Tuesday, June 23

ফোঁটা ফোঁটা রহমতের বৃষ্টি


আফিফা মারজানা: বৃষ্টি, ছন্দে-আনন্দে। বৃষ্টি ঝরঝর, ঝমঝম, টিপটিপ, টুপটাপ। ঝরে যায় অবিরল। ভেজে শহর-গ্রাম, ভেজে দুনিয়া। ভেজে মানুষ, ভিজে যায় মানুষের মন। আকাশজুড়ে যখনি সুরমারঙা দলছুট মেঘ এক হয়ে জট পাকায়, আনন্দ বয়ে যায় সবখানে। প্রতীক্ষা আর প্রস্তুতি। সেই গ্রামে রোদেপোড়া ফসলের মাঠে যখন মেঘের ছায়া পড়ে তখন কৃষকের মুখে হাসি আর চোখের কোণে অশ্রুজল চলে আসে শুকরিয়ার। বৃষ্টিজলের প্রার্থনায় দয়াময় প্রভুর দরবার সে ভিজিয়েছে চোখের জলে। চোখে জল নিয়েই সে লাঙল কাঁধে ছোটে মাঠে। বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয় সে জলের রেখা। তাপপ্রবাহে অস্থির মানুষ স্বস্তি পায়, শীতল হয় প্রকৃতি। কৃতজ্ঞচিত্তে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানায় সেও। কাচঘেরা ঘরের ঘোরটোপ ছেড়েও বেরিয়ে আসে মানুষ। যন্ত্রের কৃত্রিম শীতলতা দেহ জুড়ালেও মন জুড়ায় না। বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিতে হয় কিংবা বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে হয় তারও। প্রস্তুতি আর প্রতীক্ষার বৃষ্টিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় প্রকৃতি আর পৃথিবী। দয়াময় আল্লাহ মানুষকে প্রতিদিন নেয়ামতে কতভাবেই না জড়িয়ে রাখেন। বৃষ্টির এক নেয়ামতেই তো আমরা একবার ভাসি আর একবার ডুবি! রাহমানুর রাহিম নিজেই আমাদের বলেন বৃষ্টির পরিচয়। কোথা থেকে আসে, কেন আসে, কীসের জন্য আসে? আমরা সে পরিচয় জেনে বৃষ্টিকে নতুন করে চিনি। অভিভূত হই। বৃষ্টি নেচে যায় মুচকি হেসে। আমরা তাকে অভিবাদন জানাই। আল্লাহ তায়ালা বৃষ্টির কথা এভাবে বলেন, তিনিই বাতাসের মাধ্যমে মেঘকে জমা করে মেঘপুঞ্জ গঠন করেন। সেই মেঘপুঞ্জ থেকে বর্ষণ করেন রহমতের বারিধারা, মানুষ যখন নিরাশ ও হতাশ হয় তখন। তারপর সে বৃষ্টির পানি রৌদ্রদগ্ধ মৃত জমিনে প্রাণের পরশ আনে, জমিনের বুক চিরে উঠে আসে সবুজ। সে সবুজ ফলায় ফুলফল আর ফসল। এভাবেই আমাদের রিজিক দেন রাজ্জাক। আমরা রবের রিজিকে বাঁচি, বেঁচে থাকি। কোরআনে তিনি এরশাদ করেন, 'তিনিই বৃষ্টির আগে সুসংবাদবাহী বাতাস পাঠান। এমনকি যখন বাতাস জলবাহী মেঘদল বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘদলকে মৃত শহরের পানে পরিচালিত করি। তারপর এ মেঘদল থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি। অনন্তর পানির মাধ্যমে সব ধরনের ফল উৎপন্ন করি।' (সূরা আরাফ : ৫৭)। 'আমি বৃষ্টিময় বাতাস পরিচালনা করি, তারপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদের পান করাই।' (সূরা হিজর : ২২)। আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে, অতঃপর আমি তা মৃত ভূখন্ডের দিকে পরিচালিত করি এরপর তার মাধ্যমে মৃত ভূখ-কে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। এমনিভাবেই হবে পুনরুত্থান।' (সূরা ফাতির : ৯)। হ্যাঁ, বৃষ্টি শুধু দয়াময়ের দয়ার দান বা নেয়ামত নয়, নিদর্শনও বটে। বৃষ্টি হলো পরকালের উপমা। মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন দানের। পবিত্র কোরআনে মেঘ-বৃষ্টির আর বাতাসের কথা এসেছে ঘুরেফিরে। একবার নয়; ২৪ বার! বৃষ্টির মহিমা এখানেই শেষ নয়! পার্থিব জগতে সে যেমন রিজিকের অছিলা, পরজগতেও রিজিক পাওয়ার অছিলা। অঝোর ধারায় যখন ঝরে বৃষ্টির পানি তখন সালাতে-সিজদায় লুটোলে সিক্ত হয় নেকির বৃষ্টিতে। যত ফোঁটা ঝরে আকাশ থেকে, তত সংখ্যায় নেকি জমে আমলনামায়! কী নেয়ামত! কী বরকত! পৃথিবী যখন ভেজে রহমতের বারিধারায়, মোমিন তখন ভেজে নেকির বারিধারায়। ভিজে ভিজে মোমিন নেককার হয়ে যান। আমরা সিজদায় লুটাই শুকরিয়ায়। শুকরিয়া জানায় গাছগাছড়া, বছরজুড়ে জমা ধুলোর আস্তর ধুয়েমুছে সাফ হয়ে ঝকঝকে হয় সবুজ। মাছ বৃষ্টির নতুন পানিতে সাঁতরায়। ঘাস প্রাণ ফিরে পায়, সজীব হয়ে ওঠে। পায়ের তলায় বিছিয়ে দেয় সবুজ গালিচা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়