Friday, May 31

আ’লীগ নেতা সুবহানের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে প্রতিবাদ সভা

আ’লীগ নেতা সুবহানের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে প্রতিবাদ সভা


নিজস্ব প্রতিবেদক:
 কানাইঘাট সাতবাঁক ইউপি আ’লীগের অন্যতম নেতা প্রতিপরে হাতে নির্মমভাবে নিহত আব্দুস সুবহানের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে এক প্রতিবাদ ও স্মরণসভা আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় স্থানীয় ভবানীগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত হয়। আ’লীগ নেতা মঈন উদ্দিন মেম্বারের সভাপতিত্বে এবং ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ আহমদের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাতবাঁক ইউপি আ’লীগের সভাপতি হাজী মখদ্দুছ আলী, আ’লীগ নেতা আব্দুন নুর মেম্বার, আবুল আহমদ মেম্বার, যুবলীগ নেতা আশিকুর রহমান বুলবুল, জেলা ছাত্রলীগ নেতা ফারুক আহমদ। বক্তব্য রাখেন, সেবুল আহমদ, ফখরুল ইসলাম, কাওছার আহমদ, মুমিন আহমদ, মওদুদ আহমদ প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন, আজ থেকে দুই বছর পূর্বে ভবানীগঞ্জ বাজারে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে আ’লীগ নেতা আব্দুস সুবহানকে নির্মমভাবে হত্যা করলেও খুনীরা বুক ফুলিয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলার বিচার শুরু হওয়ার মূহূর্তে দুই পলাতক আসামী ও মামলার অন্যান্য জামিনপ্রাপ্ত আসামী তাদের স্বজনরা মামলার বাদী নিহত সুবহানের কুয়েত প্রবাসী পুত্র মামুন রশিদ ও স্বাক্ষীদরে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি বাদী ও স্বাক্ষীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছেন। 

জমিয়তে উলামার অভিষেক অনুষ্ঠান শনিবার

জমিয়তে উলামার অভিষেক অনুষ্ঠান শনিবার


আগামী শনিবার বেলা ১২টায় কানাইঘাট দারুল উলুম মাদ্রাসা মিলনায়তনে জমিয়তে উলামা কানাইঘাট উপজেলা শাখার নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন জমিয়তে উলামার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল্লামা আলিমুদ্দীন দূলর্ভপুরী। এতে যথাসময়ে কমিটির সকল দায়িত্বশীলগণকে উপস্থিত থাকার জন্য উপজেলা সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান রায়গড়ী এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ক্বারী হারুনুর রশিদ চতুলী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। (বিজ্ঞপ্তি)

বায়ার্নের সামনে এখন ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনা

বায়ার্নের সামনে এখন ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনা


ঢাকা : বায়ার্ন মিউনিখ এর সামনে এখন ট্রেবল জয়ের হাতছানি। তাদের যে অবস্থা এটা অসম্ভব নয় বরং আবশ্যই সম্ভব। শনিবার জার্মান কাপের ফাইনালে স্টুটগার্ট এফসিকে হারাতে পারলেই  ট্রেবল  জিতবে বায়ার্ন মিউনিখ। এমনকি এএফসি  পোকালে জিতলেই ক্লাবটির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নিজের নাম লেখানোর সুযোগ থাকছে বর্ষীয়ান কোচ জুপ হেইঙ্কেসেরও। কারণ, এই প্রথম ক্লাবটির সামনে ট্রেবল জয়ের হাতছানি দেখা দিয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় , ১৯৬৫-১৯৭৯ এই পনেরোটি বছর বায়ার্নের স্বর্ণ যুগ। ১৯৭৪, ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ পরপর তিন বার ইউরোপের সেরা ক্লাবের খেতাব জিতেছে মিউনিখের এই ক্লাবটি। কিন্তু ত্রিমুকুট (ট্রেবল) অধরাই থেকে গেছে বায়ার্নের কাছে। ফ্রেঞ্চ বেকেনবাওয়ার ও গার্ড মুলারদের মত কিংবদন্তীরাও ক্লাবটিকে ত্রিমুকুট এনে দিতে পারেনি। এখন দেখাই যাক ফিলিপ লাম-আরিয়েন রোবেন-ফ্রাঙ্ক রিবেরিদের সম্বনয়ে গড়া নতুন  প্রজন্ম ক্লাবটিকে কতটুকু দিতে পারে।
শনিবারের ফাইনাল প্রসঙ্গে জুপ হেইঙ্কেস বলেন, চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় দ্রুত ভুলে যেতে চাইছি আমরা। এখন লক্ষ্য, জার্মান কাপ জেতা। গোটা মৌসুমে ছেলেরা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। এবার শেষটা ভালো হলেই হয়। তবে দল হিসেবে স্টুটগার্ট যথেষ্ট শক্তিশালী। ওদের হালকাভাবে দেখছি না।
নতুনত্ব আসছে জিমেইল ইনবক্সে

নতুনত্ব আসছে জিমেইল ইনবক্সে


গুগল আর চমক এ দুইয়ের মধ্যে খুবই কমই দূরত্ব তৈরি হয়। এবারের তাই জিমেইলে নতুন ফিচার সেবার প্রস্তুতি একেবারে চূড়ান্ত করেছে গুগল। আর তা হচ্ছে জিমেইল ইনবক্সের নতুন ফিচারশৈলী। সংবাদমাধ্যম সূত্র এ তথ্য দিয়েছে।

নতুন ইনবক্সে থাকবে বেশ কটি বাড়তি ট্যাব সুবিধা। এগুলোকে আবার নিজের প্রয়োজনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যাবে। এবারে গুগল আর আলাদা নয়, বরং অ্যানড্রইড এবং অ্যাপল আইওএস অ্যাপসের ব্যবহারযোগ্য করেই জিমেইল ইনবক্সকে প্রস্তুত করেছে।

এবারের নতুন ইনবক্সের মাধ্যমে বহুমাত্রিক কাজ সহজসাধ্য হয়ে যাবে। এরই মধ্যে নতুন ইনবক্সে কার্যশৈলীর বেশ কিছু কলাকৌশল ছবি আকারেও দেখা যাচ্ছে।

এবারে মোবাইল অর্থাৎ একেবারে সাধারণ মানের সেলফোনেও জিমেইলের নতুন এ ইনবক্স সুবিধা উপভোগ করা যাবে। আর তা আত্মপ্রকাশের প্রথম দিন থেকেই পাওয়া যাবে।

এ মুহূর্তে ঠিক কবে নাগাদ এ সুবিধা ভোক্তাদের জন্য অবমুক্ত করা হবে এ বিষয়ে গুগল এখনো কোনো দিনক্ষণ জানায়নি। তবে আসছে দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই এটি উন্মুক্ত করা হবে। এমনই তথ্যই দিয়েছেন গুগল পর্যবেক্ষকেরা।(সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)
ইসরায়েলের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি আসাদের

ইসরায়েলের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি আসাদের


ঢাকা: সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ভবিষ্যতে কোনো বিমান হামলা হলে এর জবাব দিবে সিরিয়া।
লেবাননভিত্তিক আল-মানার টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আল-আসাদ বলেন, “আমাদের সঙ্গে যোগাযোগকারী সবপক্ষকে আমরা বলেছি যে পরবর্তীতে ইসরায়েলের যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দেব আমরা।”
ইতোমধ্যে তিনবার সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি, লেবাননের হেজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পাঠানোর সময় তারা হামলা চালিয়েছে।
হেজবুল্লাহর মালিকানাধীন টেলিভিশনটিকে আসাদ বলেছেন, আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র নিতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে।
তবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র সিরিয়ার সরকার পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করেননি প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।
ইসরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি ওইসব ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োগ ঘটনা হয় তাহলে তারা সিরিয়ার ওপর হামলা চালাবে।

গোলান উচ্চভূমিতে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার ব্যাপারে জনগণের চাপ রয়েছে বলে জানান আল-আসাদ। 
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে গোলান উচ্চভূমি দখলে রেখেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ১৯৮১ সালে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে দখলকৃত অঞ্চলকে সংযোজন করেছে ইসরায়েল। এখনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৪৮ সাল থেকে সিরিয়া ও ইসরায়েল যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে।(বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

বিশ্বের ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যাগার চীন

বিশ্বের ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যাগার চীন


ঢাকা: ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, সেলফোন, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ব্যবহারের অযোগ্য হলে আপনি হয়তো ফেলে দেন। কিন্তু এগুলোর অনেকগুলো আপনার স্থানীয় ওই বর্জ্যাগারে আর থাকে না, সেগুলো চলে যায় বিশ্বের ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যাগার চীনে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “চীন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য ফেলার স্থান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।”

গ্রিনপিসের বেইজিং কার্যালয়ের মুখপাত্র মা তিয়ানজি বলেন, “জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যের ৭০ শতাংশের শেষ ঠিকানা চীন।”

