ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ভিসি পদত্যাগ করেন৷
এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসান ফুয়াদ এল তাজ। যতদিন পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে ভিসি নিয়োগ না হবে ততদিন তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভিসি নিয়োগের কথা শোনা যাচ্ছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হবে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাসুমা হাবীব হতে যাচ্ছেন হাবিপ্রবির পরবর্তী ভিসি। তাতেই শুরু হয়েছে নানা কানাঘুষা। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, তারা নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ভিসি নিয়োগ চান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সাংবাদিক সংগঠন হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি শিক্ষার্থীদের মতামত যাচাইয়ের জন্য তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে ‘কোথা থেকে উপাচার্য চায় হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা’ শীর্ষক একটি অনলাইন ভোটের জন্য পোল তৈরি করেন। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেই পোলে মোট ২০০৬ জন শিক্ষার্থী ভোট দেন। যেখানে দেখা যায়, নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চান প্রায় ১৩৬৩ জন (৬৭%) এবং বাইরে থেকে চান ৬৬৩ জন (৩২%) শিক্ষার্থী।
বাইরে থেকে ভিসি হিসাবে অধ্যাপক ড. মাসুমা হাবীবকে নিয়োগের তথ্য ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. হারুনুর রশিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘যেই দেশদ্রোহী স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে হাজারো রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জন করলাম, এখন সেই স্বৈরাচারের দোসরদের যদি পুনর্বাসন করা হয়, এটা কী? শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা নয়?’
ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘অধ্যাপক ড. মাসুমা হাবীব আওয়ামী স্বৈরাচারের সময় ‘আইকিউএসি’-এর ডিরেক্টর এবং তার স্বামী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সেক্রেটারি ছিলেন।
শোনা যাচ্ছে, এই ভদ্র মহিলাকে হাবিপ্রবির ভিসি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। যদি এরকম হটকারী সিদ্ধান্ত নেয়, যা দেশপ্রেমিক শহিদ ভাই-বোনদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লবের পরিপন্থী। তাহলে হাবিপ্রবি'র শিক্ষার্থীদের পুনরায় আন্দোলনে নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মো. বিপ্লব জামান বাইরে থেকে ভিসি নিয়োগের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পোস্টের কমেন্টে লেখেন, ‘নিজ ক্যাম্পাসে যদি ভিসি হওয়ার মতো শিক্ষক না থাকে তাহলে ভার্সিটি রেখে লাভ কী?? এখানে কি আলু, বেগুন চাষ করা হয় যে যোগ্য লোক থাকবে না? বারবার বাইরে থেকে পাঙ্গাস মাছ এসে জলটা ঘোলা করে চামড়া মোটা করে চলে যায়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী অলিয়া পারভীন হ্যাপি লেখেন, ‘ক্যাম্পাস হতে ভিসি নিয়োগ চাই, রুটিন ভিসি শিক্ষার্থীবান্ধব, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো অলরেডি বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছেন। যেমন- বাস সিডিউল ২০১৮ কার্যকর হয়েছে, নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা যাতে থাকে, এ জন্য তিনটি টেলিটকের টাওয়ার হলগুলোতে স্থাপনের জন্য টেলিটক কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছেন, ক্যাম্পাসের অন্ধকার জায়গাগুলোতে লাইটের ব্যবস্থা করেছেন, মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করেছেন। স্যার ভিসি হিসাবে থাকলে শিক্ষার্থী বান্ধব ডিসিশন যে নিবেন এগুলো তার প্রমাণ।’
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়