখা নিজের সুন্দর শুভ্র স্বপ্নকে যেন কে বা কারা কেড়ে নিয়ে যেতে চায়। আমার স্বপ্ন সাধনার কি এভাবে সলিল সমাধি হবে? আমিতো কখনো চাইনা বাংলাদেশকে নিয়ে দেখা আমার শুভ্র স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটুক। আজ যখন দেখি নিজদেশে পরবাসী ফিলি¯িÍনীদের উপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মদদপৃষ্ট ইসরাঈলী নরপিশাচরা বর্বর হত্যাকান্ড চালাচ্ছে তখন সারাদেশবাসীর মতো আমিও ধীক্কার জানাই। যদিও এই বর্বর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদের ভাষা খুজে পাইনা। তবুও ধীক্কার জানিয়ে কিছুটা হলেও আত্মতৃপ্তি পাই। তবে এÿেত্রে অতি একটি দুঃখবোধের কথা বলতে খুব বেশী ইচ্ছে করছে। যেমন: আমার দেশে যখন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতিত নিপীড়িত হয়ে নিজ ভিটেমাটি ছেড়ে পরবাসী হয় তখন কেন দেশজুড়ে এরকম প্রতিবাদের ঝড় উঠেনা। কেন নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি যে অবিচার করা হচ্ছে তার জন্য রাজপথে মাইক টাঙিয়ে মরা কান্না করা হয়না। কবি বলেছিলেন “ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” মানুষ যদি সত্যিই সত্য হয়ে থাকে তাহলে মানুষে মানুষে এতো পার্থক্য কেনো? আমরাতো মনে করি পৃথিবীর সকল শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষ যদি একই কাতারে হবার কথা থাকে, তাহলে কেন প্রতিবাদের ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্যাতিতদের জাতী বর্ণ ধর্মের পরিচয় আরো শনাক্ত করা হবে। কিন্তু আমরাতো দেখেছি তা হচ্ছে বিবেক যখন অপমৃত্যুর পথে ধাবিত হয়। আমার প্রশ্ন হলো এদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ব্যাতিরেকে কি স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্নিমান করা যাবে? এ ব্যাপারে আমি ব্যাক্তিগতভাবে এর চেয়ে বেশী কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছিনা। জাতীয় বিবেকই বলে দেবে আমার কথাগুলো সঠিক কিনা। আমরা শৈশবে যখন ছিলাম তখন সেই সময়ের বয়োবৃদ্ধারা আমাদেরকে বানিয়ে বানিয়ে রুপকথার গল্প বলতেন। একদিন রুপকথার গল্প না শুনলে ঘুম আসতোনা সে সময়। একটি রুপকথার গল্প শুনতে কত কত কাকুতিই না করতাম বয়োবৃদ্ধাদের কাছে। কত সুন্দরতা ও সৌন্দর্য্যই না ছিলো এই সকল গল্পগুলির মধ্যে। একটির পর একটি শুনতাম। একটুও বিরক্তি লাগতোনা। বরং মনের মধ্যে বারংবার ইচ্ছা থাকাতো শুধু রুপকথার গল্প গুলি শুনি। মাঝে মাজে মনে মনে ভাভি, হয়তো এই সকল রুপকথার ভালোবাসার, ভালোলাগার স্বপ্ন হয়তো আমাকে আমাদেরকে উন্নত স্বপ্ন দর্শনে উদ্ভুদ্ধ করছে। রুপকথার গল্পের সেই রাজপুত্রের মতো নিজেও হয়তো মাঝে মাঝে বা¯Íবের রাজপুত্র হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখন আর এসব ভালোলাগা, ভালোবাসা ও আত্মতৃপ্তির গল্পগুলি কোথাও শুনা যায় না। সময়ের ব্যবধানে এ কালের অগ্রযাত্রায় এই অসাধারণ হৃদয়সাথী গল্পগুলি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আমি আমার শৈশবে যেসব গল্পবাজদের কাছ থেকে এসব মনমাতানো গল্প