অধিকাংশ (ইলেক্ট্রনিক) বর্জ্য আসে অবৈধভাবে কেননা জাতিসংঘের কনভেনশন অনযায়ী যু্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলো থেকে চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য পাঠানো নিষিদ্ধ।”

গত দশক ধরে চীনের প্রধান শিল্প এলাকা দক্ষিণাঞ্চলের গুইয়ু ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য ফেলার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সারা বিশ্বে থেকে আসা ওইসব বর্জ্য ভাঙার কাজে নিয়োজিত হাজার হাজার মানুষ।

শহরটির প্রতিটি রাস্তায় এসব বর্জ্যের স্তূপ। রাস্তার এপাশে সবুজ আর গোলাপি রংয়ের সার্কিট বোর্ডের স্তূপ তো অন্য পাশে ডেস্কটপ কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের স্তূপ। এগুলো থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ বের করে কিছুটা ঝালাই করে বিক্রিও করা হয়।

খুব সম্ভবত চীনের ওই শহরটি ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য রিসাইকেল (পুনরায় ব্যবহারের যোগ্য)করার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে রিসাইকেল অঞ্চল। কিন্তু গুইয়ুর রিসাইক্লিং করা নোংরা ও বিপজ্জনক কাজ। 

গ্রিনপিসের বেইজিংয়ের মুখপাত্র মা তিয়ানিজি বলেন, “রিসাইক্লিং যখন সঠিকভাবে কর হয়, তখন তা পরিবেশের জন্য ভালো। কিন্তু চীনের মতো আদিম পদ্ধতিতে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য রিসাইকেল করা হয় তখন তা স্থানীয় পরিবেশের জন্য খুবই ভয়ানক।”(বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)
ফরিদপুরে নাইট কুইন ফুটেছে

ফরিদপুরে নাইট কুইন ফুটেছে

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরের ষ্টেডিয়াম এলাকায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী সৈয়দ মোশাররফ হোসেন মুকুল ও শিক্ষিকা হাসিনা মমতাজ হ্যাপী’র বাসায় বৃহস্পতিবার রাতে দেখা মিললো নাইট কুইন ফুলের। প্রায় ৫ বছর আগে তারা নাইট কুইন ফুলের চারা রোপন করেছিল। ওই পরিবারের সদস্য নোশিন আনজুম স্বাক্ষর জানান গত কয়েকদিন ধরে কলি থেকে ধীরে ধীরে ফুঁটতে থাকা নাইট কুইন পরিপূর্ণতা পায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে। নাইট কুইন ফুল ফোটার খবর পেয়ে আশের পাশের অনেকেই এই বাড়িতে আসছে এই ফুল দেখার জন্য।
পরিবারটি জানিয়েছে, ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসের চারা রোপন করা হয়। গত পাঁচ বছর ধরে টবে লাগানো গাছে পরিপূর্ণ ফুল ফোটে বৃহস্পতিবার রাতে। (ডিনিউজ)
মাছের মাগো মাছের মা

মাছের মাগো মাছের মা


:: আবু সাঈদ জুবেরী ::
ছানাপোনাদের নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই ওর। বড় ভাগ্যবতী সে; সব কটি ছেলেপুলে বেশ স্বাস্থ্যবান হয়েছে। প্রথমবার নাকি এরকম খুব একটা হয় না। এরই মধ্যে ছানাপোনারা শিখে গেছে ভালো খাবারটি খেতে। সবুজ শ্যাওলা কোথায় মেলে, কোথায় গেলে পাওয়া যায় মোটাতাজা সোনালি কেঁচো, এসব যেন এখন ওদের নখ-দর্পণে। মাকে আর সাঁতার কেটে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার দরকার পড়ে না। ভালো খাবারের খোঁজ পেলে ওদের কেউ না কেউ ছুটে আসে; বলে, মা, ওমা, দেখে এসো, কী ছুন্দর ছ্যাওলা।
গোল্ডা শুধু উচ্চারণটা ঠিক করে দেয়; ছুন্দর না সোনা, সুন্দর, সুন্দর। ছ্যাওলা না, শ্যাওলা।
তারপর সেও ছোটে ছানার পেছনে। দেরি করলে আবার রাক্ষুসে মাছের ঝাঁক চলে আসতে পারে।
শ্যাওলা দেখে গোল্ডার চোখের পাতা পড়ে না। এত বছর কেটে গেল। এই সমুদ্রের নিচে, কখনো এমন বাহারি শ্যাওলার বাগান চোখে পড়ে নি। যেমন ঢেউ খেলানো, তেমনি সবুজ। যতদূর চোখ যায়, শুধু শ্যাওলা আর শ্যাওলা। কত খাবো? বেকুবের মতো সে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। দীর্ঘশ্বাস পড়ে যায় নিজের অজান্তেই।... যখন সে ছোট ছিল, তখন চারদিকে কত অভাব। মা দিনরাত শুধু দুশ্চিন্তায় ভুগতেন। খাবার নিয়েই খালি চিন্তা। আজ না হয় ছানাপোনাদের কিছু খাবার দেয়া গেল, কাল? কাল কোথায় খাবার মিলবে?
সাগরের তলদেশ থেকে তখন যেন সবকিছু উধাও। শ্যাওলা নেই। কেঁচো মেলে না। চিংড়ি পোনা পাওয়া যায় হঠাৎ। একটা জেলিফিশও মরে না যে ওর হাড়-মাংস পেটে দেয়া যায়, যদিও খাবার হিসেবে মড়া হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কিন্তু খিদে বলে কথা! চারদিকে তখন শুধু খিদে আর খিদে। আর খিদের গপ্প।
সে সবের একটুও নিশানা নেই এখন। কী আয়েশেই না খাচ্ছে ওরা। কত বড় কপাল নিয়ে জন্মেছে যে পৃথিবীতে আসার পর এক বেলাও না খেয়ে থাকেনি। নিত্য-নতুন খাবারের খোঁজ পেয়ে যাচ্ছে। গত পরশু যেমন ইয়া মোটা মোটা সোনালি কেঁচোর ভোঁজ নিয়ে এসেছিল কয়েক জন। কাল গিয়েছিল চিংড়ি-ঝাঁকের কাছে, গেল্ডা এত খেল যে, সকালে ঠিক মতো ঘুম থেকে উঠতে পারে নি। ঠোঁটের সে কী হলো মা? তুমি যে কিছুই খাচ্ছ না?
