Saturday, March 28

চার মাসে ২১ কেজি ওজন কমানোর দাওয়াই


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: আপনি কি জানেন আপনি নিজে-নিজেই আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সক্ষম। বলিউড অভিনেত্রী ভুমি পেদনেকার এ ব্যাপারে তার মাস্টার প্ল্যানটি শেয়ার করে এমনটিই দাবি করছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি সিনেমার প্রচারণা অনুষ্ঠানে সহতারকা আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গে তোলা ভুমি পেদনেকারের কয়েকটি ছবি ইন্টারনেটভিত্তক সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত তার প্রথম সিনেমায় ভুমিকে যে অবয়বে দেখা গিয়েছিল এই ছবিগুলোতে তিনি তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অবতারে হাজির হয়েছেন! চার মাসে ২১ কেজি ওজন কমানোর দাওয়াই সিনেমাটিতে সন্ধ্যা নামক চরিত্রটির রুপদানের জন্য ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার ভুমিকে নিজের ওজন ১৪ কেজি বাড়িয়ে প্রায় ৯০ কেজি করতে হয়েছিল। ওজন বাড়ানোর জন্য সকালের নাস্তায় তিনি পিজা ও উন্নত মোগলাই মেন্যু এবং মিঠাইসহ একপ্রকার ভুরিভোজই করতেন। কিন্তু ওই সিনেমার শুটিং শেষ হওয়ার পর মাত্র চারমাসেই তিনি ২১ কেজি ওজন কমিয়ে সরু কোমর প্রদর্শন করে চলেছেন খুবই সুখি-সুখি ভাব নিয়ে! ভুমি বলেন, ওজন বাড়ানো আমার জন্য তেমন কোনো চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল না। কেননা ছোটবেলা থেকেই আমি ভালো রকম মোটা ছিলাম। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি ব্যাডমিন্টন ও ভলিবল খেলা এবং সাতার কাটায়ও নিয়মিত হন। কিন্তু খাবারের সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্কের কারণে কখনোই মিস চিকনি চামেলি হয়ে উঠতে পারেন নি। ভুমিও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘খাবার আমাকে সুখি করে। আত্মার শান্তির জন্য আমি পছন্দের খাবারটি খেতে কখনোই পিছপা হই না।’ তার বাবা-মা অবশ্য খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে খুবই সাবধানী সংস্কৃতির অনুসারী। তার বাবা এসেছেন মহারাষ্ট্র আর মা এসেছেন হরিয়ানা থেকে। চার মাসে ২১ কেজি ওজন কমানোর দাওয়াই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তাকে আগের চেয়ে ১৪ কেজি ওজন বাড়াতে হয়েছিল। ওই বাড়তি ওজন কমাতে গিয়ে তাকে দুঃসাধ্য সব কর্মপরিকল্পনা করতে হয়েছে। তবে তিনি খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমাতে পারেন নি। ভুমি হেসে বলেন, ‘আমি না খেয়ে থাকতে পারি না। এতে আমার আত্মা কষ্ট পায়। আর তাছাড়া আমি চিকনি চামেলিও হতে চাই না। আমি বরং ফিট থাকাটাই শ্রেয় মনে করি।’ ফলে ধীরে-সুস্থেই ওজন কামনোর যুদ্ধে নামেন ভুমি। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি নিজের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন নি; বরং লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন এনে তিনি ওজন কমান। এতে তিনি ভালো ফলও পান। মাত্র চার মাসেই ২১ কেজি কমিয়ে আনেন তিনি। এখন ছোট বোনদের পোশাকও তার গায়ে আঁটে! কিন্তু কী করে সম্ভব হল? চলুন ভুমির বর্ণনায় জেনে নেয়া যাক... সুস্থ থাকার জন্যই খাদ্যচার মাসে ২১ কেজি ওজন কমানোর দাওয়াই সুস্থ থাকার জন্য ঘরে রান্না করা খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ছোটবেলায়ই পারিবারিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে আমি বিভিন্ন ভেষজ জুসপানে অভ্যস্ত হই। ওজন কমানোর এই চ্যালেঞ্জে আমি সেই পুরোনো অভ্যাসে ফিরে যাই। আমার বাবা সকালের হাঁটাহাঁটি শেষ করে এসেই করলা, নিম ও তুলসি পাতার জুস খেতেন এক গ্লাস করে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এসব জুস একগ্লাস করে খেতেন। সবজি ও ফলের জুস খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারীতা হল ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি এতে ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। বেশিরভাগ মোটা লোকই কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের উদগ্র বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিন্তু চাল ও গমজাতীয় খাদ্যের প্রতি আমার কোনোকালেই আসক্তি ছিল না। তবে আমি রুটি খেতে পছন্দ করি। ফলে আমি ভাতের বদলে রুটিই খাই বেশিরভাগ সময়। আর রুটিতে তেল বা ঘি ব্যাবহারের সময়ও কৃপণ হওয়ার চেষ্টা করি। ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে লম্বা লড়াই করতে হয় আমাকে। সকালের নাস্তায় আমি একটু ভারী খাবার খেতেই অভ্যস্ত ছিলাম। নাস্তার সঙ্গে এক বাটি ফল বা চিনাবাদামের মাখন এবং জেলি টোস্ট বা নুটেলা টোস্ট থাকতো। মাঝে মাঝে রুটি আর চিকেন সসেজও খেতাম। দুপুরের লাঞ্চে স্বল্প তেল-মশলায় তৈরি চিকেন তন্দুরি রোস্ট বা হালকা রসালো চিকেন খেতাম। অতিরিক্ত প্রোটিন এড়িয়ে চলার পাশাপাশি প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর জন্য আমি মাঝে-মধ্যেই কয়েকবাটি ডাল ও দই খেতাম। দুপুরের খাবারের সঙ্গে এক বাটি সালাদ খেয়ে আমি আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বাড়িয়েছিলাম সচেতনভাবেই। আর যদি কখনো পনির খেতে ইচ্ছে জাগতো তখন আমি সকালের নাস্তার সঙ্গে আধা টুকরো পনির খেয়ে নিতাম। সুস্থ থাকতে হলে নিজেকে কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত করা চলবে না বরং অল্প পরিমাণে হলেও খেতে হবে। ডায়েট কন্ট্রোলের পাশাপাশি আমি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়েও সচেতন ছিলাম। কেইল এবং স্পিনাকে প্রচুর পরিমাণ এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে এবং শরীরকে বিষমুক্ত করতে খুবই কার্যকরী। সপ্তাহে পাঁচদিন অ্যালোভেরা জুস পান করতাম আমি যা আরেকটি সুপার ফুড। আর স্পিনাক ও ডিম থেকে ভিটামিন ই-র চাহিদা মেটাতাম। চার মাসে ২১ কেজি ওজন কমানোর দাওয়াই নমনীয় রুটিন ওজন কমানোর জন্য আমি শরীরের উপর অতিরিক্ত কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। কারণ খেলাধুলা করতে গিয়ে আমি বেশ কয়েকটি ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছিলাম। আর তাছাড়া আমার পিঠটাও একটু দূর্বল। সকালে ঘুম থেকেই উঠেই আমি একটা লম্বা হাঁটা দিতাম। হাঁটার মাঝে-মধ্যেই দৌঁড়ও দিতাম। দুপুরে জিমে গিয়ে ১৫ মিনিট আমি হার্টের ব্যায়াম করতাম এরপর ৪০ মিনিট ধরে ওয়েট ট্রেনিং নিতাম। মাঝে-মধ্যে ওয়েট ট্রেনিংয়ের বদলে ফাংশনাল টেনিং নিতাম। এছাড়া আমি পুনরায় ব্যাডমিন্টন ও ভলিবল খেলা শুরু করি। ওজন কমানোর জন্য এর চেয়ে আনন্দদায়ক আর কোনো উপায় ছিল না। আরেকটি ব্যায়াম ছিল গান বাজিয়ে নাঁচা। প্রায়ই বলিউডের আইটেম নাম্বারগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাঁচতাম আমি। দৈনন্দিন রুটিনে হঠাৎ করেই আমূল কোনো পরিবর্তন নয় আপনাদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, ওজন কমাতে গিয়ে হঠাৎ করেই দৈনন্দিন রুটিনে আমূল কোনো পরিবর্তন আনবেন না। কারণ তাহলে দু’দিন বাদেই আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবেন আপনি। আমি হলাম রাতজাগা পাখির মতো। গেম অফ থ্রোন, বিগ ব্যাং থিওরি এবং টু এন্ড অ্যা হাফ ম্যান এই টিভি শো গুলো দেখা শেষে প্রতিদিনই বিছানায় যেতে যেতে রাত ১ টা বেজে যেত। তবে সকাল সাড়ে ৭ টায়ই ঘুম থেকে উঠে হাঁটার জন্য বের হওয়ার অভ্যাস তৈরি করার চেষ্টাও করি। কিন্তু রাতে যেহেতু দেরি করে ঘুমাতাম ফলে প্রায়ই সকালের হাঁটা মিস হয়ে যেত। আর এ কারণেই আমি দুপুরে জিমেও যেতাম। দিনের বেলায় কখনো যদি আমার ঘুম ঘুম ভাব হতো তাহলে আমি ২০ মিনিটের জন্য একটি শক্তিসঞ্চয়ী দিবা নিদ্রা দিতাম। আপনার জন্যও আমার পরামর্শ হল নিজের দেহের কথা শোনার কৌশল রপ্ত করুন। চার মাসে ২১ কেজি ওজন কমানোর দাওয়াই সাড়া অস্বীকার করবো না যে দৈহিক রুপান্তরের ফলে সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগাতে পেরে আমি সত্যিই খুব অভিভুত। তবে আর যাই হোক, যে কোনো রুপেই আমার পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে ভালোবাসবে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আর একটুও অতিরঞ্জিত না করেই বলছি যে, আমাকে আমার পরিবার এমনভাবে লালন-পালন করতো যে আমি নিজেকে আশ-পাশের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি ভাবতে অভ্যস্ত ছিলাম। আর আমি মনে করি ফিটনেসের নতুন লড়াইয়ে নেমে আমার সেই অনুভুতি পুনরায় ফিরে এসেছে এবং কাজেও লেগেছে বেশ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়