Sunday, August 25

দলে বড় পদ, বাস্তবে নেই কাজ...

ঢাকা: আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য তৃণমূলের মতামত জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করবেন। এজন্য ইতিমধ্যে ৫৬টি গ্রুপ করেছে বিএনপি। প্রতিটির প্রধান করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। তবে এসব গ্রুপে জায়গা হয়নি দলের প্রথম সারির অনেক নেতার।

বাদ পড়াদের মধ্যে দলের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যও রয়েছেন। অথচ তাদের তুলনায় অনেক কনিষ্ঠরা কয়েকটি গ্রুপের প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন। এদিকে জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা নির্বাচনী গ্রুপ থেকে বাদ পড়ায় দলের ভেতরে নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নেতাদের ভূমিকা ও রাজনৈতিক তৎপরতা বিবেচনায় এনে অনেককে মূল্যায়ন করা হয়েছে। যারা গত সাড়ে চার বছরে আন্দোলন কর্মসূচিতে দলের পাশে ছিলেন না তাদের ব্যাপারে খালেদা জিয়া অসন্তুষ্ট। তাই নির্বাচনের আগে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে সফরের জন্য গঠিত গ্রুপে অনেককে রাখা হয়নি।   

দেশের বিভিন্ন জেলা সফরের জন্য গঠিত ৫৬টি গ্রুপ থেকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, স্থায়ী কমিটি সদস্যসহ কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যানও বাদ পড়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণি, এম শামছুল ইসলাম, বেগম সারওয়ারী রহমান। সূত্র জানায়, এক-এগারোর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় নিস্ক্রীয় রয়েছেন আর এ গণি। গত সাড়ে চার বছরে বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচিতে কোথাও দেখা যায়নি তাকে। এসব কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তার ওপর খুশি নন।

এছাড়া সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামছুল ইসলামের বয়স হয়েছে। প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকেন তিনি। তাই চাইলেও দলের কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না তার। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সারওয়ারী রহমানের নিজের কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই। যার কারণে নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে তার খুব একটা গুরুত্ব নেই বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।     

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সারওয়ারী রহমান বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। যখন গ্রুপ করা হয়েছে তখন আমি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলাম। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বিষয়গুলো জানেন। তাই আমাকে ওই সফরে  রাখা হয়নি। ’    

দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, মেজর জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান, অধ্যাপক এম.এ মান্নান, মোশাররফ হোসেন, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার হায়দার আলীরও জায়গা হয়নি ওই ৫৭ গ্রুপে।

এদের মধ্যে মাজেদুল ইসলামের ব্যাপারে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের অনেকের নাখোশ। ১/১১-এর পট পরিবতর্নের পর তিনি সংস্কারপন্থীদের তালিকায় নাম লেখিয়েছিলেন বলে প্রচার রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় তারেক রহমানকে নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন খুলনা জেলা বিএনপির এ সভাপতি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। এসব কারণে দলে তার অবস্থান খুব ভাল নয়।

জোট সরকারের জ্বালানিমন্ত্রী থাকাকালে নাইকোর কাছ থেকে গাড়ি ঘুষ নেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর দলে অনেকটা কোনঠাসা মোশাররফ হোসেন। তিনিও নেই কোনো গ্রুপে। অবশ্য মোশাররফ হোসেনের দাবি, তিনি ইচ্ছে করেই দলের সফর গ্রুপ থেকে দূরে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে থেকেই ওই গ্রুপে না রাখতে অনুরোধ করেছিলাম।’

জানতে চাইলে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে দল থেকে নীলফামারী-সৈয়দপুরের গ্রুপের প্রধান হিসেবে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি অনুরোধ করেছি আমার জেলা সিলেটে আমাকে রাখার জন্য। কারণ আমি সিলেটে থাকলে দলের জন্য ভাল হবে মনে করি। তাই সিলেটে আমাকে দল নেতা রাখা না হলেও সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।’

বাদ পড়াদের তালিকায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি টি এইচ খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, বেগম রাবেয়া চৌধুরী, সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহাও রয়েছেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাবেয়া চৌধুরী জানান, ‘প্রথমে আমাকে গ্রুপে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ঢাকায় যে সভা হয়েছিল সেখানে আমি যেতে পারিনি। আমার পায়ে প্রচ- ব্যথা ছিল। হরতালের সময় ব্যথা পেয়েছিলাম। তবে টিম লিডার হিসেবে না থাকলেও কুমিল্লা দক্ষিণের টিমে আমি আছি।’    

এদিকে প্রথম সারির নেতাদের নির্বাচনী গ্রুপ থেকে বাদ দেয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। অনেকে বলছেন, এসব নেতাদের যদি দলে গুরুত্ব নাই থাকে তবে কেন স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যানের মতো পদে তাদের রাখা হয়েছে? তাদেরকে এসব পদ থেকে সরিয়ে দিলে অনেক নতুন মুখকে সেখানে জায়গা করে দেয়া যেত। যা দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও জোরদার করতে সাহায্য করত।    

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নতুন ধারার রাজনীতির যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের মাধ্যমে এ ধারার প্রকাশ ঘটাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর এজন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৫৬টি গ্রুপ। এ গ্রুপের নেতারা ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবেন। পরে এসব সদস্যরা সফর শেষে দলের চেয়ারপারসনের কাছে প্রতিবেদন দেবেন বলে জানা গেছে।-ঢাকা টাইমসটোয়েন্টিফোর ডটকম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়