Thursday, December 18

গোনাহের তিন আমলনামা


মাওলানা আবদুস সবুর: মুসলমান যা কিছুই করে, ফেরেশতারা তা লিখে রাখেন। লেখার এ আমলনামা তিন ধরনের। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, 'আমলনামা তিনটি।' (মেশকাত : ৫১৩৩)। এক. যে আমলনামার গোনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন না তা হলো_ আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শিরক করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।' (সূরা নিসা : ১১৬)। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করলে আল্লাহ তায়ালা তা বরদাশত করেন না। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে আদম সন্তান! তুমি যদি আসমান ও জমিনের ফাঁকা জায়গা পরিমাণ গোনাহ নিয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করো আর এতে শিরক না থাকে, তাহলে সব গোনাহ ক্ষমা করার জন্য আমি তোমার অপেক্ষা করব।' (তিরমিজি : ৩৪৬৩)। রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত মায়াজ (রা.)-কে বলেছিলেন, 'হে মায়াজ! তুমি কি জান, বান্দার ওপর আল্লাহর কী হক আছে, আর আল্লাহর ওপর বান্দার কী হক আছে?' মায়াজ (রা.) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, 'বান্দা আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে কাউকে শরিক করবে না, এটা আল্লাহর হক। আর বান্দার হক হলো, আল্লাহ বান্দাকে শাস্তি দেবেন না, যদি বান্দা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে।' (মেশকাত : ২৪)। দুই. আল্লাহ তায়ালা এ আমলনামার গোনাহের বিচার করবেন। বিচার করা ছাড়া কাউকে রেহাই দেবেন না। অন্যের ওপর জুলুম করা, কারও অধিকার নষ্ট করা, স্বামী স্ত্রীর হক নষ্ট করেছে, স্ত্রী স্বামীর হক নষ্ট করেছে, কারও সম্পদ জুলুম করে খেয়েছে, এটা বান্দার হক-এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা এটা মাফ করবেন না। এর বিচার করবেন। আল্লাহর কাছে যতই ক্ষমা চাওয়া হোক, আল্লাহ তায়ালা এ গোনাহ ক্ষমা করবেন না। (মেশকাত : ৫১২৮)। কাজেই সদা সচেতন থাকতে হবে, কারও অধিকার যেন নষ্ট না হয়। মনে রাখবেন, পৃথিবীতে শক্তির দাপটে কারও অধিকার নষ্ট করা যাবে, কিন্তু আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা ছাড়বেন না। অধিকার আদায় করে দিয়ে তবে ছাড়বেন। এজন্য কারও উপকার করতে না পারলেও ক্ষতি যেন না হয়, সেই খেয়াল রাখতে হবে। তিন. এ আমলনামার গোনাহের ব্যাপারে আল্লাহ নিজেই সিদ্ধান্ত নিবেন। যাকে ইচ্ছে মাফ করবেন। যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেবেন। এটা হলো, বান্দা আল্লাহর হক নষ্ট করে গোনাহ করেছে। এটার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। চাইলে আজাব দেবেন, চাইলে মাফ করবেন।' (মেশকাত : ৫১৩৩)। আল্লাহর হক নষ্ট করার উদাহরণ, যেমন_ মদ পান করা। নামাজ ছেড়ে দেয়া। রোজা না রাখা। এসব গোনাহের একটি আমলনামা আছে। কাজা কাফফারা আদায়সহ সঠিকভাবে তওবা করলে আল্লাহ তা মাফ করবেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'হে মোমিনরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো_ আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দেবেন এবং দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।' (সূরা তাহরিম : ৮)। শেষ কথা, হাদিস শরিফ অনুযায়ী গোনাহের আমলনামা তিন প্রকার। এক ধরনের গোনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন না। সেটা হলো শিরকি গোনাহ। দ্বিতীয় ধরনের আমলনামা হলো, যার গোনাহ আল্লাহ তায়ালা বিচার না করে ছাড়বেন না। সেটা হলো বান্দার পরস্পরের অধিকার নষ্ট করার গোনাহ। আর তৃতীয় নাম্বার আমলনামা হলো আল্লাহর হক নষ্ট করার গোনাহ সম্পর্কিত। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা নিজেই ফয়সালা করবেন। ইচ্ছে হলে ক্ষমা করবেন। ইচ্ছে হলে শাস্তি দেবেন। তবে যথানিয়মে পবিত্র মনে তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেবেন বলে আশা করা যায়। অনুলিখন : মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়