Friday, November 28

সময় ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করা চাই


শায়খ ড. আবদুল বারী আছ-ছুবাইতী: জীবন মানেই সুযোগ, জীবন মানেই অনুকূল সময়। এর ধরনে রয়েছে নিত্যনতুনতা আর বিভিন্নতা। সময় ও সুযোগ অগণিত। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দান করেন। কিছু সুযোগ জীবনের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। আবার যে কাজে লাগায়, কিছু সুযোগ তার জীবনকে পাল্টে দেয়। অন্যদিকে সুযোগ আর অনুকূল সময় বার বার আসে না। পূর্ববর্তী যুগের এক প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বলেন, 'যখন তোমাদের কারও জন্য কল্যাণের দরজা খোলা হয় তখন সেদিকে দ্রুত অগ্রসর হও। কারণ সে তো জানে না কখন তা বন্ধ করে দেয়া হবে।' সুযোগ ও অনুকূল সময় সারাটা জীবন জুড়েই প্রলম্বিত। তাই জীবনের শেষ মুহূর্তেও হতে পারে একজন ব্যক্তির সুবর্ণ সুযোগ। রাসূল (সা.) বলেন, 'যদি কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যায়, আর তোমাদের কারও হাতে একটি চারাগাছ থাকে, সে যদি সক্ষম হয় তাহলে যেন তা মাটিতে রোপণ করে।' রাসূল (সা.) ছিলেন সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ও বাস্তব নমুনা। তিনি সুযোগ ও অনুকূল সময়কে কাজে লাগাতে ছিলেন সদা সজাগ ও সচেতন। মানুষকে আল্লাহর আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ করতেন, ইবাদতের জন্য প্রস্তুত করতেন, দিকনির্দেশনা দিতেন এবং সার্বিক শিক্ষা দিতেন। একবার ইবনে আব্বাস (রা.) রাসূল (সা.) এর সঙ্গে উটের পেছনে বসা ছিলেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, 'হে বালক! তোমাকে আমি কিছু বাক্য শিখাচ্ছি_ আল্লাহকে স্মরণ করবে তাহলে তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করলে তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। যখন কিছু চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।' আবু বকর সিদ্দিক (রা.)ও সুবর্ণ সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়েছেন। ভালো কাজে সর্বাগ্রে উদ্যোগী হয়েছেন। তাই দেখা যায়, তিনি সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তার ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন, 'আল্লাহ তায়ালা আমাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করেছেন, তোমরা বলেছো_ তুমি মিথ্যাবাদী আর আবু বকর বলেছেন_ আপনি সত্য বলেছেন এবং আমাকে তার জান মাল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ওসমান (রা.) সব সাহাবিকে মদিনায় পেয়ে সবার মত নিয়ে সব মানুষকে এক ইমাম ও এক কোরআনের ওপর একত্রিত করেন। আর এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা অনেক অনিষ্ট ও অযথা মতবিরোধ থেকে উম্মতকে বাঁচিয়েছেন। যে সুযোগ পায় এবং সর্বাগ্রে তা কাজে লাগায় সে মর্যাদা ও সম্মানে এবং সার্বিক ক্ষেত্রে অন্যদের ছাড়িয়ে যায়। মোহাজের, আনসাররা তাদের পরে যারা এসেছে তাদের চেয়ে অনেক সম্মানিত। আহলে বদরদের বেলায়ও একই কথা। তারাও অন্যদের চেয়ে সম্মানিত। যারা মক্কা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে, হিজরত করেছে, নিজের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে তারা মক্কা বিজয়ের পরবর্তীদের চেয়ে সম্মানিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'অগ্রবর্তীরা তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যশীল। জান্নাতে আদানের উদ্যানগুলো, তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য থেকে।' (সূরা ওয়াকিয়া : ১০-১৪)। বস্তুত সময় ও সুযোগ অনেক দামি। আর তা অতি দ্রুত চলে যায়। কারণ তা আসে সীমিত সময়ের জন্য। প্রবীণ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জীবনের গতিপথ লক্ষ কর, দেখবে তার জীবনে অবস্থার কত দ্রুত পরিবর্তন হয়। এখন সুস্থ অন্য সময় অসুস্থ। আজ ধনী তো কাল গরিব। এখন নিরাপদ তো কাল ভয়ের মাঝে জীবন। আজ অবসর তো কাল ব্যস্ত। এখন তরুণ দুই দিন পর বৃদ্ধ। এ জন্য রাসূল (সা.) তার উম্মতকে সময় ও সুযোগ চলে যাওয়ার আগে তা কাজে লাগাতে ও ভালো কাজে দ্রুতগামী হওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'পাঁচটি অবস্থা আসার আগে তা কাজে লাগাও_ বৃদ্ধাবস্থার আগে যৌবনের, অসুস্থতার আগে সুস্থতার, অসচ্ছলতার আগে সচ্ছলতার, ব্যস্ততার আগে অবসরতার এবং মৃত্যুর আগে জীবনের।' জীবনকে কাজে লাগাও; কারণ যে মৃত্যুবরণ করে তার আমলের সুযোগ চলে যায়। আর কোনো প্রত্যাশা থাকে না। সুস্থতার গুরুত্ব দাও। কারণ যে অসুস্থ সে দুর্বলতায় অনেক আমল করতে ব্যর্থ। প্রত্যাশা করে, হায়! যদি রোজা রাখতাম, নামাজ আদায় করতাম। কাজের এবং কালচক্রের ব্যস্ততা আসার আগে অবসরতাকে কাজে লাগাও। বৃদ্ধাবস্থার আগে যৌবনকে গুরুত্ব দাও। কারণ তখন শরীর ভারি হয়ে যায়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অক্ষম হয়ে যায়। দান-সদকা করে অর্থবিত্তকে কাজে লাগাও। ধনসম্পদ চলে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার আগে নিজের সর্বশক্তি ব্যয় কর। এমনই হওয়া চাই একজন মুসলমানের অবস্থা। ছোট থেকে ছোট হলেও প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগায়। সহজ হলেও সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। আল্লাহর নবী ইউসুফ (আ.) জেলখানায় অত্যাচার ও একাকিত্বের কষ্ট সত্ত্বেও দ্বীনের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। স্পষ্ট সত্যের দিকে ডেকেছেন। 'হে কারাগারের সঙ্গীরা! পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভালো, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ?' (সূরা ইউসুফ : ৩৯)। তওবা একটি সুবর্ণ সুযোগ। কখন এর সময় চলে যাবে তা কেউ জানে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য।' (সূরা আলে ইমরান : ১৩৩)। সৌভাগ্যবান সে যে তার জীবনের প্রতিটি মৌসুমকে আত্মশুদ্ধি, হৃদয়ের পবিত্রতা এবং জীবনের উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে এবং উচ্চতার দিকে অগ্রগামী হয়। অন্যদিকে যদি প্রতিযোগিতা বিলুপ্ত হয়ে যায়, পরনির্ভরতা ছড়িয়ে পড়ে তাহলে মুসলমান তার সুবর্ণ সুযোগ, সার্বিক শক্তি এবং মর্যাদা হারাবে। দেশ ও জাতির কাছে তার কোনো ফল ও প্রতিক্রিয়া থাকবে না। ২৮ মহররম ১৪৩৬ হিজরি মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষেপিত ভাষান্তর করেছেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের এমফিল গবেষক মহিউদ্দীন ফারুকী

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়