Sunday, April 28

উপযোগিতা হারানো ১১ প্রযুক্তি

ঢাকা : আজকের প্রযুক্তি দ্রুতই পুরোনো হয়ে যাচ্ছে আগামীকাল। দ্রুত প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় একে একে বিদায় নিয়েছে অনেক প্রযুক্তিই। ফ্লপির মতো অনেক প্রযুক্তি বিদায় নিলেও এখন হরদম ব্যবহূত হচ্ছে, এমন অনেক প্রযুক্তিই রয়েছে বাতিল হয়ে যাওয়ার তালিকায়।

এরকম অনেক প্রযুক্তির উপযোগিতাই আজ আর খুঁজে পাচ্ছেন না পিসির ব্যবহারকারীরা। কম্পিউটারের যাত্রার পর থেকেই দ্রুত বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি বিশ্বের দৃশ্যপট। একের পর এক নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে প্রযুক্তির পুরোনো হয়ে যেতেও সময় লাগছে না খুব একটা। যেমন ধরা যাক অপটিক্যাল ড্রাইভের কথা। সিডির সময় যেন শেষের দিকে। এরকমই সময়ের অনেক অপরিহার্য এবং জনপ্রিয় প্রযুক্তিরই আজ উপযোগিতা না থাকায় অবস্থান হারিয়ে যাওয়ার পথে। এই রকম কিছু প্রযুক্তির কথা তুলে ধরা হলো এই লেখায়।

প্যারালাল এটিএ (পাটা)
প্যারালাল অ্যাডভান্সড টেকনোলজি অ্যাটাচমেন্ট (পাটা - PATA)কে অনেকে ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস ইলেকট্রনিক্স বা আইডিই (IDE) নামেও চিনে থাকেন। কম্পিউটারের সাথে বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার বা অপটিক্যাল ড্রাইভ যুক্ত করতে আশির দশকের মাঝামাঝি যাত্রা শুরু করে PATA। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেকটাই অপাঙেক্তয় হয়ে পড়েছে এই প্রযুক্তি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠা PATA অবশ্য তার রাজত্ব হারায় সিরিয়াল এটিএ বা (SATA)'র আবির্ভাবে। এখনও অনেক জায়গায় এর ব্যবহার থাকলেও কয়েক বছর পরে হয়তো আর এর নামই শোনা যাবে না।

পিএস/২ কানেক্টর (PS/2)
কিবোর্ড এবং মাউসের মতো বহুল ব্যবহূত দুইটি পেরিফেরালকে পিসির সাথে সংযুক্ত করতে আইবিএম ১৯৮৭ সালে নিয়ে আসে পিএস/২ কানেক্টর। দীর্ঘদিন ধরেই কিবোর্ড-মাউস পিসিতে সংযুক্ত করতে এর বিকল্প ভাবতেও হয়নি মানুষকে। তবে ইউএসবি'র আবির্ভাব দ্রুত পুরোনো করে দিয়েছে একে। এখনকার দিনে বাজারে গিয়ে পিএস/২ পোর্টের মাউস বা কিবোর্ড খুঁজে পেতে কষ্টই করতে হয়। অনেক অফিসেই অবশ্য ইউএসবি পোর্ট নিষ্ক্রিয় রাখার ফলে এখনও এর ব্যবহার রয়েছে। তবে তাও খুব বেশিদিন বোধহয় থাকবে না।

ফায়ারওয়্যার (আইট্রিপলই ১৩৯৪)
দ্রুত গতির সিরিয়াল বাস হিসেবে অ্যাপল তৈরি করে ফায়ারওয়্যার। তবে ইউএসবির পাশাপাশি প্রায় সব ধরনের পিসিতেই দেখা মিলবে আইট্রিপলই ১৩৯৪ স্ট্যান্ডার্ডের ফায়ারওয়্যার। তবে গতির দিক থেকে এটি দ্রুত হলেও শুরু থেকেই সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়। এর চেয়ে ইউএসবিই অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সবার কাছে। কাজেই ফায়ারওয়্যার ইতোমধ্যেই তার উপযোগিতা হারিয়ে বসেছে।