ঘোর কেটে গোল্ডা বলে, না না, তোমরা খাও। আমার অত তাড়া নেই। তাড়াহুড়োর কী আছে? খাবার তো অনেক, কী বলিস?
ছেলেপুলেরা মাথা নাড়ে, না মা, সবাই মিলে খেতে শুরু করলে ফুরোতে সময় লাগবে না। আমাদের পেছনে পেছনে আরও কয়েক ঝাঁক এসেছে, দেখেছে?
গোল্ডা আঁতকে উঠে শ্যাওলার ঝোপে মুখ দেয়। কয়েক লোকমা খাওয়ার পর তার ঠোঁট ফসকে বেরিয়ে যায়, ইস, কী ডেলিশাস! মনে মনে বলে, এত স্বাদের খাবারটা এতদিন কোথায় ছিল। এক লোকমা শেষ হবার পর পরই মুখে আবার লালা জমতে থাকে। এত ভালো খাবার সে জীবনে খায় নি।
খাচ্ছে আর শরীর গরম হচ্ছে, শরীরে বল বাড়ছে। গোল্ডার মন বলে, নিয়মিত এই খাবার খেতে পারলে ছানাপোনারা শিগগিরই ডাঙর হয়ে উঠবে। সোনালি পাখনা গজাবে, পুচ্ছগুলো গিয়ে উঠবে রক্ত লাল। আর সেই পুচ্ছে দিনের সোনালি আলো পড়ে ঝকমক করবে চারদিক।
অন্য কোথাও থেকে মাছ যদি চলে আসে এদেশে ছানাপোনাদের দেখে চিৎকার করে উঠবে। বলবে, আরে, দেখো, দেখো, কী সুন্দর গোল্ডার ফিশ। এ বড় সুন্দর স্বপ্ন। চোখ বুজলে সে দৃশ্যটা যেন স্পষ্ট দেখতে পায় গোল্ডা। নাকি কালকের মতো এখনই চোখে ঘুমের টোকা পড়তে শুরু করেছে।
ঠিক বুঝতে পারছিল না গোল্ডা, এসময়, যদি না কানের কাছে ফের চিৎকার উঠত, ইস, মা কী দারুণ জিনিস মিস করছ, তুমি?
লজ্জা পেয়ে গোল্ডা দাঁত বার করে রাখে। বুঝতে পারে না, কী বলবে!
ছানাপোনারা গলা ছেড়ে চেঁচায়, মা, এই যে, পাথরের নিচে নেমে এসো। এ শ্যাওলাটা খাও। এতে আছে প্রোটিন আর গাদা গাদা ভিটামিন। নিয়মিত খেলে তুমি আর সহজে বুড়ো হবে না।
আগের চাইতে ছেলেপুলেদের জানাশোনাও এখন অনেক বেশি। হাজার রকমের খোঁজখবর রাখে ওরা। এই যে ফানজাই, ভেলভেটের মতো মসৃণ ও কোমল, জন্মে এর নামও শোনে নি গোল্ডা।
ওদের সময়ে কেঁচোর খোঁজে ঘোরাই ছিল একমাত্র কাজ। কত রকমের কেঁচো সোনালি, লাল, কালো ও বাদামি, ফসফরাসের ভরপুর। এক টুকরো খেলে তো পেট জ্যাম। মাঝে-মধ্যে শ্যাওলা কিংবা চিংড়ি-পোনা যে পড়ত না এমন নয়। তবে শ্যাওলাগুলো ছিল বিচ্ছিরি। পাথরে জমানো এক ধরনের আস্তরণের মতো, দেয়ালে যেমন জমে। কেউ কেউ বলে মস; তো সেই শ্যাওলা মুখে পাওয়ামাত্র তেতো স্বাদে জিবটা কাবু হয়ে পড়ত।
ফানজাই গুচ্ছে মুখ ডুবিয়ে খেতে খেতে গোল্ডার পুরনো দিনের কথা আবার মনে পড়ছিল। আহারে, এ সময় যদি মা বেচেঁ থাকত! গোল্ডাসহ চৌষট্টিটি মাছ জন্ম দিয়ে চতুর্দশ বারের মতো মা হয়েছিল মা। কিন্তু সেই বার যেন হঠাৎ করেই বুড়িয়ে গেল। সাত দিনের মাথায় কিনা গোল্ডাকেআ চিনতে পারে না। বলে, এ্যাই, কে রে তুই?
মাকে যদি এই ফানজাই নিয়মিত খাওয়াতে পারত, তাহলে নিশ্চয় অমন ভুল করত না। স্মরণশক্তি ঠিকঠাক থাকত, গায়েও বল পেত। ছানাপোনাদের নিয়ে রোজ একপাল্লা সাঁতরে নামতে পারত খুশি মনে। আর দীর্ঘ দিন বাঁচত।
মনে পড়ে, সেই বার পরিচয় পাওয়ার পর গোল্ডাকে কী খাতির করল মা!
বাড়িতে নিয়ে গেল জোর করে। গর্তে জমানো সোনালি কেঁচোর টুকরো বার করে খাওয়াল। জানতে চাইল, কোথায় থাকে এখন। বিয়ে করেছে কি-না। বরের স্বাস্থ্য কেমন। ওর বাড়িতে খাবার-দাবার ভালো কিনা। এক গাদা প্রশ্ন। স্নেহ-উপচে-পড়া কত যে কথা; তোর স্বাস্থ্য দেখেই বুঝতে পেরেছি, তুই খুব ভালো আছিস। রোজ ভালো খাবার-দাবার খাস। পর মুহূর্তেই প্রশ্ন, তোর নাম জানি কী বললি?
হেসে ফেলেছিল গোল্ডা।
এই সব মন খারাপ-করা স্মৃতির মাঝে, ছেলেমানুষের মতো মায়ের ওই প্রশ্ন, এখনো মনটাকে বড় কাবু করে দেয়। সারাটা জনম যে মা ছেলেপুলেদের খাবারের জন্য শুধু ছুটে বেড়াল, সেই মা কিনা নিজের সন্তানকে চেনতে পারে না।
হিসেব কষলে গালে হাত দিয়ে তাজ্জব বনে যায় গোল্ডা, মা আর সমুদ্র যেন কাছাকাছি থাকে সবসময়। সমুদ্র বছরের পর বছর খাবার যোগান দিচ্ছে। আর মা, এই তো শেষ বার তাকে-সহ চৌষট্টি জনকে জন্ম দিয়ে খাইয়ে-দাইয়ে দিব্যি তাদের বড় করে তুলল। একবার নয়, চৌদ্দ বারে ওই একজন মা’র বদৌলতে আট শত ছিয়ানব্বইটি গোল্ডেন ফিশ এসেছিল পৃথিবীতে। মা যেমন সমুদ্র, সমুদ্র তেমনি আরেক মা। দু’জনই জীবন দিয়ে খাবার যোগায়। সমুদ্র বেঁচে আছে আজও। মা’টা যদি আরও কয়েক বছর বাঁচত।
ভালো খেতে না পেয়ে মা অকালেই চলে গেল। মৃত্যুর ওই সকালটি এখনো স্পষ্ট চোখে ভাসে গোল্ডার। দুর্বল শরীরর বলে পাথরের ওপর উল্টে পযেছিল মা। কয়েকটি ধাড়ি চিংড়ি ছুটে এল শুঁড় উঁচিয়ে। গোল্ডা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চিমটির মতো নখর বাড়িয়ে থাবা মারল মাকে। তারপর একটার পর একটা প্রচণ্ড থাবা পড়তে লাগল।
পাথর থেকে গড়াতে গড়াতে মা শুধু বলল, খাবার, একটু খাবার। তারপর শেষ।
 মাছের মাগো মাছের মা

