Monday, May 25

রমজানের অপেক্ষায় মোমিন


আলম শামস: হিজরি সনের শাবান মাস শুরু হয়েছে। আর কয়েক দিন পরই মাহে রমজান। ঈমানদার মুসলিম নর-নারী এ মাসটির অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকেন। তারা শুধু অপেক্ষা করেন কবে থেকে শুরু হবে রমজান মাস। রমজান মাসের জন্য আগে থেকেই তারা নিজেকে প্রস্তুত করে তোলেন। তারা একটি রুটিন তৈরি করেন আগের রমজান থেকে এবারের রমজানে কী কী নেক আমল বেশি করবেন। গত বছরের রমজানে যদি একবার পবিত্র কোরআন খতম দিয়ে থাকেন তাহলে এবার ইচ্ছা রাখেন দুইবার দেয়ার। অর্থাৎ সবকিছুতেই মোমিনরা চান আগের তুলনায় বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকতে। তাই একজন মোমিন রমজান আসার আগেই নিজেকে রমজানের জন্য প্রস্তুত করে তোলেন। বাহ্যিকভাবে আমরা যেমন স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য অনেক আগে থেকেই নিজেকে গড়ে তুলি আর সব সময় মাথায় পরীক্ষায় ভালো ফলের চিন্তা ঘুরপাক খায়, তেমনি যারা মোমিন তারা রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে থাকেন। রমজানের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন তা তারা আগে থেকেই ঠিক করে খোদার কাছে দোয়া করতে থাকেন; যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাদের সুস্থ রেখে রমজানের ইবাদত করতে সাহায্য করেন। আমরাও যদি এখন থেকে পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকি আর আল্লাহ তায়ালার কাছে এখন থেকেই দোয়া করতে শুরু করি, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ রাখ আমি যেন আগত রমজানে আগের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দান-খয়রাত, কোরআন পাঠসহ সব পুণ্যকর্ম বেশি বেশি করতে পারি। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি ইবাদতে রত থেকে কাটানোর যদি ইচ্ছা থাকে আর আল্লাহকে লাভ করার আশা থাকে তাহলে অবশ্যই এখন থেকেই নিয়ত করে সে অনুযায়ী প্রস্তুত হয়ে যাওয়া উচিত। আর না হয় রমজান চলে আসবে আর মনে মনে ভাবব যে, হায়! রমজান মাস চলে এলো আর আমি এর জন্য তৈরিই হইনি। শুধু রোজা রাখলেই কি রমজান মাসের সার্থকতা? রোজাও রাখতে হবে এবং বেশি বেশি নফল ইবাদতও করতে হবে। যদি এখন থেকেই রমজানের প্রস্তুতি না নেই তাহলে দেখা যাবে আমরা তারাবির নামাজে অংশ নিতে পারছি না নানা ব্যস্ততার কারণে, মসজিদে পবিত্র কোরআনের মধুর তেলাওয়াত শুনতে যেতে পারছি না অন্য কোনো কাজের চাপে, ঠিকমতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারছি না, রাতে দেরিতে ঘুমানোর জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারছি না, এছাড়া আরও অনেক নেক কর্মে অংশ নিতে পারছি না। আর এভাবে ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে রমজান মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। পরে আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তাই এখন থেকেই যদি সবাই চিন্তা করে রাখেন যে, আমি আমার অফিসের কাজ এভাবে এতটার মধ্যে গুছিয়ে নেব যেন আমি তারাবির নামাজে অংশ নিতে পারি, যারা ব্যবসা করেন তারাও ঠিক করে নিতে পারেন এতটা থেকে আমাকে মসজিদে অবস্থান করতেই হবে, যারা ছাত্র তারা এখন যদি পড়ালেখা কিছুটা বেশি করেন তাহলে রমজানের ইবাদতে সুবিধা হবে। এভাবে আমরা যে যেই স্থানে থাকি না কেন আমরা যদি এখন থেকেই নিজেকে রমজানের জন্য প্রস্তুত করে তুলি তাহলে দেখব রমজানের রাতগুলো কত সুন্দর ইবাদতে কাটে। যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন তারাও এখন থেকেই ভাবতে পারেন কমপক্ষে রমজান মাসে বেশি মুনাফা করব না, সবাই যেন স্বাচ্ছন্দ্যভাবে বাজার-সদাই করে রোজা পালন করতে পারে এ ব্যবস্থা করার। আর এর ফলে একজন ব্যবসায়ী যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবেন, তেমনি লাখো মানুষ যে স্বাচ্ছন্দ্যে রোজা পালন করে আনন্দ পেল তারও সে অংশীদার হবেন। হজরত রাসুলে করিম (সা.) রমজানের আগে শাবান মাসে অনেক বেশি ইবাদত করতেন আর তিনি (সা.) রমজান ছাড়াও প্রতি মাসে নফল রোজা রাখতেন। আমরাও যদি তাঁর সুন্নত অনুযায়ী প্রতি মাসে কয়েকটি করে নফল রোজা রাখতাম তাহলে আর রমজানের রোজা কোনো কষ্ট মনে হতো না। এছাড়া আমরা যদি মনের সব দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রমজানের জন্য পুরোপুরি এখন থেকেই প্রস্তুত হই তাহলেও রমজানের রোজা কোনো কষ্টই মনে হবে না। যেহেতু আরও কিছুদিন অবশিষ্ট রয়েছে পবিত্র মাহে রমজানের, তাই এখন থেকেই আমাদের সবার উচিত নিজেকে পরিপূর্ণভাবে রমজানের জন্য প্রস্তুত করে গড়ে তোলা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়