শুন্যতায় আজ আর তারা কেউ ই বেচে নেই। তবে তাদের গল্পবলার স্মৃতি, বলার কথা যোগল এখনো আমাকে স্বপ্ন দেখার পথে অনুপ্রেরণা যোগায়। কালের বিবর্তনে এসব গল্পও গল্পবাজরা হারিয়ে গেছেন । এটাই সত্য এবং এটাই বাস্তবতা। তবে গল্পবলা আজো চলছে। তবে আগেকার গল্প এবং বর্তমান গল্প, তাদের মানের আদর্শ ও মানের মধ্যে রয়েছে বিশাল বিস্তর ব্যবধান। আগেকার গল্পবলার ক্ষেত্র ছিলো একান্ত পারিবারিক পরিবেশে, আপনালয়ে। সর্বচ্চ গল্প বলা ও শোনার ÿেত্র ছিলো গ্রামের নির্মল বাতাস সমৃদ্ধ সবুজঘেরা কোন প্রাকৃতিক পরিবেশে। যেখানে সবাই মিলেমিশে গল্পবাজের মুখের দিকে তাকিয়ে মজার মজার গল্প শুনতো এবং আত্মতৃপ্তি পেতো। কিন্তু আজকের যুগেও গল্প বলা চলে। তবে আজকের দিনে গল্প বলা হচ্ছে আমাদের রাজনীতির ময়দানে। আগেকার যুগে সর্বোচ্চ শ্রোতা ছিলো ১০ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত। এখনকার গল্প সমগ্র দেশের মানুষ একসাথে শুনে। আগেকার গল্পে রুপকথার রুপকথা হিসেবেই ছিলো। তা কখনো বা¯Íবরুপ পায়নি। এখনকার গল্পে রুপকথা আর রুপকথা থাকেনা। এখনকার গল্পে রুপকথাকে বা¯Íবরুপে দেওয়া হয় এবং বা¯Íব বানিয়ে মাঠে ময়দানে বলা হয়। আগেকার গল্পে সমাজে শান্তি সৃষ্টি হতো, মানুষ আত্মতৃপ্তি পেতো, কিন্তু বর্তমানকালে আজকের দিনের গল্পে সমাজে চির অশান্তি সৃষ্টি হয়। ক্ষমতার রাজনীতিতে এরকম মিথ্যা বানোয়াট গল্প যেন বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। আগেকার গল্পের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতো। এখনকার গল্পে অশ্রদ্ধা থাকে এবং বমি ভাব হয়। এইতো কিছুদিন আগে এরকম একটি পরিকল্পিত রুপকথার গল্প বলে সারা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছিলো।্ “ এই নিয়েছে এই নিয়েছে কান নিয়েছে চিলে” দোহাই দিয়ে গত বছর একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোত্র সারা দেশে নৈরাজ্য ও অশান্তি সৃষ্টি করছিলো। সারা দেশে মহান মুক্তিযোদ্ধের অনেক স্থাপনা ধংস করেছিলো এই প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী, গত বছরের যে আমাদের জাতীয়তায় ঐতিহ্যবহনকারী সুদীর্ঘ ৪০০ বছরের প্রিয় রাজধানী ঢাকাকে ধংসস্থুপে পরিনত করেছিলো ঐ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। এটাতো আমার মুখের বানিয়ে বলা কোন কথা নয়। ঐ সময়তো ঐ ধংসযজ্ঞের সারাদেশের গণমাধ্যমগুলি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ও প্রকাশিত হয়। এই ধংসযজ্ঞের মানেটা কি ছিলো। যারা এই ধংসযজ্ঞ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণে করেছিলো তাদের প্রতি আমার ততোটা দুঃখবোধ নেই। কিন্তু দুঃখবোধ এবং ÿেত্র তাদের প্রতি যারা সম্পূর্ণ জেনে শুনে বুঝে এই আবেগ প্রবন মানুষগুলিকে ধংসযজ্ঞে ছড়িয়েছিলো। রাজধানী ঢাকার কতটি সবুজ বৃক্ষ কেটে যে সেদিন উজাড় করা হয়েছিলো। আজো দেশবাসীর তা মনে আছে। সেদিন অপরাজনীতির হিংস্র থাবার শিকার হয়েছিলো আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা। শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য