Sunday, November 16

বৃদ্ধাশ্রমে নয়, হৃদয়ের মণিকোঠায় তোমার স্থান


মুশাহিদ দেওয়ান বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি বিনয়ের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। ইসলামের শিক্ষা এটাই। কোরআন ও হাদিসের আলোকে মা-বাবার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সবার উপরে। ইসলাম মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে মায়ের খেদমত করতে বেশি তাগিদ দিয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি প্রিয় নবী (সা.) এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কে আমার থেকে সদ্ব্যবহারের বেশি হকদার! তখন তিনি বললেন, তোমার মা। আগন্তুক ব্যক্তিটি আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার মা। ব্যক্তিটি তৃতীয়বার আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে হকদার? রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, তোমার মা। চতুর্থবার বললেন, তোমার বাবা। (সহিহ বোখারি : ৫৫১৪; জামে তিরমিজি : ১৮১৯)। ইসলামে 'বিররুল ওয়ালিদাইন' (মা-বাবার সেবা করা) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা ও তাদের খেদমত করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব। হুকুকুল ওয়ালিদাইন পালনে ব্যর্থ হলে পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে। খেদমতের কোনো কোনো ক্ষেত্রে মায়ের হক একধাপ এগিয়ে। কেননা, মা গর্ভধারণসহ শৈশবকালে লালন-পালন করতে গিয়ে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেন। আল্লাহ তায়ালা মায়ের কষ্টের কথা পবিত্র কোরআনে এভাবে বর্ণনা করেন, 'আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহ্য করে প্রসব করেছে।' (সূরা আল আহকাফ : ১৫)। গর্ভধারণ করার কয়েক মাস পর থেকে গর্ভস্থিত শিশুর ওজন অনুভূত হতে থাকে। তখন থেকে এবং বাচ্চা প্রসব করার সময় মায়েরা কষ্ট সহ্য করেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তারপর দুধপান করানোসহ শৈশবকালে লালন-পালনে ব্যস্ত থাকেন। বাচ্চার সুখ-শান্তির জন্য নিজের বিশ্রাম-নিদ্রা বিসর্জন দেন। এসব কারণে রাসূল (সা.) হাদিসে (যা উপরে বর্ণিত হয়েছে) একাদিক্রমে তিনবার মায়ের খেদমতের নির্দেশ দিয়ে তারপর শুধু একবার বাবার খেদমতের নির্দেশ দিয়েছেন। তদ্রূপ সূরা লোকমানের ১৪নং আয়াত ও সূরা আহকাফে একইভাবে আল্লাহ তায়ালা বাবার কথা শুধু একবার উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে, মায়ের কথা তিনবার উল্লেখ করেছেন। সুতরাং পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম মিলটি বেশ লক্ষণীয়। পবিত্র কোরআন আমাদের সুন্দরভাবে তাদের সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমার রব আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া আর কারও ইবাদত করো না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তোমার সামনে যদি তাদের মধ্যে কোনো একজন কিংবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের 'উফ' (বা হুঁ) শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে আদবপূর্ণ কথা বলো। তাদের সম্মুখে কাঁধ ঝুঁকিয়ে দাও সদয় বিনয়ে এবং বলো, হে প্রভু! তুমি তাদের প্রতি রহম করো, যেমনিভাবে তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন।' (সূরা ইসরা : ২৩-২৪)। উপরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালার হকের (একমাত্র তারই ইবাদত করা) সঙ্গে মা-বাবার হকের কথা বর্ণিত হয়েছে। মা-বাবার খেদমতের অর্থ হচ্ছে_ বেঁচে থাকা অবস্থায় জানমাল দিয়ে তাদের সেবা-যত্ন করা এবং আন্তরিকভাবে মহব্বত ও সম্মান করা। আর মৃত্যুর পর তাদের জানাজা আদায় করা, রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়