ইউএসবি ১.০ ও ২.০
দ্রুত গতির তথ্য স্থানান্তরে এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি ইউএসবি। ইউএসবি বাজারে আসার পর থেকেই দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। দেখতে দেখতে প্রথম সংস্করণ শেষে দ্বিতীয় সংস্করণের ইউএসবি ২.০ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তবে কয়েক বছর আগে ইউএসবি ৩.০ আগে দৃশ্যপটে। আর তাতে করেই ইউএসবি ২.০ অনেক ধীরগতির হয়ে গেছে অনেকের কাছেই। ফলে ইউএসবি ১.০ আর ২.০ কে এখন পুরোনো বাতিল প্রযুক্তির কাতারে ফেলা যায় সহজেই।

ইসাটা (eSATA)
হার্ডডিস্ক বা ইন্টারনাল স্টোরেজগুলোতে সর্বোচ্চ গতির তথ্য স্থানন্তর নিশ্চিত করতে পারে ইসাটা। তবে এর মূল সমস্যা হলে এতে তথ্য স্থানান্তরে একটি কেবলের পাশাপাশি ডিভাইসকে সচল রাখতে পৃথক পাওয়ার কেবল প্রয়োজন হয়। ফলে এক্সটার্নাল ড্রাইভ ব্যবহারের উপযোগী নয় এটি। তাছাড়া ইউএসবি ৩.০ আর থান্ডারবোল্ট এর চেয়ে অনেক বেশি গতি প্রদানে সক্ষম। ফলে ইসাটার সময় প্রায় ফুরিয়ে এসেছে, এটা বলাই যায়।

ইসাটা/ইউএসবি কম্বো
ইনপুট/আউটপুট প্যানেলে অনেক মাদারবোর্ডেই রয়েছে ইসাটা এবং ইউএসবি ২.০-এর কম্বো পোর্ট। এই পোর্টে ইসাটা সমর্থিত ডিভাইসের পাশাপাশি ইউএসবি ডিভাইস ব্যবহারের সুবিধাও ছিল। তবে ইউএসবি ৩.০ বাজারে আসার পর থেকেই এসব কম্বো পোর্টের কদর কমেছে। আর থান্ডারবোল্টের আগামবার্তা এর জন্য অশনিসংকেত হিসেবেই গণ্য হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে বছর দুয়েকের মধ্যে এই কম্বো পোর্ট হারিয়ে যাবে পুরোপুরি।

মেমোরি কার্ড রিডার
ক্যামেরা, মোবাইল বা অন্যান্য বহনযোগ্য ডিভাইসে এখনও মেমোরি কার্ডের বহুল ব্যবহার রয়েছে। আর সেই ব্যবহারও এত সহজে শেষ হবে না বলেই জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তবে মেমোরি কার্ডে রিডারের দিন বোধহয় কেবল দিয়েই তথ্য স্থানান্তর হয়ে থাকে। ডিভাইস থেকে কার্ড খুলে কম মানুষই ব্যবহার করছেন। তা ছাড়া এখন ওয়াইফাই কার্ড চলে আসায় শেয়ারিং হয়েছে আরও সহজে। ফলে আমাদের দেশে না হলেও খুব দ্রুতই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে অপ্রচলিত হয়ে যাবে মেমোরি কার্ড রিডার।

