Thursday, July 27

‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ উপলক্ষে গণসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান

‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ উপলক্ষে গণসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি লোক হেপাটাইটিস 'বি' অথবা হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত। বুধবার ২৬ জুলাই ২০১৭  'বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস' উপলক্ষে গণসচেতনতার জন্য হেপাটোলজি সোসাইটি ঢাকা, বাংলাদেশ কর্তৃক সকাল ১১টায় ঢাকাস্থ আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মবিন খান, সভাপতি, হেপাটোলজি সোসাইটি। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। হেপাটোলজি সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ডা. মো. মোতাহার হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

বক্তাগণ অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বক্তারা হলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ, বারডেম হাসপাতালের গেস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম আজম, বিএসএমএমইউ'র হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, ডা. মো. গোলাম মোস্তফা এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজসেবক ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম।

বক্তাগণ উল্লেখ করেন যে, ভাইরাল হেপাটাইটিস বাংলাদেশে লিভার রোগের অন্যতম কারণ। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, জন্ডিস নিয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের শতকরা ৪৩ ভাগ হেপাটাইটিস 'ই' ভাইরাস জনিত, শতকরা ২২ ভাগ হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাস, শতকারা ৮ ভাগ হেপাটাইটিস 'এ' ভাইরাস, শতকরা ৩ ভাগ হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাস এবং শতকরা ২৪ ভাগ অন্যান্য কারণ দ্বারা আক্রান্ত।

মহামারী আকারে শুষ্ক মৌসুমে এবং বর্ষা মৌসুমে জন্ডিস এর প্রধান কারণ হেপাটাইটিস 'ই' ভাইরাস। বাংলাদেশে জনগোষ্ঠীর ৪.৪ থেকে ৭.৮ ভাগ লোক দেহে হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসের জীবানু বহন করে। সারা বিশ্বে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে ১% লোকের দেহে 'সি' ভাইরাসের জীবানু রয়েছে। হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' মূলত রক্তরস, দূষিত সিরিঞ্জ, খাতনা, নাপিতের ক্ষুর কিংবা মায়ের থাকলে শিশুর দেহে ছড়ায়। অনৈতিক যৌনমিলনের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাস ছড়ায়।

হেপাটোলজি সোসাইটির তত্বাবধানে সম্পতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলমের নেতৃত্বে একদল গবেষক সারাদেশে হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করতে একটি গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। এটাই প্রথম গবেষণা যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হতে প্রতিনিধিমূলক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা এবং দেশের বৃহত্তম চার বিভাগের অন্তর্গত ৪টি উপজেলা শহরে এই গবেষণা কর্যক্রম পরিচালিত হয়। এই গবেষণা কর্ম ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সর্বমোট ২৭৮২ জন সুস্থ ও স্বাভাবিক কর্মক্ষম ব্যক্তি এই গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সম্মতি প্রদান করেন। তাদের মধ্যে ১৬৯৪ জন পুরুষ এবং ১০৮৮ জন মহিলা ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের বয়সসীমা ছিল ১৮ থেকে ৮৫ বছর এবং তাদের গড় বয়স ছিল ৩৪ বছর।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫.১ শতাংশ হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসে আক্রান্ত। ০.২ শতাংশের দেহে হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাস রয়েছে। অর্থাৎ দেশে ৮০ লক্ষেরও বেশি মানুষ হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসে আক্রান্ত এবং প্রতি ৫০০ জনে একজন হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাস বহন করছে। হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রদুর্ভাবের উপর ভিত্তি করে সারা বিশ্বকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন আক্রান্ত এলাকা। এই গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশ মধ্যম আক্রান্ত এলাকা হেসেবে পরিগণিত হবে। সফল ইপিআই প্রোগ্রামের কারণে হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসের প্রবণতা নিম্নগামী।

হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদী লিভার প্রদাহের অন্যতম কারন। যারা যৌনকর্মী তাদের মধ্যে শতকরা ৯.৭ ভাগ, যার শিরায় মাদকাশক্ত তাদের মধ্যে শতকরা ৮.০ ভাগ হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসে আক্রান্ত রয়েছে। শিশুদের মধ্যে শতকরা ১৫.৪ ভাগ, পল্লী চিকিৎসকদের মধ্যে শতকরা ৩৫.৫ ভাগ হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাস বহন করে। হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাস বহনকারীদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিইস এবং শতকরা ৪১ ভাগ লিভার সিরোসিসে ভোগে। বাংলাদেশ লিভার ক্যান্সারের জন্য হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাস ২৫-৫০% ক্ষেত্রে দায়ী। হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাস আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ করে শেষ তিন মাস থেকে প্রসবকালীন সময়ে ৩১% থেকে ৮৫% ক্ষেত্রে নবজাতকের দেহে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ, মা থেকে সন্তানের এবং অনৈতিক মেলামেশা ইত্যাদির মাধ্যমে হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাস ছড়ায়। হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসের টীকা এখন সর্বত্র পাওয়া যায়। সব বয়সের লোক এই টীকা নিলে হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসের সংক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু যেহেতু 'সি' ভাইরাসের কোন টীকা এখনও আবিষ্কার হয় নি, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সকলের সাবধানতা অবলম্বনের ওপর বক্তারা গুরুত্বারোপ করেন।

প্রখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মবিন খান দীর্ঘ মেয়াদী হেপাটাইটিসের কারণ, 'বি' এবং 'সি' ভাইরাসের প্রদুর্ভাব ও ক্ষতিকর দিকগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, 'বি' এবং 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীগুলো দীর্ঘমেয়াদী লিভার সিরোসিস, লিভার ফেইলিওর, লিভার ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এই রোগ প্রতিকারের বিষয়ে জনসচেতনতার উপর গুরুত্বারাপ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি এবং একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক জনাব মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সকলকে নিজনিজ অবস্থানে থেকে জনসচেতনতার উপর অবদান রাখার আহ্বান জানান। তিনি তার বক্তৃতায় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এমন একটি জনহিতকর অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভাইরাল হেপাটাইটিস রোগসমূহ প্রতিরোধের বিষয়ে অধিকতর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করার ব্যাপারে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপর অর্পিত দিয়ত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য অনুরোধ করেন। সবশেষে অনুষ্ঠানের আয়োজকগণ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সূত্র: বিডি লাইভ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়