Friday, November 21

দোয়া কবুলের যত সুসময়


মাওলানা আশরাফুল আলম আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করার জন্য এমন অসংখ্য সময় ও সুযোগ আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো। কখন দোয়া কবুল হয়? রাতের শেষ তৃতীয়াংশ : প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশেই দোয়া কবুল হয়। শুধু শবেবরাত, শবেমেরাজ বা শবেকদরে নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, 'প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে নিচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, 'কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো।' (মুসলিম : ১২৬৩)। শেষ রাতের যে কোনো একটি সময় : জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, 'রাতে এমন একটি সময় আছে, যে সময়টাতে কোনো মুসলিমের এমনটা হয় না যে, সে এ পৃথিবী কিংবা পরকালের জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইল, আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে।' (মুসলিম : ১২৫৯)। আজান ও একামতের মধ্যবর্তী সময় : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'আজান ও একামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।' (তিরমিজি : ১৯৬)। জুমার দিন যে কোনো একটি সময় : জুমার দিন এমন অসাধারণ একটি নেয়ামতের সময় আছে, যে সময়টাতে দোয়া কবুল হওয়ার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসূল (সা.) থেকে এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, 'জুমার দিনে একটি সময় আছে, যে সময়টা কোনো মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন। এবং তিনি (রাসূল সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।' (বোখারি : ৫৯২১)। জমজমের পানি পান করার সময় : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'জমজম পানি যে নিয়তে পান করা হবে, তা কবুল হবে।' (ইবনে মাজা : ৩০৫৩)। সেজদার সময় : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সেজদার সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও।' (মুসলিম : ৭৪৪)। রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলে : উবাদা বিন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুলি্ল শাইয়িন কাদির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ' এবং এরপর বলে, 'আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) অথবা আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করে, তাহলে তার দোয়া কবুল করা হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করে, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে।" (বোখারি : ১০৮৬)। ফরজ নামাজের পর : আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ, কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি বললেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পরে।' (তিরমিজি : ৩৪২১)। কদরের রাতে : লাইলাতুল কদর একটি বছরে কোনো মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন, 'আমরা এটিকে (কোরআন) কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম।' বোখারি ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদিসে এ রাতের সব ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে। যেমন রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সঙ্গে, সওয়াবের নিয়তে নামাজ আদায় করবে, তার বিগত দিনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।' (বোখারি : ৩৪)। বৃষ্টি ও আজানের সময় : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া।' (আবু দাউদ : ২১৭৮)। মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তি : মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া_ দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) মুয়াজকে বলেছেন, 'মজলুমের দোয়া থেকে সব সময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।' (বোখারি : ১৪০১)। এছাড়াও মুসাফিরের দোয়া, সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, বিশেষ করে ইফতারের সময়কার দোয়া, অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসারিত দোয়া, জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি দোয়া, আরাফাতের দিনের দোয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার পর সেই ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়