দুই
এখন খাবারের কোনো অভাবই নেই। প্রতিদিন ভালো ভালো খাবারের খোঁজ নিয়ে আসছে ছানাপোনারা। এই যে বিশাল ফানজাই বাগান, মনে হয় না তার ছানারা খেয়ে শেষ করতে পারবে।
শুধু কি ফানজাই? আজ ফানজাই খাও তো, অন্য কোথাও জমে যায় হাজার হাজার কেঁচো। কেঁচোর পেছনে দু’দিন লেগে থাকার পর শ্যাওলার বাগানে গিয়ে দেখো, আর ঢোকাই যাচ্ছে না, এমন ঘন।
তবে এক জিনিস টানা বেশি দিন খাওয়া ঠিক নয়। এতে অপচয়ের আশঙ্কা থেকে যায়। সাত দিনের একটা ম্যানু করে নেয়া ভালো। আজ মন্দ খেলে তো, কাল ভালো খাও। যে জিনিস কম হয়, তা কম খাওয়াই ভালো। গোল্ডা ভাবে, ছানাপোনাদের উদ্দেশে কথাগুলো বলে রাখা দরকার। কথাগুলো ওদের জন্য জরুরি।
মজার মজার খাবার পেয়ে ভবিষ্যতের কথা ভুলে গেলে মহাবিপদ নেমে আসে। অপচয়ে নেমে আসে অভিশাপ। খেতে খেতে সব সময় আগামীর কথা ভাবতে হয়। মিলেমিশে খাওয়া সবচেয়ে উত্তম।
কথাগুলো একর পর এক সাজাল গোল্ডা। তারপর যাচাই করল মনে মনে, কথাগুলো সত্যি কিনা। মন বলল, ঠিক।
তার জীবনের কথাগুলোই তো সাক্ষী।
ওরা যখন ছোট ছিল, তখন বেশির ভাগ গোল্ডেন ফিশই ছুটত কেঁচোর পেছনে। খাবারের পদ বাড়ানোর কোনো খেয়াল ওদের ছিল না। গোল্ডা পর্যন্ত মা হওয়ার আগ অবদি জানত না যে কেঁচো ছাড়া সাগরের নিচে আরো হরেক পদের খাবার আছে! সেও সমানে সবার সঙ্গে কেঁচো গিলেছিল।
দেখতে না দেখতে কেঁচোর আস্তানা শূন্য হয়ে গেল। যারা বেশ মোটাতাজা হয়ে উঠেছিল, খাবারের অভাবে কিছুদিনের মধ্যেই তারা শুকিয়ে জিরজিরে।
গোল্ডার মা ছানাপোনাদের নিয়ে ছুটল উত্তরে, অনেক দূরে। ওখানে নাকি খাবারের আধার। খাবার অবশ্য মিলেছিল, কিন্তু তুলনায় একেবারে কম। পেটই ভরলা না কারও।
এসব অভিজ্ঞতার কথা ছানাপোনাদের বলা দরকার। শোনো সোনামণিরা, আমরা খাবারের জন্য বেঁচে থাকি না, বেঁচে থাকার জন্য খাই। কথাটা মনে রাখা উচিত।
গোল্ডা পানিতে সামান্য বুদবুদ ওঠাল। তার মানে সংকেত, কথা আছে। ছানাপোনারা খাবার না খেয়ে মার দিকে তাকাল। সোনা’মনিরা, শোনো, আমি তোমাদের কিছু কথাবলতে চাই। মন দিয়ে শুনবে এবং মনে রাখবেÑ
ঠিক আছে-
এক সঙ্গে সবাই মাথা কাত করল এবং এক সঙ্গে অনেকগুলো কণ্ঠ সাগরের নিচে প্রধ্বিনি তুলল, ঠিক আছে।
খাবার নিয়ে ভেবে রাখা কথাগুলো একে একে বলতে লাগল গোল্ডা। সবশেষে জুড়ে দিল সেই বাক্যÑ সবাই মিলেমিশে খাবে। আর খাবারের অপচয় কখনো করবে না।
কথাগুলো বলতে বলতে হঠাৎ থেমে পড়ল সে। তার চোখ দুটো ততক্ষণে ছানাবড়া। কল্পনাও করে নি, এ রকম একটা দৃশ্য সে দেখবে।
তার মাত্র তিন হাত দূরে দাঁড়িয়ে একটা লিকলিকি মাছ কাঁপছে। মাছ নাকি মাকড়সা? শ্বাস নিতে পারছে না ভালো করে। লিকলিকে শরীর, হাড়-হাড্ডি খালি চোখে দিব্যি দেখা যাচ্ছে।
গোল্ডার বুকটা ধড়াস করে উঠল। তার গলার স্বর শোনাল আর্তনাদের মতোÑ এ কেরে? হেসে ফেলল এক দঙ্গল ছানাপোনা, একসঙেই তাদের উল্টো প্রশ্ন, তুমি ওকে চিনতে পারছ না মা?
গোল্ডা মাথা নাড়ল।
সে কী! ছানাপোনারা অবাক! ও যে আমাদেরই সবচে ছোট বোন, পুঁচকে।
বিস্ময়ে গোল্ডার জিভ বেরিয়ে গেল, বলিস কীরে, ও আমার মেয়ে? তা এমন রোগা-পটকা কেন?
হবে না? একটা ছানা উল্টে প্রশ্ন করল, বেচারি যে খেতেই পারে না তো মোটা হবে কোত্থেকে?
কেন, খেতে পারে না কেন?
তিন-চার দিন আগে পুচঁকেটা ধরা পড়েছিল মানুষের হাতে। ওরা ওকে নিয়ে একটা কাচের বাক্সে নাকি রেখেছিল। সেখানে বিশ্রি সব শব্দ। মাথার ওপর দিনরাত লাইট জ্বলে। বাক্সের ভেতরে আবার একগাদা গাছপালা বুদবুদ তোলার যন্ত্র।... এই সব দেখে বেচারি পুঁচকে নাওয়া-খাওয়াই ছেড়ে দিল। শেষে ওরা মড়া ভেবে ওকে কাল এখানে ফেলে দিয়ে গেল।
ওমা, এত সব কাণ্ড! অথচ আমি কিছুই জানি না। গোল্ডা নিজের ওপর বিরক্ত হলো। যে ছানাটা এতক্ষণ কথা বলছিল, সে এবার পুঁচকেকে তাড়া দিল, এ্যাই পুঁচকে, আমি অনেক বলেছি। এবার তোর কথা তুই বল।
পুঁচকে কথা বলার বেজায় চে®টা করতে লাগল। কিন্তু কোনো শব্দ পর্যন্ত বেরুল না। দু’দিনটি বুদবুদ উঠল মাত্র। খুব কষ্ট হচ্ছিল তার।
গোল্ডা বাধা দিয়ে বলল, থাক্, তোকে আর কষ্ট করতে হবে না। ক’দিন ভালো করে খাওয়া-দাওয়া কর। আর ধুমসে ঘুমা, তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কে জানি বলল, ও খেতেই পারে না। ঘুমাবে কী করে?
কেন? খেতে পারে না কেন?
পুঁচকে অনেক কষ্টে ফিসফিসিয়ে বলল, সবার সামনে খেতে আমার লজ্জা করে, মা।
গোল্ডা আকাশ থেকে পড়ল, বলিস কীরে? খেতে লজ্জা করে? তুই কি চুরি-ডাকাতি করে খাস। হাতাশায় একেবারে ভেঙে পড়ল তার গলা, আমার মেয়ে হয়ে তুই এসব কী বলছিস?
ক’জন ছানাপোনা বলল, মা, বাদ দাও তো। ওর সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই। পৃথিবীতে গিয়ে ওর বদ অভ্যাস হয়ে গেছে। কারও সামনে খেতে পারে না। চলো মা, আমরা চলে যাই। পুঁচকেটা পেট পুরে খাক।

