Saturday, June 20

মাহে রমজানে করণীয়


মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ শেখ: আল্লাহ তায়ালা ধরণীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন সুনিপুণভাবে। সৃষ্টির রহস্য হিসেবে তিনি কোনো কোনো সৃষ্টিকে তার অন্য সৃষ্টির ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন নানা বৈশিষ্ট্যদানের মাধ্যমে। যেমন তিনি বলেন, ‘আপনার প্রভু যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা নির্বাচিত করেন। নির্বাচন করা তাদের হাতে নয়। আল্লাহ মহাপবিত্র এবং তারা যা কিছু শিরক করে তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে।’ (সূরা কাসাস : ৬৮)। সৃষ্টির মাঝে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে বানিয়েছেন সবার সেরা করে, ফেরেশতাদের মাঝে হজরত জিবরাঈল (আ.) কে অন্য ফেরেশতাদের ওপর প্রাধ্যান্য দিয়েছেন। সময়ের ক্ষেত্রে জুমার দিনকে সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অনুরূপ স্বীয় বাণী অবতীর্ণ করার ধারা শুরু করার মধ্য দিয়ে রমজানুল মোবারককে বছরের অন্যসব মাসের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। হাদিসের ভাষায় যে মাসকে বলা হয় ‘সাইয়িদুশ শুহুর’ বা মাসগুলোর সর্দার। (তাবরানি : ৯০০০)। মুসলমানদের কাছে এ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, একদা শাবান মাসের শেষ দিনে মহানবী (সা.) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, ‘হে লোক সবাই! তোমাদের কাছে একটি মহান ও বরকতময় মাস আগমন করছে। যাতে এমন একটি রজনী রয়েছে যার মর্যাদা হাজার মাস অপেক্ষা বেশি। এ মাসে রোজা পালন করাকে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন এবং তারাবি পড়াকে করেছেন নফল (ফরজের অতিরিক্ত)। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ সম্পাদন করবে সে অন্য সময়ে একটি ফরজ সম্পাদন করার সমান সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব লাভ করবে। এটি সবরের মাস। আর সবরের পুরস্কার একমাত্র জান্নাত।’ (বায়হাকি : ১৯৬৫)। তাই জীবন গঠনে ও জীবন সংশোধনে এ মাস মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসে এ মাসের শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্বের কথা ঘোষিত হয়েছে বারবার। যেমন- (১) এ মাসকে আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাজিলের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রমজান মাস, যাতে মানুষের পথপ্রদর্শনের জন্য স্পষ্ট হেদায়েত ও সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী হিসেবে কোরআনকে নাজিল করা হয়েছে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এভাবে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বাণী অবতীর্ণ করার মাধ্যমে রমজানকে মর্যাদা দান করলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে বছরের সব মাসেই কোরআন নাজিল হতো; কিন্তু সর্বপ্রথম আল্লাহর বাণী নাজিল হয়েছিল রমজান মাসেরই লাইলাতুল কদরে। (২) এ মাসে ইসলামের অন্যতম রোকন সাওম পালন করা ফরজ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি এ (রমজান) মাসে উপস্থিত থাকবে সে যেন তাতে সাওম পালন করে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। মূলত এ দুইটি বৈশিষ্ট্য তথা কোরআন নাজিল করা ও সাওম পালন করার বিধান প্রদান পবিত্র রমজানকে সবচেয়ে বেশি বৈশিষ্ট্যম-িত করেছে। আর এ মাসের অন্য যত বরকত রয়েছে তাও এ দুই কারণকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। এমনকি খোদ লায়লাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনী, যাকে পবিত্র কোরআনে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে তাও পবিত্র কোরআন নাজিলের কারণেই। তাই তো মুসলমানরা এ মাসকে সাওম পালন ও কোরআন অধ্যয়নের মাস হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। (৩) হাদিস শরিফে এসেছে, ‘এ মাসের প্রথম ভাগ রহমত নাজিলের, মধ্যভাগ ক্ষমার এবং শেষভাগ জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য।’ ( ইবনে খুজা খুজায়মা : ১৮৮৭)। অর্থাৎ এ সময়ে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত বিশেষভাবে নাজিল হয়। যদিও সবসময়ই তা উন্মুক্ত থাকে। (৪) এ মাসের মর্যাদা বর্ণনা করে অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন রমজান মাস আসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শিকলাবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়।’ (মুসলিম : ২৫৪৭ ও ২৫৪৮)। এছাড়াও পবিত্র হাদিসে এ মাসের বহু ফজিলত ও মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এ মাসে মুসলমানদের করণীয় এবং এ মাস থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টিও বর্ণিত হয়েছে। লেখক : প্রধান মোহাদ্দেস, দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়