সিডি/ডিভিডি ড্রাইভ
অপটিক্যাল ড্রাইভ হিসেবে এই তালিকায় সিডি/ডিভিডিকে দেখে অনেকেই ভুরু কুঁচকে ফেলতে পারেন। তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইন্টারনেটের এই যুগে এসে সিডি/ডিভিডির হ্যাপা আর কেউ সামলাতে চায় না। মাল্টিমিডিয়া ফাইলগুলো অনলাইনে এখন লেনদেন হচ্ছে বেশি। আর যারা অপটিক্যাল মিডিয়াকে স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করতে চান, তারাও ব্লুরে ডিস্কের দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। ফলে সিডি ডিভিডি, আর খুব বেশিদিন রাজত্ব করতে পারবে না প্রযুক্তি বিশ্বে, তা বলাই বাহুল্য।

ভিজিএ
ভিডিও গ্রাফিক্স অ্যারে বা ভিজিএ দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহূত হয়ে আসছে পিসিতে। তবে এর দিন বোধহয় শেষ হয়ে আসছে। নতুন নতুন ধরনের ডিসপ্লে প্রযুক্তি বাজারে আসতে থাকায় ভিডিজএ ক্রমেই মনোযোগ হারাচ্ছে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের। সেই সাথে কম্পিউটার নির্মাতাদেরও অনেকেই ভিজিএ পোর্ট ব্যবহার করা বাদ দিতে শুরু করেছেন। ফলে ভিজিএ'র আর বেশিদিন আয়ু নেই।

অ্যানালগ সারাউন্ড সাউন্ড
সাউন্ড সিস্টেমকে পিসির সাথে সংযুক্ত করতে সারাউন্ড সাউন্ডের ব্যবহার অত্যন্ত পুরোনো। এর শুরুটা অ্যানালগ সারাউন্ড সাউন্ড দিয়েই। এই সিস্টেমে সাইড স্পিকার, রেয়ার স্পিকার, সাবউফার, মাইক্রোফোন এবং প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা আলাদা পোর্ট থাকত। তবে এরকম সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেমের আর ব্যবহার নেই বললেই চলে। এখন ডিজিটাল সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেমের যুগ। স্পিকার সিস্টেমের জন্য ত াই ডিজিটাল স্টিরিও ২.০ আউটপুটই চাহিদা আবার। ইতোমধ্যেই এই অ্যানালগ সিস্টেমের ব্যবহার কমে এসেছে। আর কিছুদিন পর হয়তো আর দেখাই যাবে না এই সিস্টেম।

মাউস
অপাঙেক্তও প্রযুক্তির তালিকায় মাউসকে দেখেও অনেকের ভুরু আকাশে উঠে যেতে পারে। তবে সত্যিই কি অনেক বেশি অবাক হওয়ার প্রয়োজন আছে? যে হারে ট্যাবলেট পিসি আর স্মার্টফোন পিসি'র বাজার দখল করে নিচ্ছে, তাতে করে মাউসের প্রয়োজনীয়তা তো দিন দিন কমছেই। শুধু তাই নয়, ল্যাপটপ টাচপ্যাড আর টাচ ডিসপ্লে কিংবা টাচ অল-ইন-ওয়ান ডিভাইসে মাউসের তো সত্যিই খুব বেশি প্রয়োজন নেই। অবশ্য গেমার আর প্রফেশনাল কাজে নিয়োজিতদের কথা আলাদা। তাদের জন্য মাউসের বিকল্প খুঁজে পাওয়া একটু মুশকিল বটে। তবে সাধারণ পিসি ব্যবহারকারীর জন্য এর প্রয়োজন ক্রমেই কমে আসছে। এই তালিকার সবগুলো প্রযুক্তির মধ্যে হয়তো এর আয়ুই সবচেয়ে বেশি।

এরকম হয়ত আরও অনেক প্রযুক্তিই খুঁজে পাওয়া যাবে, যেগুলো খুব বেশিদিন আর ধরে রাখতে পারবে না নিজেদের। তবে এটি আসলে সময়েরই ধারাবাহিকতা। এসবের স্থান তো আর ফাঁকা থাকছে না!

সৌজন্যে দৈনিক ইত্তেফাক


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়