তিন মাছের মাগো মাছের মাসবাই চলে যাবার পর নিস্তব্ধ হয়ে গেল চারপাশ। একেবারে সুনসান। শুধু ঢেউয়ের ঝাপটায় ক্রমাগত মাথা নাড়ছে ফানজাই গুচ্ছ।
পুঁচকে মুখ ডোবাল। প্রথমে এক লোকমা খেয়ে পরখ করে নেবে ভেবেছিল, কিন্তু আর চিবুনো বন্ধ করতে পারল না। বড় স্বাদ,বড় ভালো লাগছে খেতে। খাবারে যে এমন মজা, জানাই ছিল না পুঁচকের। খেতে খেতেই ফানজাই বাগানের আরও গভীরে ঢুকে গেল সে।
চোখে পড়ল বিশাল বড় একটি ঝামা-পাথর নাকি কোরাল পাথরের অংশ। না, আরও কয়েক কদম এগুনোর পর আরও কয়েকটি পাথর। একটার পর একটা সাজানো।
উত্তরের একটি পাথরের গায়ে এইটুকুন একটা ছিদ্র। পায়ে পায়ে এগিয়ে উঁকি দিল পুঁচকে। তার চোখ দুটো ইয়া বড় হয়ে গেল। ওমা, অত্ত, খাবার! রসগোল্লার মতো বড় বড় দুটি চোখ পুঁচকে দেখল। আর খাবার । সোনালি কেঁচো, লাল কেঁচো, ফানজাই, ভিতরে সাজানো। কষ্ট করতে হবে না, শুধু হা করে থাকলেই হবে, খাবার এসে ঢুকে যাবে মুখে।
জিভটা রসে টইটম্বু হয়ে গেল। আবার খিদে পেল তার। কতদিন ধরে সে ভালো খাবার খায় না। ছিদ্রের ওপর ফের চোখ রাখল পুঁচকে। এই পথে কি ভেতরে ঢোকা যাবে? চেষ্টা করতে লাগল পুঁচকে। তারপর অনেকক্ষণ চেষ্টার ফল পেল। ভেতরে ঢুকে যেতে পারল পুঁচকে।
প্রথমেই মনে হলো, এই গুহাটা কাউকে দেখানো যাবে না। এখানকার খাবার শুধু তার জন্য। এখানে বসে সে রকমারি কেঁচো খাবে, শ্যাওলা খাবে, ফানজাই খাবে, চিংড়ি পোনা খাবে। খাওয়ার পর হাই তুলবে। ঘুমাবে। ঘুম থেকে উঠে আবার খাবে। খেতে খেতে অল্প সময়ের মধ্যে সে রীতিমতো পালোয়ান হয়ে উঠবে।
গুহাটা এক্কেবারে অন্ধকার। প্রথমে কিছুই দেখার উপায় নেই। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে আসে সব। খাবারগুলো একেবারে আলাদা করে চেনা যায়। জায়গা-জমির নিশানাও মিলছে ঠিকঠাক। এক কোণে স্বচ্ছ পানি আয়নার মতো থির হয়ে আছে। এটা হবে তার ড্রেসিং রুম। পুঁচকে ভাবল, মাঝে-মধ্যে এখানে এসে চেহারা দেখে নেয়া যাবে। তারপর সে খেতে শুরু করল। পুঁচকে একটু খায়, একটু ঝিমায়। এই করে করে অনেকক্ষণ কেটে গেল।
গুহার ভেতরে নেমে এল আরও অন্ধকার। সূর্য বোধহয় ডুবে গেছে। এখন কিসসু দেখার উপায় নেই।
বেরুনোর কোনো চেষ্টা না করে পুঁচকে ঘুমানোর আয়োজন করতে লাগল।
এই বরং ভালো। বেরুনোর আর দরকার কী? এখানে থাকবে, খাবে আর ঘুমাবে। ক’দিন পর সবাই তার কথা দিব্যি ভুলে যাবে। আর কেউ খুঁজতে আসবে না, তখনই হবে মহামজা। এ জায়গাটা হবে তার, একান্তই তার। এই বিশাল গুহার একচ্ছত্র রাজা হবে সে। এত খাবার এখানে থাকতে বাইরে গিয়ে সবার সঙ্গে কষ্ট করার কোনো মানে নেই।
মনের সঙ্গে বোঝাপড়ার পর পুঁচকে চোখ বুজল। ঘুম, ঘোর ও খাওয়া-দাওয়ায় কেটে গেল চার দিন।
পঞ্চম দিনের ভোরে গুহার বাইরে সে বুকফাটা আর্তনাদ শুনতে পেল, পুঁচকেরে, ও সোনামেয়ে, কই গেলি তুই?
ছুটে প্রায় গুহার মুখে চলে এল পুঁচকে, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিল। উত্তর দিলেই জানাজানি, জানাজানি হলে বিপদ। নিমিষে সব খাবার শেষ হয়ে যাবে। তার ভাইবোনের সংখ্যা কি আর কম? একবার এই গুহায় ঢুকতে পারলে সব উজাড় হতে এক ঘণ্টাও লাগবে না।
সেই সকালে খুব একচোট কাঁদল পুঁচকে। নিজেকে গালাগালি দিল প্রচণ্ড। তুই বড় পাষাণীরে। তারপর নিজেই প্রশ্ন তুলল, কে পাষাণী, আমি, নাকি এই খাবার।
কান্না সামলে সে চোখে পানির ঝাপটা দিল। তারপর তিন-চারটা চিংড়ি-পোনা খেয়ে ফেলল ঝটপট। পোনাগুলো যেন ঘুমের ক্যাপসুল। এমন স্বাদু যে, পেটে পড়া মাত্র পাতা দুটো বুজে এল আয়েশে।।
ঘুম ভাঙল সেই বিকেলে। ঘুম থেকে উঠে আবার খেলো। সবুজ শ্যাওলা আর কয়েক টুকরো ফানজাই। পরিমাণটা বোধহয় বেশি হয়ে গেছে। শরীরটা ভারি হয়ে এল। ঘুমিয়ে হিস-হিস শব্দ শুনতে পেল।
উঁকি দেয়ার পর পুঁচকের শরীর এবোরে হিম। লম্বা বেশ কয়েকটি ডোরাকাটা সাপ। এগুলো আবার মাছ খাওয়ার ওস্তাদ। কে জানে, খোঁজখবর নিয়েই এ দিকটায় এসেছে কিনা। ফানজাই বাগানের গভীরে ঢুকে গেল পুঁচকে। তারপরও দুরুদুরু ভাবটা গেল না মন থেকে। যদি এখানে ঢুকে পড়ে?
না, পানির শব্দেই টের পেল, ডোরাকাটাগুলো চলে যাচ্ছে। হাঁফ ছাড়ল সে।
কিন্তু রাতে এক ফোঁটা ঘুম হলো না। ভোর হলো। ঢেউ ঢুকছে গুহায়, ঢেউয়ের সঙ্গে আসছে রকমারি খাবার। সাদা চিংড়ির পোনা, সোনালি কেঁচো আর কেঁচোর ডিম- এত খাবার কোনোদিনও ফুরোবে না। এ ভোরটা অন্যরকম মনে হলো তার কাছে।
পুঁচকে কানের পাশ থেকে সেই ভয়ঙ্কর হিসহিস শব্দগুলো তাড়াতে পারছে না। ওই শব্দ তাকে বারবার মা ও ভাইবোনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। পুরনো দিনগুলো ভেসে উঠছে চোখের সামনে। কতদিন হলো সে ভাইবোন ছাড়া? কতদিন হলো সে এখানে একা বাস করছে?
পুঁচকে দৌড়ে গেল সেই স্বচ্ছ পানির আয়নার কাছে। মনে মনে বলল, দেখ তো দিদি, আমি কি খুব বড় হয়ে গেছি?
আয়না কোনো উত্তর দিল না। কিন্তু পানির আয়নায় নিজের মস্ত বড় শরীর দেখে সে নিজেই আঁতকে উঠল। এ তো দেখছি রীতিমতো একটা হাঙর-ছানা। কোথায় সেই এইটুকুন পুঁচকের শরীর? নিজেকে চেনার কোনো উপায় নেই। আবার চোখ খুলল সে, ভয়ে ফের বন্ধ করে ফেলল, আবার তাকাল। বুকের মধ্যে ধুকধুক শব্দটা বাজতে লাগল সারাক্ষণ।
বুঝে গেল পুঁচকে। যা বোঝার, তা এতক্ষণে জলের মতো পরিষ্কার। তার দিন ফুরিয়ে এসেছে। কেন সে এভাবে বসে বসে হাঙরের মতো গোগ্রাসে গিলেছে? এ হচ্ছে তারই ফল। এক সময় ভেবেছিল, খাবার ফুরোলে সে এখান থেকে বেরিয়ে যাবে। আজ বুঝতে পারছে, এখানকার খাবার কখনো বেরুতে পারবে না।
না,না, না। চিৎকার করে উঠল পুঁচকে। তারপর পিছু হটল। প্রাণপণ শক্তিতে চেষ্টা করল বাইরে বেরুতে। পারল না। গুহামুখে ছিদ্র তো আগের মতো, মাঝখান থেকে কয়েক গুণ বড় হয়ে গেছে সে।
রাগে, দুখে, যন্ত্রণায় সে আবার খেতে শুরু করল। একবার ফানজাই খায়, একবার শ্যাওলা, আরেক বার চিংড়ি পোনা। খেয়ে সব ধ্বংস করে দেব, শেষ করে দেব।
আশ্চর্য, সে খাবার কমতির কোনো লক্ষণ নেই। বরং গুহামুখ দিয়ে সমানে ঢুকছে শুধু খাবার আর খাবার। সোনালি কেঁচো, চিংড়ি পোনা, হরেক রকমের শ্যাওলা।
হঠাৎ খুব কান্না পেল তার। সে ছুটে গেল গুহামুখে, চিৎকার করে ডাকল সবাইকে, খাবার, মজার খাবার, কে কে খাবে এসো। তার চিৎকারে অসংখ্য মাছ ছুটে এল, কিন্তু কেউ গুহায় ঢোকার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করল না। একজন তো বাঁকা হেসে বলল, সামান্য খাবারের জন্যে পুরো জীবনটা খোয়াব নাকি? পুঁচকে বলল: না না সামান্য কোথায়? এখানে সব পুষ্টিকর খাদ্য। একবার এসেই দেখো না। একটা গোল্ডেন ফিশ বলল: তোমার গলার স্বর খুব চেনা মনে হচ্ছে। অনেক দিন আগে আমার বোন হারিয়ে গেছিল, ওর কথাবার্তা তোমার মতোই ছিল।
...... এই গুহায় ঢুকে কি প্রাণ হারাব?
পুঁচকে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলল।
মাছগুলো এক এক চলে গেল, সঙ্গে সঙ্গে নেমে এল নীরবতা, আর সেই অজানা ভয়। পেছনে হটে গুহার বাইরে আবার বেরুনোর চেষ্টা করতে লাগল পুঁচকে।
একবার, দু’বার, তিনবার। বারবার।
ভীষণ হাঁপাচ্ছে সে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। বুকের খাঁচাটা বুঝি এখনই ভেঙে যাবে। চোখ দুটো জলে ভরে গেছে। এক জীবনের সব কান্না বুঝি আজই ঝরে পড়বে। ঝরতে শুরু করল। গুহামুখে ঠিক এসময় হিসহিস শব্দ। এবার একটি দুটি নয়, অসংখ্য ডোরাকাটা শব্দ হচ্ছে একসঙ্গে, হিসহিস।
আবার প্রাণপণ শক্তিতে নিজেকে বাইরে ঠেলে দিতে চাইল পুঁচকে। পারল না। সে তারস্বরে চিৎকার করে উঠল, মা, মাগো...।
আজও সাগরের তলদেশে সে চিৎকার ভেসে বেড়ায়।(পরবির্তন)
সেই হৃদয়বান মানুষটি

