Sunday, September 25

কানাইঘাটে ইমরান হত্যা মামলায় আদালতে প্রেমিকার স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কানাইঘাটে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে পৈশাচিক হত্যাকান্ডের স্বীকার দর্জি ইমরান হোসেনকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে রবিবার সিলেটের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত কানাইঘাটের বিজ্ঞ আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে ইমরান হোসেন হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত তার পরকীয়া প্রেমিকা সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী সুহাদা বেগম,বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই জুনেদ আহমদ কানাইঘাট নিউজকে জানিয়েছেন। তবে এ হত্যাকান্ডের সাথে কারা কারা জড়িত এবং খুনী সুহাদা বেগম বিজ্ঞ আদালতের কাছে কি জবানবন্দী দিয়েছে তদন্তের স্বার্থে তা এ মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না বলে এস.আই জুনেদ জানান। এদিকে ১৯ সেপ্টেম্বর নিখোঁজের ৫দিন পর ইমরানের বস্তাবন্দী গলাকাঁটা লাশ উদ্ধারের পর পরকীয়া প্রেমিক জুটি ইমরান হোসেন ও সুহাদা বেগমের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুলে পড়া অবস্থায় সুহাদা বেগমের সাথে ইমরানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।আদালতে সুহাদা বেগমের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়,  কানাইঘাটের সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মো. আবু বক্করের ছেলে কানাইঘাট পৌর শহরের চয়েস টেইলার্সের মালিক দর্জি ইমরান হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর দক্ষিণ নয়াগ্রামের সৌদি প্রবাসী বদরুল ইসলামের স্ত্রী সুহাদা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো।

বিয়ের আগে পরিবারের সঙ্গে উপজেলা সদরের পুরাতন থানা সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। আর বাসার পাশেই ছিলো নিহত ইমরান হোসেনের দর্জির দোকান। ওই দোকানে সুহাদা তার পরিবারের লোকজন জামা-কাপড় সেলাই করাতেন। সেই সুবাদে ইমরানের সঙ্গে সুহাদার বেগমের স্কুল জীবন থেকেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তবে তাদের এ প্রেম মেনে নিতে পারেনি সুহাদার পরিবার। এ কারণে ইমরান বিয়ের প্রস্তাব দিলেও সুহাদার পরিবার কোনো সাড়া দেয়নি।
পরবর্তীতে সুহাদাকে তার পরিবারের সদস্যরা উপজেলার দুর্গাপুর দক্ষিণ নয়াগ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী বদরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের কিছুদিন পর সুহাদার স্বামী বদরুল ইসলাম সৌদি আরবে চলে গেলে সুহাদার সঙ্গে পুরনো প্রেমিক ইমরান হোসেনের পরকীয়ার সর্ম্পক গড়ে ওঠে।

আর নতুন করে তাদের এ সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যান সুহাদার স্বামীর বাড়ির লোকজন। পরকীয়ার বিষয়টি সুহাদার আত্মীয়-স্বজনদের জানানো হলে তারা ইমরানকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন।

এতে কর্ণপাত না করায় উভয় পরিবারই ইমরানের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুহাদা বেগমের ছোট ভাই ইমরান আহমেদ কৌশলে দর্জি দোকানি ইমরান হোসেনকে নিয়ে দাওয়াত খেতে সুহাদার শ্বশুর বাড়িতে যান।

এরপর ইমরান হোসেন আর বাড়ি ফেরেননি। নিখোঁজের দুই দিন পরও তার কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবা আবু বক্কর কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এরপরও ছেলের সন্ধান না পেয়ে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে কানাইঘাট থানায় সুহাদা বেগম ও তার ভাই ইমরান আহমদ, দেবর মাসুম আহমদ ও লক্ষীপ্রসাদ গ্রামের উমর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

মামলার পর কানাইঘাট থানা পুলিশ ইমরান হোসেন নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনের জন্য অভিযান শুরু করে। অভিযানের শুরুতেই তারা সুহাদা বেগমের দেবর মাসুম আহমদ ও নিকটাত্মীয় জাহাঙ্গীর আহমদকে গ্রেফতার করেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই প্রেমিকা সুহাদা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর পরই সুহাদা বেগম পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দেন। তার স্বীকারোক্তি মতে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কানাইঘাট থানা পুলিশ সুহাদার শ্বশুরবাড়ির পুকুর থেকে ইমরান হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, নিহত ইমরানের মরদেহ বিকৃত হয়ে পড়েছিলো। কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, আটককৃত সুহাদা বেগম, তার দেবর মাসুম আহমদ ও নিকটাত্মীয় জাহাঙ্গীর আহমেদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাদের শলাপরামর্শেই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

তিনি আরও বলেন, ইমরান হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়