Saturday, November 22

ডায়রির কথা গণমাধ্যমকে আগে জানানো হয়নি কেন?


ঢাকা : দীর্ঘ এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও চিকিৎসক শামারুখ মাহজাবিন শ্যামা হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি শ্যামার লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদনও এখন পর্যন্ত পুলিশের হাতে পৌঁছায়নি। এদিকে ১৩ নভেম্বর শ্যামার মৃত্যুর পরদিনই তার ঘর থেকে শ্যামার একটি ব্যক্তিগত ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শ্যামার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন ও পুলিশ। কিন্তু নিহতের পরিবারের জিজ্ঞাসা- শ্যামার মৃত্যুর পরদিনই যদি তার ঘর থেকে তার ব্যাক্তিগত ডায়রি উদ্ধার করা হয়ে থাকে তাহলে তা এতোদিন গণমাধ্যমকে জানানো হলো না কেন? ফলে ডায়রি উদ্ধারের এ ঘটনাকে একটি সাজানো নাটক বলেই দাবি করেছেন তারা। পুলিশ সূত্র জানায়, একটি ডায়রি, বাবার সাথে মৃত্যুর আগের দিন শামারুখের মোবাইলে কথোপকথনসহ আরও কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে চলছে তদন্ত। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবেন তারা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। এছাড়া নিহত শ্যামার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে তার শ্বশুর বাড়িতে পাওয়া একটি ডায়রির কিছু লেখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শ্যামার সাথে তার বাবার মোবাইল ফোনে কথপোকথনের অডিও রেকর্ড সংগ্রহের চেষ্টা করছি। বুধবার ধানমন্ডির বাসায় টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী জেসমিন আরা বেগম ছাড়াও বাড়ির গৃহকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই মুহুর্তে মামলার তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।’ অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তাদের সন্দেহ, ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা খান টিপু সুলতান। শামারুখের স্বামী হুমায়ূন সুলতানকে ইতোমধ্যেই নিহতের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে খান টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী জেসমিন আরা বেগম জামিনে রয়েছেন। এদিকে শামারুখের বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ও বড় ভাই শাহানুর শরীফ অভিযোগ করেছেন, ‘হত্যা মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন টিপু সুলতান। আর শ্যামার মৃত্যুর পর থেকেই আমরা ভয়ে আছি। টিপু সুলতান আমাদেরকেও মেরে ফেলতে পারেন। তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি আমরা।’ সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তারা বাবা জানান, ‘ওইদিন শামারুখের শ্বশুর ফোন করে জানিয়েছিলেন তাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকায় থাকা আমাদের এক আত্মীয়কে ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে পাঠানো হলে তিনি শ্যামার মৃত্যুর খবর দেন।’ তিনি জানান, ‘বিয়ের পর থেকে আমার মেয়ে ধানমন্ডিতে শ্বশুর বাড়িতেই থাকতো। যেখান থেকে পায়ে হেঁটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। তার শাশুড়ি জেসমিন আরা বেগম হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। সেইদিন বিকেলে বাসায় এসে বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে তার শাশুড়ি যদি দেখেই থাকবেন, শামারুখ আত্মহত্যা করেছে, তাহলে কেন তখনই তিনি ঘটনাটি পুলিশকে না জানিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে হাসপাতালে পাঠালেন? নুরুল ইসলাম আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি, কোনো আলামতও সংগ্রহ করেনি। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীরাও চেষ্টা করে সেই বাসায় প্রবেশ করতে পারেনি।’ শামারুখের ভাই শাহানুর শরীফ জানান, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতালে ধানমন্ডি থানা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক তার বোনোর সুরতহাল প্রতিবেদন করতে গেলে টিপু সুলতান সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমক দিয়ে সুরৎহাল প্রতিবেদনে আত্মহত্যার কথা লিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ সে অনুযায়ীই সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে এ ধরনের তথ্য কীভাবে আসে? কারণ, যতদূর জানি সূরতহাল প্রতিবেদন মানে লাশ কোন অবস্থায় পাওয়া গেছে, লাশের শরীরে কোনো ধরনের ক্ষতচিহ্ন আছে কিনা, এসব বিষয় থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা মামলা করার আগেই টিপু সুলতান ও তার ছেলে হুমায়ূন সুলতান থানায় উপস্থিত ছিলেন। হত্যা মামলা করার পর হুমায়ূন গ্রেপ্তার হলেও টিপু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।’ শাহানুর শরীফ বলেন, ‘শামারুখ খুব স্পষ্টভাষী মেয়ে ছিল। কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারতো না। টিপু সুলতানের অপকর্মের কিছু দলিল তার হাতে এসেছিল। মৃত্যুর আগের দিন দুপুরে সে এই বিষয়ে মোবাইলে তার বাবাকে জানিয়েছিল।’ এক প্রশ্নের জবাবে শাহানুর বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে আমার মায়ের মৃত্যুর পর আব্বা ভেঙ্গে পড়েছিলেন। শামারুখ আব্বাকে সান্ত্বনা দিত। কিন্তু আমরা ওর শ্বশুর বাড়িতে যেতাম না।’ বিভিন্ন অজুহাতে টিপু সুলতান শামারুখের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেন বলেও অভিযোগ করেন শাহানুর শরীফ। তিনি বলেন, ‘গত ঈদের আগে টিপু সুলতান ফোন করে বাবাকে জানায় তারা নতুন বাসা নিয়েছেন। তার অবর্তমানে সেখানে শামারুখ ও তার স্বামী থাকবেন। কিন্তু তার কাছে টাকা নেই। পরে বাবা তাদের বাসায় ফার্নিচার কিনতে আড়াই লাখ টাকা দেন।’ শামারুখের ডায়রি সংক্রান্ত যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়টি একটি ‘সাজানো’ নাটক বলেও দাবি করেন শাহানুর। তিনি বলেন, ‘একটি গণমাধ্যমে সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে শ্যামার মৃত্যুর পরদিনই তার শ্বশুর বাড়ি থেকে পুলিশ একটি ডায়রি উদ্ধার করেছে। কিন্তু পুলিশ ঘটনাটি এতোদিন আমাদের জানায়নি। তাহলে কেন এখন ডায়রি উদ্ধারের নাটক সাজানো হচ্ছে?’ এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যেখান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে পুলিশ সেখানে যেতে পারেনি। তার আগেই মৃত্যুর আলামত নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।’ পুলিশকে কেউ প্রভাবিত করছে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শ্যামার শ্বশুর বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন আত্মহত্যায় তার মৃত্যু হয়েছে। তাদের অভিযোগ সত্য কিনা তা জানতেই লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে লাশটি দেখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার কোনো ঘটনা বলে মনে হয়নি। শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। তাই লাশটি ময়নাতদন্তে দেওয়া হয়েছে।’ উদ্ধারকৃত ডায়রিতেও আত্মহত্যার কোনো কথা লেখা ছিল না বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। গত ১৩ নভেম্বর শামারুখের রহস্যজনক মৃত্যুর পর তার বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের করা হত্যা মামলায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী তিন জনকেই আসামি করা হয়। তবে শামারুখের শ্বশুর বাড়ির লোকজন ওই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলেই দাবি করে আসছেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়