সেই হৃদয়বান মানুষটি


:: ফারুক চৌধুরী :: 
প্রিয় ফারজানা
প্রত্যেক পনেরোই আগস্টে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি। গভীর শ্রদ্ধা ভরে। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি আমদের জাতীয় ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে আমার এবং আমাদের মতো লক্ষ-লক্ষ দেশবাসীর রাজনৈতিক সুপ্তি ভঙ্গ করেছিলেন। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি না থাকলে স্বাধীনতার সূর্যোদয় এদেশের কবে হত জানি না। স্মরণ করি এই মানুষটিকে যিনি ইতিহাসের কাছে আমাদের প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ উপহার।
সাড়ে তিনটি ঘটনাবহুল বছরে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে তার সান্নিধ্যে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। মনের গহনে জমা আছে অনেক অনেক স্মৃতি। উষ্ণ, হৃদয়বান, সাহসী এই মানুষটির, এই বাংলার জল মাটি আকাশকে সমস্ত হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা এই মনুষটির।
তার সঙ্গে আমার শেষ দেখাটির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে তাঁর সঙ্গে শেষ কথোপকথন। তা ছিল তোমাকেই কেন্দ্র করে।
কিংস্টন, জামাইকা। ৬ মে ১৯৭৫। কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে লন্ডন থেকে আমি ছিলাম বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী। সম্মেলন শেষে বিদায় নেয়ার পালা। বঙ্গবন্ধু সদলবলে ফিরে যাবেন দেশে। আর লন্ডনে অবস্থানকারী আমি ফিরব আলাদাভাবে।
আমি কিংস্টনের পথে লন্ডন ছাড়ার সময় তুমি তোমার অতি সাধারণ ক্যামেরাটি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলে। বলেছিলে, ‘পাপা, আমার ক্যামেরায় বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলে এনো।’
কনফারেন্সর ব্যস্ততায় তোমার অনুরোধটির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আর যখন মনে হয়েছিল তখন ঠিক সুযোগ বা সাহস হয় নি ক্যামেরা হাতে বঙ্গবন্ধুর সামনে দাঁড়ানোর।
কিংস্টনের প্যাগাসাস হোটেলে আমার কামরাটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্যুটের কাছেই, যতদূর মনে পড়ে মাত্র দুই কামবার ব্যবধানে। ৬ মে ভোরে তার স্যুটে গিয়ে হাজির হলাম। বঙ্গবন্ধু তখন কনফারেন্সে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার পরনে কালো ট্রাউজার আর সাদা ধোপাদুরস্ত ডাবল কাফ একটি শার্ট। গলাবন্ধ কোটটি তিনি পরেন নি তখনো। তাঁর বসবার ঘরের একটি সোফায় বসে সেদিন খবরের কাগজ পড়ছিলেন।
আমি যেতেই বললেন, কী তুমি কবে লন্ডনে ফিরে যাচ্ছ?
বললাম, ‘স্যার আমি আগামীকাল নিউইয়র্ক হয়ে লন্ডন ফিরে যাচ্ছি।’
বললেন, ‘ঠিক আছে। নিউইয়র্কে বেশি থেকো না যেন। তাড়াতাড়ি ফিরে যেও। লন্ডনে তো অনেক কাজ।’ তারপর মৃদু হেসে বললেন, ‘তোমার জন্য খবর আছে। তোমার তো লন্ডনে বছর তিনেকের উপর হলো। ভাবছি তোমাকে দেশে নিয়ে আসব। মনে-মনে তৈরি থেকো।’
সেই সময়ে দেশে বদলির কথা আমি ভাবছিলাম না মোটেও। কিন্তু রাষ্ট্রপতির আদেশ। মৌনতা সম্মতি লক্ষণ ভেবে চুপ থাকলাম কিছুক্ষণ। তারপর বললাম, ‘স্যার, আমার মেয়ে এই ক্যামেরাটি আমাকে দিয়েছে আপনার ছবি তুলে নেয়ার জন্য। আপনাকে কষ্ট দেব।’
‘কষ্ট কেন? তোমার মেয়ের আদেশ। তোলো ছবি।’
সোফায় বসা অবস্থায় কামরার ভেতরেই তার একটি ছবি নিলাম।
তীক্ষè দৃষ্টি বঙ্গবন্ধুর। বললেন, তোমার ক্যামেরাতে তো ফ্লাশ লাইট নেই। চলো, বাইরে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াই। এই ছবিটি যদি না ওঠে, বাইরের রোদে ওই ছবিটি আসবে নিশ্চয়ই।
বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধু। বললেন, ‘তোমার মেয়েকে বলো, শার্ট পরা ছবি কিন্তু আমার খুব বেশি নেই।’
পনেরই আগস্ট ১৯৭৫-এর ভোরে যখন লন্ডনে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারবর্গের হত্যার মর্মান্তিক খবর পৌঁছাল আমার তখন ২৬ আগস্টে ঢাকা ফিরে আসার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সরকারি আদেশের রদবদলে সেই যাত্রায় আর ঢাকা আমার ফেরা হয় নি।
আমার অপেশাদার হাতে তোমার অতি সাধারণ ক্যামেরায় তোলা অসাধারণ এই মানুষটিকে ছবি দুটি আজ আমাদের পারিবারিক অ্যালবামের অমূল্য সংযোজন।
সেদিন ছবি দু’টি তুলতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল ক্যামেরা হাতে আমি আর তাঁর অধঃস্তন একজন কর্মচারি নই। আমি একজন ফটোগ্রাফার, তাঁর ছবি তুলছি। আর আমরা দু’জনই যেন রক্ষা করছি লন্ডনের স্কুলে পড়া একটি মেয়ের আশাভরা অনুরোধ। আর অনুরোধটি রাখতে পেরে তিনি যেন প্রসন্ন।
অত্যন্ত হৃদয়বান মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।(পরিবর্তন)
লাল টুকটুক

লাল টুকটুক


:: আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন :: 
লাল টুকটুক ডালিম ফুল
ডালিম ফুলে মৌ
টুকটুকে লাল শাড়ি পরে
আসলো নতুন বৌ।
বৌ এসেছে পালকি চড়ে
ছ’জন বেহারা
শক্ত লাঠি বাগিয়ে হাতে
জোয়ান চেহারা।
বৌয়ের সাথে গুনগুনিয়ে
মৌমাছির ঝাঁক
ডালিম গাছে বাঁধলো ওরা
মস্ত বড় চাক।
মৌচাকে মৌ টুকটুকে বৌ
পাকা ডালিম লাল
কথায় কথায় শরমরাঙা
নতুন বৌয়ের গাল।
টুকটুকে বৌ মেন্দি বাটে
নোলক দুলিয়ে
আলতো হাতে দেয় সে পায়ে
আলতা বুলিয়ে।
পদত্যাগ করছেন ছাত্রদলের ৩০ কেন্দ্রীয় নেতা!

পদত্যাগ করছেন ছাত্রদলের ৩০ কেন্দ্রীয় নেতা!

ঢাকা : অর্থ কেলেঙ্কারী, বুড়োদের প্রাধ্যান্য, নিবেদিতদের অবমূল্যায়ন সহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলে বিদ্রোহের আভাস পাওয়া গেছে। যে কোনো সময় নতুন এই কমিটির ৩০ কেন্দ্রীয় নেতা পদত্যাগ করতে পারেন। ইতমধ্যে এসব নেতা তাদের পদত্যাগ পত্র প্রস্তুত করেছেন বলে প্রমান এসেছে ডিফারেন্ট নিউজ-এর হাতে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পূর্নাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হয়েছে গত ১৬ই এপ্রিল। কিন্তু নানা কারণে এই কমিটি থেকে নিবেদিত নেতা-কর্মীরা মূখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এই কমিটি দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পর্যন্ত ফুল দিতে পারেনি গত ৪৫ দিনেও। 
অভিযোগ এসেছে, ২৯১ সদস্যর কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাই হয়নি অনেক ত্যাগী নেতার। আর অবমূল্যায়ন করা হয়েছে অন্তত ২০০ জন নেতাকে। তাইতো কমিটি ঘোষণার পর থেকে জেল, জুলুম, নির্যাতন ভোগকারী ত্যাগী নেতারা বিক্ষোভ শুরু করেছে। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনানুষ্ঠানিক ভাবে বিদ্রোহ শুরু করে তারা। পরে দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও জুয়েল গ্র“পের এক নেতাকে পিটিয়ে আহত এবং দলীয় কার্যালয়ের সামনে জুয়েল হাবীবের কুশপত্তিলাকা দাহ সহ আবার ও ককটেল বিস্ফোরন ঘটায় তারা। সর্বশেষ সাভার ট্রাজেডির ঘটনার আগের দিন চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের সামনে প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করে বিদ্রোহীরা। তারপর সাভার ট্রাজেডীর কারনে দীর্ঘ সময় বিক্ষোভ থেকে বিরত থাকলেও দলের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জেল থেকে মুক্ত হলে বিদ্রোহী নেতারা তার সাথে দেখা করেন। এময় এ্যানি তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই আশ্বাস দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনের একটি হোটেল সভা করে। সেখানে ত্যাগী ও পদবঞ্চিত নেতারা বাদেও বর্তমান কমিটি সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ৩০জন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই এই কমিটিতে অবমূল্যায়িত হয়েছেন বলে সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পদবঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তারা দু-একদিন মাঝেই পদত্যাগ করবেন বলে ঐ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম আজম সৈকত। 
তিনি বলেন, এতদিন আমরা বিক্ষোভ করে তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সুযোগ চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমনকি ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকও এব্যাপারে নিশ্চুপ। 
ঐ নেতা জানান, আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন অনুসারী ১০জন কেন্দ্রীয় নেতা, আলিম গ্র“পের ৫ জন সাংগঠনিক সম্পাদক, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন এর অনুসারী ১০ জন সহ হাসান মামুন গ্র“প ও নুরুল ইসলাম নয়ন গ্র“পের অবমূল্যায়িত কেন্দ্রীয় নেতারা। যাদের সবাইকে এই কেন্দ্রীয় কমিটিতে রেখে অপমান করা হয়েছে। 
পদবঞ্চিতদের আরেক নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুর রহমান সিকদার জানান, যেহেতু এই কমিটি ম্যাডাম জিয়ার দেওয়া এবং তার নির্দেশে আমরা কোনো বিদ্রোহ না করে এই কমিটির নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলাম। তাই ৫ সদস্যর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পরে কোন ধরনের মিছিল মিটিং এ অনুপস্থিত না থেকেও বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়েছি। বর্তমান কমিটি হয়েছে অর্থ ও লবিংয়ের জোরে। তাই অর্থ দিতে না পারায় কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত হতে পারিনি। কমিটির ঘোষণার পরদিন থেকে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে বিক্ষোভ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের আশ্বাস পেয়ে দীর্ঘদিন বিক্ষোভ থেকে বিরত থাকি কিন্তু তাদের কোন পদক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, এখন আমরা সবাই বৈঠকে মিলিত হয়ে একমত হয়েছি বিদ্রোহের জন্য। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ত্যাগী নেতা আব্বাস আলী বলেন, আমি দীর্ঘ নয় বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতি করি। ম্যাডাম জিয়ার দেওয়া কমিটির নেতৃত্ব মেনে নিয়ে এই কমিটির জন্য আমি ও আমার এক সহকর্মী সর্ব প্রথম তাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ত ঝরাই, কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো মূল্যায়ন পাইনি। পূর্নাঙ্গ কমিটিতে ঠাই হয়নি আমাদের। 
তাইতো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দিয়ে তাদের কাছে দাবি দাওয়া পেশ করে আসছিলাম, কিন্তু তারা যেহেতু দীর্ঘ ৪৫ দিনেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি, সেহেতু বিদ্রোহ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। 
ঐ নেতা জানান, সম্প্রতি ছাত্রদল নেতাদের অর্থ কেলেঙ্কারী, বুড়োদের প্রাধ্যন্য, নিবেদিতদের অবমূল্যায়ন সহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধরা একটি বৈঠক করেছে। ঐ বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোনো সময় নতুন এই কমিটির খলিলুর রহমান খলিল ও ফারজানা ইয়াসমিন লিপিসহ ৩০ কেন্দ্রীয় নেতা পদত্যাগ করতে পারেন যে কোনো সময়। ইতমধ্যে এসব নেতা তাদের পদত্যাগ পত্র প্রস্তুত করেছেন বলে প্রমান এসেছে ডিফারেন্ট নিউজ-এর হাতে।
এব্যাপারে বর্তমান কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান খলিল বৃহস্পতিবার ডিফারেন্ট নিউজকে বলেন, আমি আমার পদত্যাগ পত্র প্রস্তুত রেখেছি। যে কোন সময় আমি তা ম্যাডামের কাছে পৌছে দেব। কেন পদত্যাগ করছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান কমিটিতে আমাকে রেখে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এবারই নজীরবিহীন দূর্নীতি হয়েছে। এসব বিষয় ছাত্র রাজনীতির জন্য কলঙ্কজনক। আমি একজন নিবেদিত ছাত্র নেতা হিসেবে এদের দায় নিতে পারি না।
বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমান কমিটির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম ওবায়দুল হক নাসিরকে টেলিফোনে পাওয়া গেলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি।(ডিনিউজ)
খুলনায় মনির পক্ষে মাঠে অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম

খুলনায় মনির পক্ষে মাঠে অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম

খুলনা : খুলনাকে আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এবং নগরবাসীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনিকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি মাজিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে নগরবাসী উন্নয়নে মিথ্যা আশ্বাসের ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই পায়নি। তাই শোষণ ও বঞ্চনার আবসান ঘটাতে ১৫ জুনের নির্বাচনে আনারস প্রতীকে ভোট দিতে তিনি সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। 
ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরাম সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির পক্ষে গণসংযোগকালে এ আহবান জানিয়েছেন অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম। শুক্রবার বেলা ১১টায়  তার নেতৃত্বে একটি টিম নগরীর কে ডি ঘোষ রোড, ক্লে রোড, ডাকবাংলো মোড়, পিকচার প্যালেস, খান এ সবুর রোড, স্যার ইকবাল রোড, থানার মোড় এলাকায় গণসংযোগ করে। তারা ওই সব এলাকার ব্যবসায়ী, পথচারী, সাধারন মানুষ, যানবাহন চালক-যাত্রীদের কাছে আনারস প্রাতীকের লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় মনিরুজ্জামান মনির প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট এস এম কফিকুল আলম মনা, আমির এজাজ খান, মোল্লা আবুল কাশেম, মনিরুল হাসান বাপ্পী, কামরুজ্জামান টুকু, আশরাফুল আলম নান্নু, ডা. এম এ মজিদ, বিকাশ কুমার মিত্র, কামরান হাসান, এবাদুল হক রুবায়েদ, কাজী হাবিবুর রহমার রিটু, সৈয়দ আজাদ হোসেন, জাফরী নেওয়াজ চন্দন, জাবির আলী, নাদিমুজ্জামান জনি, তানভীরুল আজম রুম্মান, মোঃ মিরাজুর রহমান, আফজাল ফরাজী, মিরাজ হোসেন, বাদশা গাজী, জীবন মন্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। (ডিনিউজ)
বরিশালে আওয়ামী লীগ থেকে দুই প্রার্থী

বরিশালে আওয়ামী লীগ থেকে দুই প্রার্থী


চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্যে তিনটিতেই দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। রোববার বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী ব্যতীত বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন।
তবে বরিশালে আওয়ামী লীগ সমর্থক মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হক মামুন ও সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ দুজনের কেউই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেননি।
রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট এ চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল রোববার।
এ চার সিটিতে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ছিলেন মোট ২২ জন। এতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীই বেশি ছিলেন। শেষ দিনে দলীয় সমঝোতার প্রেক্ষিতে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন:
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী জামায়াত নেতা মো: জাহাঙ্গীর তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। এ কারণে এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি সমর্থিত মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক মেয়র এ কে এম খায়রুজ্জামান লিটনের মধ্যে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন:
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক তিনজন মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। রোববার সকালে তিন জনের মধ্যে শফিকুল আলম মনা ও সেকেন্দার জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে বিএনপি সমর্থিত মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আব্দুল খালেকের মধ্যে। এছাড়া, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন:
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী কামরুল আহসান শাহীন ও এবায়দুল হক চাঁন মেয়র পদ থেকে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ ও যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক মামুন দুজনের কেউই তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেননি। এ দুজন ছাড়াও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকছে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন:
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক চার জন মেয়র পদে মনোয়নপত্র পত্র জমা দেন। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির হস্তক্ষেপে রোববার সকালে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন নাসিম হোসাইন।
বিকেলে বিএনপির শামসুজ্জামান জামান ও আব্দুল কাইয়ূম জালালি পংকি মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। এছাড়া, জোটের সমঝোতার অংশ হিসেবে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জামায়াতের নগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
শেষ পর্যন্ত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণার অনুমতি দেয়া হবে। একই সাথে প্রতীকও বরাদ্দ দেয়া হবে।(আকিদুজ্জামান আকিব,পরিবর্তন)
কেসিসি মেয়র নির্বাচনে চার ইস্যু