কি এই অপরাজনীতি যুগের পর ঘৃণ এভাবেই চলতে থাকবে এই বাংলার মাটিতে! ক্ষমতাকেন্দ্রিক এই অপরাজনীতি যে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবয়দনের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে বা করছে তা কি আমাদের যথাযথ কর্তৃপÿ যথাযথভাবে বুঝেন, জাতীর বিবেকের কাছে আমার এই প্রশ্ন থাকলো। আমিতো দেখছি আমাদের রাজনীতির কর্তা ব্যাক্তিরা বেয়াদবীর রাজনীতি শেখানোর আদর্শে উদ্বৃদ্ধ করছে। অথছ এই রাজনৈতিক শিক্ষা যে ভবিষ্যত বাংলাদেশের অস্থিত্বের জন্য ভয়াবহ হবে তা কি উনারা একবারের জন্য হলেও ভাবেন? যদি ভাবতেন তাহলে হয়তো এমনটি হতোনা। আজ উনাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দেশের বাইরে বড় হচ্ছে। বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে দেশে আসলে হয়তো উত্তরাধিকারের সূত্রে পিতার সিংহাসনের সিংহপতি হচ্ছে। অপরদিকে আমার দেশের ধূলাবালি কাদা পায়ে মেখে বড় হয়ে উঠা বিশুদ্ধ বাংলার বিশুদ্ধ সন্তানটি দেশের অপরাজনীতির শিকার হয়ে তার জীবনের সঠিক গতিপথ বিচ্যুত হচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ লেখাপড়া শেষ করছে ঠিকই, কিন্তু যে কোন জাত্রি তার সঠিক জায়গায় যেতে পারছেনা। অদৃশ্য শক্তি তার প্রাপ্য স্থান দখল করে নেয়। আর একটি বৃহৎ অংশ অপরাজনীতির কবলে পড়ে লেখাপড়ায় কলেজের গন্ডি কেন জানি আর পেরুতে পারেনা। নতুন প্রজন্মের এই অংশটির জন্য আমার অনুশোচনা হয়। কেন জানি বার বার মনে হয় আমার এই ভাইগুলিকে বিপথগামী করা হচ্ছে। কেন জানি বারবার মনে হয় যারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে তাদেরকে একটি দেশপ্রেমহীন চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আমার ভাইটিকে যদি সঠিক আদর্শের ও দেশপ্রেমের রাজনীতির শিক্ষা দেওয়া হতো, তাহলে অবশ্যই সে হরতালের সময় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারতোনা। এই জন্য আমি তাকে দোষী বলবোনা। দোষ বলবো তার কপালের। কারণ সে আদর্শহীন ও দেশপ্রেমহীন ব্যক্তিদের আশ্রয়ে লালিত পালিত ও বড় হয়েছে। ওদের দেওয়া নীতিহীন আদর্শের শিÿিত হয়ে সে আজ এই ধংসাত্বক কাজটি করছে। সে যদি বুঝতো যে একজন মানুষ হিসেবে এটি তার কাজ না, তাহলে অবশ্যই সে সেটি করতোনা। এই ছেলেটির ভিতরে থাকা মানবতা নামক কোমল হৃদয়কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে ঐ চরিত্রহীন মানবতাহীন লম্পটদের দল। যে ছেলেগুলিকে দিয়ে এই জ্বালাও, পোড়াও ধংসযজ্ঞ করানো হচ্ছে এরা কি এক সময় এই জ্বালাও পোড়াও এর স্বপ্ন দেখছিলো? ওরা যখন শৈশব কৈশর ছিলো তখন কি মানুষের মতো মানুষ হবার স্বপ্ন দেখেনি? অবশ্যই দেখেছিলো। কিন্তু তাদের স্বপযাত্রার যাত্রীবাহী গাড়িটি কোথায় একটি জায়গায় এসে জানি দূর্ঘটনার পতিত হয়েছে। আজ তারা একধরনের লাইফ সাপোর্টে বেচে আছে। কিন্তু এটা কি সত্যিকারের একটি জীবন হতে পারে ? 
লেখক পরিচিতি: মিলন কান্তি দাস বি কম সম্মান, এম.কম হিসাববিজ্ঞান মোবা ঃ ০১৭৮৭-১৪৩৭৪৯

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়