কেসিসি মেয়র নির্বাচনে চার ইস্যু

খুলনা: খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) কে মেয়র নির্বাচিত হবেন তা চারটি ইস্যুর ওপর নির্ভর করছে। শ্রমিক, তরুণ প্রজন্ম, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর ভোট ব্যাংকই প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের প্যারামিটার। প্রায় দুই লাখ নির্ধারিত ভোট কে কতটা টানতে পারেন এখন তাই দেখার অপেক্ষায় খুলনাবাসী। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কাজ করা একাধিক নাগরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই চারটি ফ্যাক্টরই কেসিসি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেসিসি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী তিনজন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির মধ্যে। জাতীয় পার্টি সমর্থিত অপর মেয়র প্রার্থী কফিকুল ইসলাম মধু সম্মানজনক ভোট আদায়ের চেষ্টা করছেন।
নাগরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এবার নির্বাচনে ক্রমিকদের ভোট সবচাইতে বড় ফ্যাক্টর। নগরীর খালিশপুর ও রূপসা শিল্প এলাকায় ৫০ হাজারেরও বেশি ভোট আছে এ পেশাজীবী শ্রেণীর। বিএনপি আমলে বন্ধ করা পিপলস জুট মিল (খালিশপুর নামকরণ করে) এবং দৌলতপুর জুট মিল চালু করায় এ দুটি মিলের ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রতি খুশি। তবে পাশাপাশি রাষ্ট্রায়াত্ব অন্য মিলগুলোর মতো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় তাদের মনে চাপা ক্ষোভ আছে। এসব মিলের কমিকদের দাবি যে প্রার্থী তাদের বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্র“তি দেবেন তারা তার পক্ষে কাজ করবেন।
এছাড়া ঘোষণা দিয়ে চালু করতে না পারা খালিশপুরের নিউজপ্রিন্ট মিল ও রূপসার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ক্রমিকরা রয়েছে ক্ষুব্ধ। সেই সঙ্গে চালু প্রতিষ্ঠান খুলনা হার্ডবোর্ড মিল বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানেও কমিক অসন্তোষ আছে। এসব শ্রমিকের সেন্টিমেন্ট যে প্রার্থী কাছে টানতে পারবে তার দিকেই ঝুঁকবে তারা।
শ্রমিকদের ভোট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সদ্যবিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, বিএনপির বন্ধ করা মিল আমরা চালু করেছি। আমি আশাবাদী সেই কৃতজ্ঞতাবোধের জায়গা থেকে ভোটাররা আমাকে বিমুখ করবে না। সরকার শিগগির সব আইনগত জটিলতা কাটিয়ে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি চালু করবে। এ জন্য আমি দৃঢ় আশাবাদী শ্রমিক শ্রেণীর ভোট তালা প্রতীকে পড়বে।
অনুরূপ আশাবাদী সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। তিনি বলেন, সরকার প্রতিশ্র“তি দিয়েও চালু করতে পারেনি নিউজপ্রিন্ট মিল ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। নতুন করে বন্ধ হয়েছে খুলনা হার্ডবোর্ড মিল। যে দুটি মিল চালু হয়েছে সেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কমিকরা পাচ্ছে না। জিনিস-পত্রের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় অভাব-অনাটনে আছে তারা। তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারা পরিবর্তন চায়। আমি বিশ্বাস করি তাদের ভোট আনারস প্রতীকে পড়বে।
তরুণদের ভোট পেতে খালেক-মনির যত কৌশল: তরুণ প্রজন্মের ভোট খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর। মেয়র প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণে নতুন ভোটাররাই ব্যবধান গড়ে দেবে। জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ প্রায় অর্ধ লাখ ভোটারকে কাছে টানতে নানা কৌশল প্রয়োগ করছে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জাতীয় পার্টি সমর্থিত অপর মেয়র প্রার্থী কফিকুল ইসলাম মধুও নিজেকে তরুণ হিসেবে উত্থাপন করছেন। সোজা কথা বলে বিরাগভাজন হওয়া এড়াতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাগরিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে নতুন প্রজন্মের বিষয়টি।
তারা জানান, কেসিসির ৩১টি ওয়ার্ডে এবার মোট ভোটার চার লাখ ৪০ হাজার ৬৪৭ জন। এর মধ্যে দুই লাখ ২৪ হাজর ৫৩৪ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৬ হাজার ১৩৩ জন মহিলা। গতবারের তুলনায় এবার ভোটার বেড়েছে ৪১ হাজার ২৬৯ জন। এই বাড়তি ভোটার হলো তরুণ প্রজন্মের। যাদের অধিকাংশই আধুনিক, রুচিশীল ও তথ্য প্রযুক্তির নির্ভর জীবনে অভ্যস্ত। এই শ্রেণী ক্ষুব্ধ তাদের জন্য নগরীতে বিনোদন কেন্দ্র, খেলাধুলা বা দম ফেলানোর মতো জায়গা না থাকায়। সেই সঙ্গে শিক্ষা কেন্দ্রে সন্ত্রাস বন্ধ ও মাদকে ভাসা নগরীবাসীকে মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্র“তি চান তারা। আরো চান বেকারত্ব দূর করার উদ্যোগ প্রতিদ্বন্দ্বী মূল দুই প্রার্থীর মধ্যে যে তরুণদের এই উপলব্ধি ধারণ করে তা বাস্তবায়নের কথা শোনাতে পারবে তাদের অধিকাংশই তার প্রতীকে সিল মারবে।
নতুন এ ভোটরদের কাছে টানতে নানা কৌশল নিয়েছে তিন মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপি সমর্থিত মনিরুজ্জামান মনি ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত কফিকুল ইসলাম মধু। তারা তুরুণদের ভোট পেতে সরাসরি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, অভিভাবকদের অনুরোধ ও ছাত্র-যুব সংগঠনকে কাজে লাগাচ্ছেন।
মঙ্গলবার নগরবাসীর মুখোমুখি অনুষ্ঠানে খালেক তালুকদার বলেন, “তরুণদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য আমি কাজ করছি। নগরীকে আইটিবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলছি। সেই সঙ্গে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য যা যা করণীয় তা করছি। তরুণদের ভোট পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। 
মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত মেয়র থাকাকালীন সময় কেসিসির ওয়েব সাইট চালু করি। নগর ভবনকে ডিজিটালাইজ করি। নতুন ভোটররা তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর। তাদের কর্মসংস্থান, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ দিতে চাই। খুলনাকে মাদকমুক্ত করে তাদের মনন বিকাশে কাজ করবো।
শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, তিনজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আমিই তরুণ। আমি বিশ্বাস করি তরুণরা আমার প্রতি আস্থা রাখবে।
জাপা প্রার্থী ভোট কাটবে খালেকের: স্থানীয় সরকার নির্বাচন অরাজনৈতিক হলেও রাজনৈতিক উত্তাপের কমতি নেই। ভোটারা প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয়েই চেনেন। শুধুমাত্র দলীয় প্রতীকের বাইরে আলাদা মার্কায় ভোট দিতে হয়, এই যা পার্থক্য। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ১৪ দলের মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে নেই জাতীয় পার্টি। কারণ তারা আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। তাও আবার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা সভাপতি কফিকুল ইসলাম মধু। তাকে বসাতে না পেরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কৌশলে পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন নাগরিক বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, মধু ভোট কাটবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের।
খুলনার নাগরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এক সময় জাতীয় পার্টির হয়ে কেসিসি নির্বাচনে ৪৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন মরহুম এসএমএ রব। এখন জাতীয় পার্টির সেই অবস্থা নেই। রবের মতো ইমেজ মধুর না থাকলেও সম্মানজনক ভোট কাটবেন তিনি। পার্টির একাধিক কর্মী ধারণা দিয়েছেন ৩০ হাজার ভোট ব্যাংক তাদের আছে। কিন্তু এর মধ্যে কত তিনি পাবেন তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। এখন মূল বিষয় হলো মধু কার ভোট কাটবেন বা তিনি যাদের ভোট পাবেন প্রার্থী না হলে ওই ভোট কে পেতেন? এর সঠিক ধারণা না পাওয়া গেলেও পার্টির নেতা-কর্মীরা মনে করেন মধু যদি খালেকের সঙ্গে নির্বাচনী কাজ করতেন তাহলে তার পক্ষেই অধিকাংশ ভোট পড়তো।
কিন্তু তিনি প্রার্থী হওয়ায় জাতীয় পার্টির একটি মুরব্বি অংশ গোপনে মনি পক্ষে কাজ করছে বলে শোনা যাচ্ছে। ওই মুরব্বি অংশটি মনে করেন মধু ভোট কাটবে খালেকের। এ অবস্থা কতটা কাটিয়ে সামনে এগুতে পারবেন খালেক তালুকদার এখন তাই দেখার অপেক্ষা নগরবাসী।
তবে তালুকদার আব্দুর খালেক মনে করেন নির্বাচনে প্রার্থী যে কেউ হতে পারেন। এটা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। অরাজনৈতিক নির্বাচন হওয়ায় মধু প্রার্থী হয়েছেন। মধু প্রার্থী হওয়ায় তার নিজের কোনো ক্ষতি হবে না বলে তিনি মনে করেন।
শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, “নিজের ও দলের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের সুযোগ পেয়েছি। ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ হবে জাতীয় পার্টির কক্তি।
জামায়াত মনির পক্ষে আছে: খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ভোট ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। দলটি কোনো মেয়র প্রার্থী দেয়নি। তবে ১৮ দলের প্রধান বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির পক্ষে তাদের প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। জামায়াত থেকে বলা হয়েছে মামলা ও সরকারের হয়রানি এড়িয়ে তারা কৌশলে মনির জন্য কাজ করছেন।
খুলনার নাগরিক বিশ্লেষকদের ধারণা জামায়াতের ভোট ব্যাংক এ নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর। দলটির বর্তমান কারাবন্দি নেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক সময় মেয়র পদে নির্বাচন করে ২৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। দলটির নেতা-কর্মীরা মনে করেন এখন নগরীতে তাদের ভোট কয়েক গুণ বেড়েছে। ১৮ দলে অন্যতম করিক এই দলটি এখন রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা। বিগত দিনে তাদের বিএনপির সঙ্গে মিলেমিশে আন্দোলন করতে দেখা গেছে। এখন মামলা ও রাজনৈতিক হয়রানির ভয়ে তারা কৌশল অবলম্বন করেছেন।
মনিরুজ্জামান মনির নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার সময় জাময়াতের কেউ উপস্থিত না থাকার সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখিন হন মনি। তখন ওই কৌশলের কথা জানানো হয়। একটি মহল থেকে বলা হয় দলটির কারাবন্দি নেতা গোলাম পরওয়ারের সিগনালের অপেক্ষায় নেতা-কর্মীরা। তবে এ ধরণের প্রচার সঠিক নয় বলে দলের দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন।
মনিরুজ্জামান মনি বলেন, স্থানীয়ভাবে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে বোঝা-পড়া ভালো। তারা আনারস প্রতীকের হয়ে কাজ করছে। সব ধরনের সহযোগিতা তাদের কাছ থেকে পাচ্ছি।
খুলনা মহানগর জামায়াতে ইসলামের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম জানান, জামায়াতে ইসলামী ১৮ দলের সঙ্গে আছে। নির্বাচনে জোটের প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে দল। আমাদের প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি বিজয়ী হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।(ডিনিউজ)